Dhaka ০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
News Title :
সারাদেশে হিট এলার্ট; চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩ সাহিত্য একাডেমির বৈশাখী উৎসবের চতুর্থ দিনে মুজিবনগর দিবস পালন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এক্স স্কাউট রি-ইউনিয়ন’ আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ সরাইলে চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা সরাইলে ২৩ রোগী পেল ১৮৪০০০ টাকা বাবার সেই চিঠি শুধুই মনে —–আল আমীন শাহীন জমে ওঠেছে সরাইলের ঈদ বাজার‘আলিয়া’ নিয়ে টানাটানি সরাইলে ১৪ কেজি গাঁজাসহ ২ কারবারী গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়ি়য়া জেলা কাজী সমিতির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

পুলিশকে ঘুষ দিয়েও আমার বাবা কোন প্রতিকার পায়নি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • ২৪৯ Time View

কেউ বলছে পুলিশের সাজানো নাটক, কেউ বলছে পৌর কর্তৃপক্ষের সাজানো নাটক। পুলিশকে ঘুষ দিয়েও আমার বাবা কোন প্রতিকার পায়নি এই শোক সইতে না পেরে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ১৪৫ ধারা জারি থাকার পরেও তারা কিভাবে প্রভাব খাটিয়ে ভবন নির্মাণ করছে! দেশে আইন বিচার নেই! তাদের বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। এমন হৃদয় বিদারক কথাগুলো বলছিলেন হাজী মো. ফরিদ মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া। পুলিশ এবং পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে একটি পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে, একজন মানুষের স্বপ্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছে, একজন সন্তান হারিয়েছে তার বাবাকে, একজন স্ত্রী হারিয়েছে তার প্রিয়তমকে। বিরোধপূর্ণ ভবন কিভাবে নির্মাণের নকশা অনুমোদন করলো পৌর কর্তৃপক্ষ এ নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের দেয়া ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শহরের দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। গত ২০২১ সনের জুন মাসের ৭ তারিখে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলা বাসিন্দা হাজি মো. ফরিদ মিয়া নিম্ন তফসিল ভূমি ২২ এপ্রিল ২০০৮ সনে সাব কবলা দলিল মালিক হন। মালিকাধীন পৈরতলা মৌজার জে. এল নং ৬৩.৬৮১ বি.এস. খতিয়ানে ৪১৬ দাগের ২ শতক জায়গা ৪ তলা ভবন নির্মাণ করিয়া শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। এমতাবস্থায় বিল্ডিংয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের জায়গার মালিক আব্দু রহিম (ইছহাক) পিতা মৃত মনোয়ার আলি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা চলমান আছে (পি-৫১২/২১) এদিকে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রতিপক্ষ গত ২০২১ সনের ৭ জুন তারিখে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ করতে গেলে হাজী মো. ফরিদ মিয়া বাঁধা প্রদান করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করলে তিনি গত ২০২১ সনের জুন মাসের ১০ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা’কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা এবং রিপোর্ট প্রদান করার জন্য গত ২০২১ সনের আগস্ট ৮ তারিখ দিন ধার্য করেন। ভবন নির্মাণে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশ অস্থায়ী ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী হাজী মো. ফরিদ মিয়া গত ২০২১ সনের ৫ জুলাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার ভবন করার সময় আমি নিয়মানুযায়ী নিজের ক্রয়কৃত জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি। আমার পাশে দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের দুই অংশেই আমার প্রতিবেশি ভবন নির্মাণ করেছে যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনী। তারাতো জায়গা ছাড়েইনি উল্টো আমি যে জায়গাটি ছেড়ে দিয়েছি সে জায়গাটি পর্যন্ত দখল করে আমার ভবন ঘেঁষে তারা ভবন নির্মাণ করছে। আমি তাদেরকে বাঁধা দিতে আসলে তারা আমাকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। উপায়ান্তর না পেয়ে আদালতে মামলা করেছিলাম। আমার করা মামলায় আদালত ১৪৫ ধারা জারি করে তাদের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও তারা প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যায়। আমি বিষয়টি থানায় অবগত করলে সেখানে দায়িত্ব পাওয়া এসআই হুমায়ুন কবির বিষয়টি সুরাহা করে দেয়ার কথা বলে তার ব্যক্তিগত খরচ বাবদ আমার কাছ থেকে ১৫০০০ (পনেরো হাজার) টাকা চেয়ে নেয়। পুলিশকে টাকা দেয়ার পরও আমি কোন প্রতিকার পাইনি। