সরাইল বিএডিসি’র গোডাউনে সারের বদলে ফার্ণিসার্স আর ভাঙ্গারির দোকান!
- আপডেট সময় : ০৯:১০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৮০ বার পড়া হয়েছে
মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিএডিসি গোডাউনে এখন আর সার নেই। নেই বীজও। সেখানে যেতে পারছেন না কৃষকরা। ভেতরে পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন সাদ্দাম মিয়া (৩০) নামের এক যুবক। খালি জায়গায় ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন ভাড়া। মূল গুদামের ভেতর তিনি মজুদ রেখেছেন ফার্ণিসার্স। পাশের খালি জায়গায় তার স্বজন ও ভাড়াটিয়া দিয়েছেন বিশাল ভাঙ্গারির দোকান। প্রতি মাসে ভাড়া আদায় করছেন ৯ হাজার টাকা। কর্তৃপক্ষ থেকে মাসিক ভাড়ায় পুরো গোডাউনটি লীজ আনার কথা বললেও এক মাস ঘুরিয়েও কোন কাগজ দেখাতে পারেননি সাদ্দাম। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি গোডাউন সংশ্লিষ্ট অফিসের অসৎ কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে দখলে নিয়েছেন সাদ্দাম। সরকারি গোডাউন লীজ বা ভাড়া দেওয়ার বৈধতার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্য। এই অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট দফতরের স্থানীয়রাও জড়িত। সরজমিন অনুসন্ধান, সংশ্লিষ্ট দফতর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছর দিন আগে সরাইল বিএডিসি (সার) গোডাউনের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর কিছু দিন পরই গোডাউনের দখল নিয়েছেন সাদ্দাম নামের এক যুবক। সাদ্দাম পরিবার নিয়ে ভেতরের কোয়াটারে বসবাস করছেন। খালি জায়গায় একটি চারচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে জনৈক ব্যবসায়ির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। গোডাউনের ভেতরে দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ভাড়া দেন এক স্বজনের কাছে। ওই ভাড়াটিয়া সেখানে বিশাল ভাঙ্গারির ব্যবসা খুলে বসেছেন। ভাঙ্গারির দোকানের মালামাল দিনে রাতে ট্রাক্টর ও পিকআপ ভ্যানে ভেতরে প্রবেশ করছে। আবার বাহিরেও যাচ্ছে। মূল ভবনের ভেতরে বিভিন্ন ধরণের ফার্ণিসার্স মজুদ করে রেখেছেন সাদ্দাম নিজে। সাদ্দাম প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করছেন। সরকারী গোডাউনের দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথম দিকে সাদ্দাম বলেন, আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লীজ নিয়েছি। প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছি। কাগজ আছে। কাগজ দেখতে চাইলে আজকে কালকে বলে সাদ্দাম পাড় করেছেন দেড় মাস। কাগজ আর দেখাতে পারছেন না তিনি। গত এক সপ্তাহ ধরে আর ফোনই রিসিভ করছেন না সাদ্দাম। গোডাউন সংলগ্ন একাধিক ব্যবসায়ি বলেন, সরকার যদি এই গোডাউন লীজই দিবেন। তবে একটা নিয়মনীতি তো অনুসরণ করার কথা। খোলা দরপত্র আহবান করবেন। আগ্রহীরা অংশ গ্রহন করবেন। সর্বোচ্চ দরদাতা পাবেন লীজ। সরকার পাবেন রাজস্ব। তা না করে গোপনে কেন? আসলে লীজ বা ভাড়া কোনটাই দেয়নি। গোপনে অনিয়মের মাধ্যমে কতিপয় লোক গোডাউনটি দখলে নিয়ে ধান্ধা করছেন। স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তি মো. আকবর ঠাকুর (৭১) ও আনিছুল ইসলাম ঠাকুর (৬৭) বলেন, এটা মূলত সারের গোডাউন। সরকারী গোডাউন ব্যক্তির কাছে লীজ দেওয়া যায় এমন বিধান আমাদের জানা নেই। সরাইল উপজেলা বিএডিসি’র উপসহকারী প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। মাসিক ভাড়া কে নেন? কে লীজ দিয়েছেন? কে নিয়েছেন? তা জানা নেই। বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) ঢাকা অফিসের সাবেক সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাহমুদ তারেক আনোয়ার মুঠোফোনে বলেন, বর্তমানে বিএডিসি’র গোডাউন লীজ দেয়ার কথা না। কারণ এক সময় এই গুলো লীজ দেয়া হতো। এখন সেই গুলো লীজ থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।