ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অপসংবাদিকতা রোধে ও অপসংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান বিজয়নগরে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন অপসাংবাদিকতা রোধে সকলকে সোচ্চার থাকার আহবান জানিয়েছে বিটিজেএ এআরডি’র উদ্যেগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন জামির ২য় মৃত্যু বার্ষিকী ডায়াবেটিস সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যম কর্মীরার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ঢেউ সংগঠনের আয়োজনে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা

আখাউড়ায় অবৈধ ইটভাটা দৌলত ব্রিকস গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১০৮ বার পড়া হয়েছে

আখাউড়ায় অবৈধ ইটভাটা দৌলত ব্রিকস গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অবৈধ ইটভাটা গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। করছেন না আইনের তোয়াক্কাও। আজমপুর ফসলি জমি,২ শতাধিক বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। এ ভাটায় আবার কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে না, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর এলাকায় অবস্থানরত মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং (DEC) নামক ইটবাটা দীর্ঘ দিন ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ হওয়া সত্বেও কার্যক্রম চালাছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন কর্যালয়ে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং দুই হাজার একুশ সালে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় হতে অবৈধ ইটবাটা হিসেবে ছাড়পত্র বাতিল করা হয়। কিন্তু ইটভাটার মালিকের ভাষ্যমতে পরিবেশ অধিদপ্তরে দুই তিন লক্ষধিক টাকা বিনিময়ে সহকারী পরিচালক সীমা ছাড়পত্র বহাল করে দেয় এভাবে দুই হাজার তেইশ সাল থেকে চলমান আছে এ ইটবাটার কার্যক্রম।

এ বিষয়ে মালিক পক্ষ বলেন,বছরে লক্ষাধিক টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কে মেনেজ করে ছাড়পত্র হালনাগাদ ইটভাটা চালাচ্ছি, প্রতি বছর এভাবে চলছি বাটা।

মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং(DEC) আশেপাশে অবস্থানরত রামধন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৬০০ মিটার, আজিমপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৬৫০ মিটার, আজিমপুর রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা হতে ৭২০ মিটার, এক কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে দুই শতাধিক বাড়িঘর, তিন শো মিটারের মধ্যে তিন টি মসজিদ ও ভাটার চারপাশে তিন ফসলি আবাদি জমির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশে আবার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।

রামধন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। প্রচুর ধুলোবালি থেকে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এছাড়া ইট তৈরির মেশিনের অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে মাথা ব্যথায় ক্লাস ঠিকভাবে করা যায় না।’আজিমপুর রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী বলে, ‘ইটভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের ভয় লাগে। এছাড়া রাস্তার ধুলোবালি আমাদের গায়ে লেগে স্কুল ড্রেস নোংরা হয়ে যায়। ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’

স্থানীয়রা জানান, বেশিরভাগ ইটভাটার নেই প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বছরের পর বছর অবাধে চলাচ্ছে মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং(DEC) তাদের অবৈধ ইটভাটা।) এসব ভাটাতেও নির্বিঘ্নে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। যদি কোন ইটভাটা থেকে পরিবেশ দূষিত হয় বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ যেসকল বৈধ কাগজপত্র থাকার কথা তা না থাকে; তাহলে আমরা সেসকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেব। আর কোন অবস্থাতেই আমরা ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোকে সমর্থন করি না। কোন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একশ সাতাতুার টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ষাষ্টির টির এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একশ সতেরটির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আখাউড়ায় অবৈধ ইটভাটা দৌলত ব্রিকস গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি

আপডেট সময় : ১০:০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

অবৈধ ইটভাটা গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। করছেন না আইনের তোয়াক্কাও। আজমপুর ফসলি জমি,২ শতাধিক বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। এ ভাটায় আবার কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে না, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর এলাকায় অবস্থানরত মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং (DEC) নামক ইটবাটা দীর্ঘ দিন ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ হওয়া সত্বেও কার্যক্রম চালাছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন কর্যালয়ে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং দুই হাজার একুশ সালে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় হতে অবৈধ ইটবাটা হিসেবে ছাড়পত্র বাতিল করা হয়। কিন্তু ইটভাটার মালিকের ভাষ্যমতে পরিবেশ অধিদপ্তরে দুই তিন লক্ষধিক টাকা বিনিময়ে সহকারী পরিচালক সীমা ছাড়পত্র বহাল করে দেয় এভাবে দুই হাজার তেইশ সাল থেকে চলমান আছে এ ইটবাটার কার্যক্রম।

এ বিষয়ে মালিক পক্ষ বলেন,বছরে লক্ষাধিক টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কে মেনেজ করে ছাড়পত্র হালনাগাদ ইটভাটা চালাচ্ছি, প্রতি বছর এভাবে চলছি বাটা।

মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং(DEC) আশেপাশে অবস্থানরত রামধন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৬০০ মিটার, আজিমপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৬৫০ মিটার, আজিমপুর রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা হতে ৭২০ মিটার, এক কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে দুই শতাধিক বাড়িঘর, তিন শো মিটারের মধ্যে তিন টি মসজিদ ও ভাটার চারপাশে তিন ফসলি আবাদি জমির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশে আবার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।

রামধন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। প্রচুর ধুলোবালি থেকে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এছাড়া ইট তৈরির মেশিনের অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে মাথা ব্যথায় ক্লাস ঠিকভাবে করা যায় না।’আজিমপুর রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী বলে, ‘ইটভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের ভয় লাগে। এছাড়া রাস্তার ধুলোবালি আমাদের গায়ে লেগে স্কুল ড্রেস নোংরা হয়ে যায়। ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’

স্থানীয়রা জানান, বেশিরভাগ ইটভাটার নেই প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বছরের পর বছর অবাধে চলাচ্ছে মেসার্স দৌলত ব্রিকস কোং(DEC) তাদের অবৈধ ইটভাটা।) এসব ভাটাতেও নির্বিঘ্নে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। যদি কোন ইটভাটা থেকে পরিবেশ দূষিত হয় বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ যেসকল বৈধ কাগজপত্র থাকার কথা তা না থাকে; তাহলে আমরা সেসকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেব। আর কোন অবস্থাতেই আমরা ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোকে সমর্থন করি না। কোন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একশ সাতাতুার টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ষাষ্টির টির এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একশ সতেরটির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।