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সদর থানার পুলিশকে অবহিত করলেও রহস্যজনক কারণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে পুলিশ কোন উদ্যোগ নেয়নি। আমি এখন খুব হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছি। এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও কিভাবে একজনের ভবনের সাথে ঘেঁষে ভবন নির্মাণ করছে এই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসী সবার মেনে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার কয়েকজন জানান আবদু রহিম (ইছহাক) পিতা-মৃত মনোয়ার আলী কিছু মাদক ব্যবসায়ী দুষ্কৃতি লোকের সহযোগিতায় এহেন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন বলেন, বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। আমরা একাধিকবার গ্রামের সরদারদের নিয়ে শালিশের আয়োজন করেও কোন সুরাহা দিতে পারিনি। প্রশাসনের পাশাপাশি লাঠির জোরও প্রয়োজন যা ভুক্তভোগীর নেই। এই শোক সইতে না পেরে হাজী মো. ফরিদ মিয়া সাহেবের মৃত্যু হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজ করলেও এ ব্যাপারে পৌরসভা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিবাদী আবদু রহিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ১নং ফাঁড়ির এসআই বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে সংবাদটি চাপানোর চেষ্টা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে ফাঁড়ি থানার দারোগা হুমায়ুনকে বিষয়টি দেখার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জায়গা-সম্পত্তি বিষয় এ ব্যাপারে আমি তো কিছু বলতে পারছিনা। দারোগা হুমায়ুনের কাছে সব কাগজপত্র রয়েছে। মহামান্য আদালত এখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কোন ভবনের কাজ বন্ধ করার নিদের্শনা দেয়নি। দায়িত্বরত দারোগা হুমায়ুন কবির বাদী থেকে অনৈতিকভাবে পনেরো হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন সঠিকভাবে সুরাহা করে দেয়ার কথা বলে যা তিনি সঠিক সুরাহা দেননি এবং বাদী সঠিক সুরাহা না পাওয়ার কারণে শোকে মারা গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘুষ নেয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি এবং এমন বেদনায় মৃত্যু হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে আমাদের কোন ব্যর্থতা নেই। আপনাদের ব্যর্থতা না থাকলে অনৈতিকভাবে ভবনটি নির্মাণ হয় কিভাবে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভবনটির নকশা পাশ হয়েছে আমি আসার পূর্বেই। আমরা অভিযোগকারীর লিখিত অভিযোগও পেয়েছি, আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে একাধিকবার বারণও করেছি, কিন্তু তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করতে সক্ষম হয় যদিও এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা আবেদনকৃত দরখাস্ত পেয়েছি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বিরোধপূর্ণ ভূমিতে কেউ নির্মাণ কাজ করতে পারেনা। পৌরসভার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথাগুলো গত ৫ জুলাই ২০২১ বলেছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাসের মধ্যে আপনি একবারও সেখানে প্রবেশ করেননি এমন কি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার মনে নেই এবং আপনিও আমাকে মনে করিয়ে দেননি। আপনাকে মনে করিয়ে দেয়া কি আমার কাজ বা দায়িত্ব এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদদুস বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। শহরে বসবাসরত ভবন নির্মাণ করতে হলে পিছনে এক মিটার এবং দুই পাশে পয়েন্ট ৮ মিটার ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। তিনি তৎখনাৎ সার্ভেয়ারকে ডেকে বিষয়টি অবগত হয়ে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এ ভবনের নকশা কিভাবে পৌরসভা থেকে অনুমোদন হয় তা আমি খতিয়ে দেখছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব এবং যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপ-পরিচালক মো. নূরুল আমীন বলেন, ৬ তলা অর্থাৎ ৭৫ ফুটের উর্ধ্বের উচ্চতার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগে। জেলা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটি কর্তৃক প্লান অনুমোদিত থাকলেই কেবল পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

