Dhaka 6:30 pm, Saturday, 11 May 2024
News Title :
সরাইলে অগ্নিকান্ডে ১৫ দোকান পুড়ে ছাঁই দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সরাইলের হেমেন্দ্র এখন মো. হিমেল মা-বাবার নিয়মিত ঝগড়া বিরক্ত হয়ে থানায় শিশু সন্তান সিয়াম পাক্ষিক মত ও পথ এর সম্পাদক হওয়ায় প্রফেসর ফাহিমা খাতুন কে অভিনন্দন নবীনগরে সওজের জায়গায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ দোকান: চলছে কোটি টাকার দখল বাণিজ্য। ফেইক আইডি’র মাধ্যমে প্রার্থীর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র শঙ্কায় থানায় অভিযোগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন সরাইল বিএনপি’র সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিম পাইকপাড়ায় ইমারত আইন অমান্য করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ সরা্‌ইলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সরাইলে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় চেয়ারম্যান, সাংবাদিকে আসামী করে মামলা

পরিবারের দু:খ ঘুচাতে প্রবাসে যাওয়ার ১ বছর পর বাড়িতে ফিরল মাসুমের লাশ!

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:18:35 pm, Saturday, 16 March 2024
  • 81 Time View

পরিবারের দু:খ ঘুচাতে প্রবাসে যাওয়ার ১ বছর পর বাড়িতে ফিরল মাসুমের লাশ!

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পল্লী এলাকা শাহজাদাপুর গ্রামের আলেপ খানের দ্বিতীয় ছেলে মাসুম। টকবগে কিশোর বয়সের গন্ডিটা মাত্র শেষ হয়েছে মাসুমের। ১৮ পেরিয়ে ১৯ বছর। পরিবারের টানা পোড়েন। আর্থিক সংকটে লেখা পড়া খুব একটা করতে পারেনি। পিতা মাতা ভাই বোন তথা গোটা পরিবারের দু:খ ঘুচাতেই অল্প বয়সে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে মাসুম পাড়ি জমিয়েছিল দুবাই। মাত্র এক বছর পরই গতকাল শুক্রবার বিকেলে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল মাসুম (২০)। মাসুমের কফিন দেখে বাকরূদ্ধ পিতা মাতাসহ গোটা পরিবার। শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র শাহজাদাপুর গ্রামে। নারী পুরূষের কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠছে পুরো গ্রামের পরিবেশ। বাদ আছর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মাসুমের মরদেহ।

পারিবারিক ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহজাদাপুর গ্রামের আলেপ খান। গৃহস্থিই তার মূল পেশা। এক সময় স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে কোন রকমে দু:খে কষ্টেই চলছিল ৮ সদস্যের পরিবারটি। নানা টানা পোড়েনের মাঝেও আলেপ খান দুই ছেলেকে ঘিরে আশার আলো দেখতেন। এক সময় তার সংসারে সুখ আসবে এমন প্রত্যাশায় বারবার সংগ্রাম করেছেন। ৮ সদস্যের আহার যোগাতে রাতদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে আলেপ খানকে। ৬ সন্তানের মধ্যে মাসুম খান তৃতীয়। কিশোর বয়স পেরিয়ে মাত্র যুবকে পা দিয়েছে মাসুম। তখনও মাসুম টকবগে কিশোরের মতই। আলেপ খান পারিবারিক স্বাচ্ছন্দের আশায় মাসুমকে প্রবাসে পাঠানোর চিন্তা করেন। পরিবারে দু:খ ঘুচাতেই তার এই চিন্তা। দুবাই যেতে প্রয়োজন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অভাবের সংসারে এতটাকা পাবেন কোথায়? অনেক কষ্টে ঋণের পর চড়া সুদে টাকা ম্যানেজ করেন আলেপ খান।

তারপরও ছেলেকে প্রবাসে পাঠাতেই হবে। তার ধারণা ছেলে দুবাই গেলে ঋণ পরিশোধে কোন সমস্যা হবে না। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে মাসুম মা বাবা ভাই বোন ছেড়ে চলে যায় দুবাই। সেখানে যাওয়ার পরই কাজ মিলেনি। বেশ কয়েক মাস কষ্ট করতে হয়েছে মাসুমকে। হাল ছাড়েনি মাসুম। পিতার কষ্টের কথা মাথায় রেখে মাসুম প্রবাসে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়ে। প্রথম দিকে বেতন পেত না। মাত্র গত কয়েক মাস ধরে মাসুম বেতন পাচ্ছে। বাড়িতে সাধ্যমত টাকা পাঠাতে শুরূ করে। আর মুঠোফোনে মাঝেমধ্যে মা বাবা’র সাথে কথা হতো মাসুমের। যেখানে কাজ করতেন সেখানেই থাকতেন মাসুম। কিছুটা হলেও আশার দেখতে শুরূ করছিলেন আলেপ খান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। গত ১৭ ফেব্রূয়ারি রাতে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন মাসুম। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ষ্ট্রোক জনিত কারণে ঘুমের মধ্যেই মাসুম মৃত্যুবরণ করেন। মাসুমের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে আলেপ খানের। এক দিকে পুত্র শোক। অপরদিকে চড়া সুদের টাকা পরিশোধের চিন্তায় বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন আলেপ। অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে গোটা পরিবারে। প্রতি মূহুর্তে জ্ঞান হারাতে থাকেন মাসুমের মা।

