সরাইলে চেয়ারম্যানের সীল স্বাক্ষর জাল আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা
- আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অগাস্ট ২০২২ ৯২৯ বার পড়া হয়েছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ৯ নং শাহজাদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাম্মৎ আছমা আক্তারের অফিসিয়াল প্যাড সীল ও স্বাক্ষর জাল করেছে কে বা কারা। মলাইশ গ্রামের জ্যোস্না রানী দাস ও অঞ্জন দাসের ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনে এ জালিয়াতি করা হয়েছে। ওই দুটি আবেদনে নিজের এনআইডি নম্বর, সীল ও স্বাক্ষর দিয়ে সনাক্ত করেছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিবিলাস মজুমদার। বিষয়টি মামলায় ফাঁসানো বা পদ থেকে সরানোর গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা বলে মনে করছেন চেয়ারম্যান। তাই জাল স্বাক্ষর ও তৈরী করা সীল ব্যবহারের বিষয়ে আইনি পক্রিয়ায় যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিস ও সংশ্লিষ্ট ইউপি অফিস সূত্র জানায়, মলাইশ ভদ্রপাড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরেশ দাসের স্ত্রী জ্যোস্না রানী দাস (৩৬)। এনআইডি নং-১২১১৩৩২৪২৬৪০১। জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা পশ্চিমপাড়ার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন জ্যোস্না রানী। আর ৬ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা যতীন দাসের ছেলে অঞ্জন দাস (৩১)। এনআইডি নং-৩৭০৪০১১২১৯২। একই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় অন্তর্র্ভূক্ত হয়েছেন। জ্যোস্না ও অঞ্জন দু’জনই ৬ নং ওয়ার্ডে ভোটার হিসেবে স্থানান্তরিত হতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন গত ১৯ জুলাই। তাদেরকে সনাক্ত করে সীল স্বাক্ষর দিয়েছেন ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিবিলাস মজুমদার। জ্যোস্নার আবেদন নং-২৫৯৩ আর অঞ্জনের ২৫৯২। নম্বর পড়ার পর নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রত্যয়নপত্রের প্যাড, চেয়ারম্যানের সীল ও স্বাক্ষর সন্দেহ হওয়ায় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। গত বুধবার বিকেলে নির্বাচন অফিসে আসেন চেয়ারম্যান। ভূয়া প্যাড সীল ও স্বাক্ষর দেখে বিস্মিত হন। চেয়ারম্যান বলেন, এই স্বাক্ষর আমার না। প্যাডও অন্য কারো তৈরী করা। আবেদন দুটি নিয়ে যান চেয়ারম্যান। একজন ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালের বিষয়টি নিয়ে সমগ্র উপজেলায় আলোচনার ঝড় ওঠে। জাল স্বাক্ষরের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ওঠেপড়ে লেগে যান একটি মহল। শেষ রক্ষা হয়নি। এমন জাল জালিয়াতির বিচার না হলে নিজের চেয়ার ঠিকিয়ে রাখাই দায় হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। অঞ্জন দাস মুঠোফোনে বলেন, আবেদন পত্রটি হরিবিলাস মেম্বার থেকে নিয়েছি। কাগজের এক জায়গায় উনার সীল স্বাক্ষরও নিয়েছি। প্রত্যয়নপত্রটি কোথায় পেয়েছেন? একাধিকবার এই প্রশ্নটি করার পরও কোন উত্তর দেননি অঞ্জন। শেষে কিছু না বলেই লাইনটি কেটে দেন। ইউপি সদস্য হরিবিলাস মজুমদার বলেন, আমি শুধু সনাক্তকারীর জায়গায় স্বাক্ষর করেছি। অন্যকোন কাগজপত্র দেখিনি। ৯ নং শাহজাদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোছা. আছমা বেগম বলেন, জ্যোস্না ও অঞ্জনের ভোটার স’ান পরিবর্তনের প্রত্যয়নপত্র আমি দেয়নি। প্যাডটির মাঝখানে শাপলা ফুল নেই। সীল ও স্বাক্ষর দুটিও আমার না। আমার স্বাক্ষর জাল করেছে। নির্বাচন অফিসে আবেদন দুটির নম্বরও পড়েছিল। সন্দেহ হওয়ায় তারা আমাকে জানিয়েছেন। আমি গিয়ে জাল স্বাক্ষর দেখে বিস্মিত হয়েছি। ভোটার স’ানান্তর পক্রিয়ায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরিবিলাসের এনআইডি নম্বর ও স্বাক্ষর আছে। আমার স্বাক্ষরের বিষয়টি উনার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল। এটা গভীর কোন ষড়যন্ত্র। এমন আরো কাগজপত্রও জাল স্বাক্ষরে তৈরী করে থাকতে পারে। আমাকে মামলায় ফাঁসানো বা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানোর নীলনকশাও হতে পারে। তাই আমি জাল স্বাক্ষরের বিষয়ে আইনি ব্যবস’া নিব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, আমি বিষয়টি জানি। চেয়ারম্যান আমাকে কাগজপত্র গুলো দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল হওয়ার কথা বলেছেন। কাগজ গুলো যারা জমা দিয়েছেন তারা নিশ্চয় জানেন কোথায় থেকে পেয়েছেন। কে দিয়েছেন। এই জালিয়াতি প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তির জেল ও জরিমানা দুটিই হতে পারে।
মাহবুব খান বাবুল