সারাদেশে হিট এলার্ট; চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩

পুলিশকে ঘুষ দিয়েও আমার বাবা কোন প্রতিকার পায়নি

Update Time : ০৮:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

কেউ বলছে পুলিশের সাজানো নাটক, কেউ বলছে পৌর কর্তৃপক্ষের সাজানো নাটক। পুলিশকে ঘুষ দিয়েও আমার বাবা কোন প্রতিকার পায়নি এই শোক সইতে না পেরে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ১৪৫ ধারা জারি থাকার পরেও তারা কিভাবে প্রভাব খাটিয়ে ভবন নির্মাণ করছে! দেশে আইন বিচার নেই! তাদের বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। এমন হৃদয় বিদারক কথাগুলো বলছিলেন হাজী মো. ফরিদ মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া। পুলিশ এবং পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে একটি পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে, একজন মানুষের স্বপ্ন বিচ্ছিন্ন হয়েছে, একজন সন্তান হারিয়েছে তার বাবাকে, একজন স্ত্রী হারিয়েছে তার প্রিয়তমকে। বিরোধপূর্ণ ভবন কিভাবে নির্মাণের নকশা অনুমোদন করলো পৌর কর্তৃপক্ষ এ নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের দেয়া ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শহরের দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। গত ২০২১ সনের জুন মাসের ৭ তারিখে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলা বাসিন্দা হাজি মো. ফরিদ মিয়া নিম্ন তফসিল ভূমি ২২ এপ্রিল ২০০৮ সনে সাব কবলা দলিল মালিক হন। মালিকাধীন পৈরতলা মৌজার জে. এল নং ৬৩.৬৮১ বি.এস. খতিয়ানে ৪১৬ দাগের ২ শতক জায়গা ৪ তলা ভবন নির্মাণ করিয়া শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। এমতাবস্থায় বিল্ডিংয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের জায়গার মালিক আব্দু রহিম (ইছহাক) পিতা মৃত মনোয়ার আলি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা চলমান আছে (পি-৫১২/২১) এদিকে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রতিপক্ষ গত ২০২১ সনের ৭ জুন তারিখে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ করতে গেলে হাজী মো. ফরিদ মিয়া বাঁধা প্রদান করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করলে তিনি গত ২০২১ সনের জুন মাসের ১০ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা’কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা এবং রিপোর্ট প্রদান করার জন্য গত ২০২১ সনের আগস্ট ৮ তারিখ দিন ধার্য করেন। ভবন নির্মাণে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশ অস্থায়ী ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী হাজী মো. ফরিদ মিয়া গত ২০২১ সনের ৫ জুলাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার ভবন করার সময় আমি নিয়মানুযায়ী নিজের ক্রয়কৃত জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি। আমার পাশে দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের দুই অংশেই আমার প্রতিবেশি ভবন নির্মাণ করেছে যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনী। তারাতো জায়গা ছাড়েইনি উল্টো আমি যে জায়গাটি ছেড়ে দিয়েছি সে জায়গাটি পর্যন্ত দখল করে আমার ভবন ঘেঁষে তারা ভবন নির্মাণ করছে। আমি তাদেরকে বাঁধা দিতে আসলে তারা আমাকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। উপায়ান্তর না পেয়ে আদালতে মামলা করেছিলাম। আমার করা মামলায় আদালত ১৪৫ ধারা জারি করে তাদের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও তারা প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যায়। আমি বিষয়টি থানায় অবগত করলে সেখানে দায়িত্ব পাওয়া এসআই হুমায়ুন কবির বিষয়টি সুরাহা করে দেয়ার কথা বলে তার ব্যক্তিগত খরচ বাবদ আমার কাছ থেকে ১৫০০০ (পনেরো হাজার) টাকা চেয়ে নেয়। পুলিশকে টাকা দেয়ার পরও আমি কোন প্রতিকার পাইনি। