সৌদী প্রবাসী স্বামী জহিরূল ইসলামকে (৪২) অচেতন করে মুখে স্কচটেপ মেরে ওড়নায় পা বেঁধে চাপাতি ছুঁড়া দিয়ে কূপিয়ে পালিয়েছে স্ত্রী আছমা বেগম (৩২)। গত ১৫ ফেব্রূয়ারি রাত ৪টার দিকে সরাইল সদর ইউনিয়নের উত্তর আরিফাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ ফেব্রূয়ারি স্ত্রীর বিরূদ্ধে হত্যার চেষ্টা ও নগদ টাকা ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ ৯ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন স্বামী। ঘটনার পর থেকে ঘর ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আছমার পরকিয়া প্রেমিক মনির। আছমার ৭ বছর বয়সের কন্যা শিশুটিকে পুলিশ আপাতত: মামার বাড়িতে দিয়েছেন। মামলা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আছমা আখাউড়া উপজেলার আজমপুর গ্রামের হেবজু মিয়ার মেয়ে। সরাইলের শফিকুল ইসলামের ছেলে জহিরূলের সাথে আছমার প্রথম পরিচয় ফেসবুকে। এরপর প্রেম। গত ৩ বছর আগে তারা নিজেরাই বিয়ে করেন। স্বামী স্ত্রী দু’জনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে। আছমার আগের সংসারের একটি কন্যা শিশু (০৭) রয়েছে। বিয়ের ৩-৪ মাস পরই জহির চলে যান প্রবাসে। পাল্টে যেতে থাকে আছমার আচার আচরণ ও চলাফেরা। কন্যা শিশুটিকে বাড়ির পাশের একটি মহিলা মাদরাসায় (আবাসিক) ভর্তি আরো ফ্রি হন আছমা। জহির নিজের আয় রোজগার সব দিতে থাকেন স্ত্রীকে। স্ত্রী আছমা ভাসতে থাকেন রঙ্গিন জীবনে। এক সময় আছমা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ভাড়ায় চলে যান। সেখানে শুরূ হয় তার বেপরোয়া জীবন-যাপন। ৪ মাস আগে সৌদী থেকে এসেছে জহির। তার ভালবাসার আছমা আগের জায়গায় নেই। জহিরকে বাড়িতে রেখেই পাশের গ্রামের মনিরের বাড়িতে চলে যায় আছমা। অবস্থান করে দীর্ঘ সময়। স্বামী জহির যেন তার পথের কাটা। কথায় কথায় দূর্ব্যবহার। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ। তুচ্ছ বিষয়ে নিয়মিত ঝগড়া কলহ।
স্বামীকে খুন করার ভয়ভীতি প্রদর্শন। জহির আছমাকে কিছু বললেই প্রতিবাদ করে মনির। তখনই মনিরের সাথে স্ত্রীর পরকিয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় জহির। জহির স্ত্রীর পরকিয়া নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আছমা ও মনির। গত ১৪ ফেব্রূয়ারি আছমার মনিরের বাড়িতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও মনোমালণ্য হয়। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে তারা। ১৫ ফেব্রূয়ারি ভোর ৪টার দিকে বুকে চাপ অনুভবে ঘুম ভাঙ্গে জহিরের। জেগেই দেখে তার মুখে স্কচটেপ লাগানো, পা গুলো ওড়না দিয়ে বাঁধা। ছুড়া হাতে স্ত্রী আছমা তার বুকের উপর বসে গলায় পোছ মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন জহির আছমার দু’হাত চেপে ধরে বাঁধা দেয়। এ সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে চলে ধস্তাধস্তি। আছমা ছুড়া ও চাপাতি দিয়ে স্বামী জহিরের মাথায় ও নাকে এলাপাতাড়ি আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে যায় জহির। দ্রূত পালিয়ে যায় আছমা। জহিরকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। স্বামী জহিরূল ইসলাম বলেন, স্ত্রীকে বিশ্বাস করে প্রবাস জীবনের ৩ বছরের কামাই দিলাম। সে পরকিয়া করে সব শেষ করে দিয়েছে। আমাকে ওই রাতে খাবারের সাথে কিছু খাইয়েছে। প্রাণনাশের উদ্যেশ্যে আমাকে ছুড়া ও চাপাতি দিয়ে কূপিয়েছে। পরে নগদ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিষপত্র নিয়ে পালিয়েছে। আমি দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। এ ঘটনায় জহিরূল ইসলাম বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি মামলা করেছেন। আছমা ও মনিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শেহাবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আছমা মুঠোফোনটি বন্ধ করে রেখেছে। ঘটনার পর মনিরকে বাড়িতে পায়নি। তার স্ত্রী ছিল। এর পরের দিন স্ত্রীসহ গা ঢাকা দিয়েছে। আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মাহবুব খান বাবুল