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সদর থানার পুলিশকে অবহিত করলেও রহস্যজনক কারণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে পুলিশ কোন উদ্যোগ নেয়নি। আমি এখন খুব হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছি। এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও কিভাবে একজনের ভবনের সাথে ঘেঁষে ভবন নির্মাণ করছে এই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসী সবার মেনে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার কয়েকজন জানান আবদু রহিম (ইছহাক) পিতা-মৃত মনোয়ার আলী কিছু মাদক ব্যবসায়ী দুষ্কৃতি লোকের সহযোগিতায় এহেন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন বলেন, বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। আমরা একাধিকবার গ্রামের সরদারদের নিয়ে শালিশের আয়োজন করেও কোন সুরাহা দিতে পারিনি। প্রশাসনের পাশাপাশি লাঠির জোরও প্রয়োজন যা ভুক্তভোগীর নেই। এই শোক সইতে না পেরে হাজী মো. ফরিদ মিয়া সাহেবের মৃত্যু হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজ করলেও এ ব্যাপারে পৌরসভা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিবাদী আবদু রহিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ১নং ফাঁড়ির এসআই বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে সংবাদটি চাপানোর চেষ্টা করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে ফাঁড়ি থানার দারোগা হুমায়ুনকে বিষয়টি দেখার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জায়গা-সম্পত্তি বিষয় এ ব্যাপারে আমি তো কিছু বলতে পারছিনা। দারোগা হুমায়ুনের কাছে সব কাগজপত্র রয়েছে। মহামান্য আদালত এখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কোন ভবনের কাজ বন্ধ করার নিদের্শনা দেয়নি। দায়িত্বরত দারোগা হুমায়ুন কবির বাদী থেকে অনৈতিকভাবে পনেরো হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন সঠিকভাবে সুরাহা করে দেয়ার কথা বলে যা তিনি সঠিক সুরাহা দেননি এবং বাদী সঠিক সুরাহা না পাওয়ার কারণে শোকে মারা গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘুষ নেয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি এবং এমন বেদনায় মৃত্যু হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে আমাদের কোন ব্যর্থতা নেই। আপনাদের ব্যর্থতা না থাকলে অনৈতিকভাবে ভবনটি নির্মাণ হয় কিভাবে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভবনটির নকশা পাশ হয়েছে আমি আসার পূর্বেই। আমরা অভিযোগকারীর লিখিত অভিযোগও পেয়েছি, আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে একাধিকবার বারণও করেছি, কিন্তু তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করতে সক্ষম হয় যদিও এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা আবেদনকৃত দরখাস্ত পেয়েছি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বিরোধপূর্ণ ভূমিতে কেউ নির্মাণ কাজ করতে পারেনা। পৌরসভার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথাগুলো গত ৫ জুলাই ২০২১ বলেছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাসের মধ্যে আপনি একবারও সেখানে প্রবেশ করেননি এমন কি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার মনে নেই এবং আপনিও আমাকে মনে করিয়ে দেননি। আপনাকে মনে করিয়ে দেয়া কি আমার কাজ বা দায়িত্ব এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদদুস বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। শহরে বসবাসরত ভবন নির্মাণ করতে হলে পিছনে এক মিটার এবং দুই পাশে পয়েন্ট ৮ মিটার ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। তিনি তৎখনাৎ সার্ভেয়ারকে ডেকে বিষয়টি অবগত হয়ে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এ ভবনের নকশা কিভাবে পৌরসভা থেকে অনুমোদন হয় তা আমি খতিয়ে দেখছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব এবং যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিব। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপ-পরিচালক মো. নূরুল আমীন বলেন, ৬ তলা অর্থাৎ ৭৫ ফুটের উর্ধ্বের উচ্চতার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগে। জেলা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটি কর্তৃক প্লান অনুমোদিত থাকলেই কেবল পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া যায়।