গোটা শাহজাদাপুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। দীর্ঘ প্রায় এক মাস অপেক্ষার পর দুবাই থেকে গতকাল বিকেলে শাহজাদাপুর গ্রামে পৌঁছে মাসুমের মরদেহ। এর আগে মাসুমের লাশ আসছে আসবে এমন খবরে গ্রামের শত শত নারী পুরূষ এক নজর দেখতে ভীর করছিলেন বাড়িতে। লাশ পৌঁছার পর কি এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ভাইয়ের শোকে ভাই বোনদের মাটিতে গড়াগড়ি আর্তচিৎকার। শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন গ্রামবাসী। বাদ আছর শতশত লোকের অংশ গ্রহনে শাহজাদাপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মাসুমের জানাযা। পরে পারিবারিক কবরস’ানে দাফন করা হয় মাসুমের মরদেহ। নিহত মাসুমের পিতা আলেপ খান বলেন, পরিবারের দীর্ঘদিনের দু:খ কষ্ট ঘুচাতেই অনেক কষ্টে দেনা ও সুদে টাকা নিয়ে ছেলেটাকে প্রবাসে পাঠিয়েছিলাম। এই বয়সে আমার মাসুম মারা যাবে কখনো ভাবিনি। পুত্র শোকের পাশাপাশি ঋণ সুদের চাপে আমি অন্ধকার দেখছি। আমার সংসারটা এখন কিভাবে চলবে?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সরাইলে অগ্নিকান্ডে ১৫ দোকান পুড়ে ছাঁই দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

পরিবারের দু:খ ঘুচাতে প্রবাসে যাওয়ার ১ বছর পর বাড়িতে ফিরল মাসুমের লাশ!

Update Time : 07:18:35 pm, Saturday, 16 March 2024

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পল্লী এলাকা শাহজাদাপুর গ্রামের আলেপ খানের দ্বিতীয় ছেলে মাসুম। টকবগে কিশোর বয়সের গন্ডিটা মাত্র শেষ হয়েছে মাসুমের। ১৮ পেরিয়ে ১৯ বছর। পরিবারের টানা পোড়েন। আর্থিক সংকটে লেখা পড়া খুব একটা করতে পারেনি। পিতা মাতা ভাই বোন তথা গোটা পরিবারের দু:খ ঘুচাতেই অল্প বয়সে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে মাসুম পাড়ি জমিয়েছিল দুবাই। মাত্র এক বছর পরই গতকাল শুক্রবার বিকেলে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল মাসুম (২০)। মাসুমের কফিন দেখে বাকরূদ্ধ পিতা মাতাসহ গোটা পরিবার। শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র শাহজাদাপুর গ্রামে। নারী পুরূষের কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠছে পুরো গ্রামের পরিবেশ। বাদ আছর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মাসুমের মরদেহ।

পারিবারিক ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহজাদাপুর গ্রামের আলেপ খান। গৃহস্থিই তার মূল পেশা। এক সময় স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে কোন রকমে দু:খে কষ্টেই চলছিল ৮ সদস্যের পরিবারটি। নানা টানা পোড়েনের মাঝেও আলেপ খান দুই ছেলেকে ঘিরে আশার আলো দেখতেন। এক সময় তার সংসারে সুখ আসবে এমন প্রত্যাশায় বারবার সংগ্রাম করেছেন। ৮ সদস্যের আহার যোগাতে রাতদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে আলেপ খানকে। ৬ সন্তানের মধ্যে মাসুম খান তৃতীয়। কিশোর বয়স পেরিয়ে মাত্র যুবকে পা দিয়েছে মাসুম। তখনও মাসুম টকবগে কিশোরের মতই। আলেপ খান পারিবারিক স্বাচ্ছন্দের আশায় মাসুমকে প্রবাসে পাঠানোর চিন্তা করেন। পরিবারে দু:খ ঘুচাতেই তার এই চিন্তা। দুবাই যেতে প্রয়োজন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অভাবের সংসারে এতটাকা পাবেন কোথায়? অনেক কষ্টে ঋণের পর চড়া সুদে টাকা ম্যানেজ করেন আলেপ খান।

তারপরও ছেলেকে প্রবাসে পাঠাতেই হবে। তার ধারণা ছেলে দুবাই গেলে ঋণ পরিশোধে কোন সমস্যা হবে না। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে মাসুম মা বাবা ভাই বোন ছেড়ে চলে যায় দুবাই। সেখানে যাওয়ার পরই কাজ মিলেনি। বেশ কয়েক মাস কষ্ট করতে হয়েছে মাসুমকে। হাল ছাড়েনি মাসুম। পিতার কষ্টের কথা মাথায় রেখে মাসুম প্রবাসে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়ে। প্রথম দিকে বেতন পেত না। মাত্র গত কয়েক মাস ধরে মাসুম বেতন পাচ্ছে। বাড়িতে সাধ্যমত টাকা পাঠাতে শুরূ করে। আর মুঠোফোনে মাঝেমধ্যে মা বাবা’র সাথে কথা হতো মাসুমের। যেখানে কাজ করতেন সেখানেই থাকতেন মাসুম। কিছুটা হলেও আশার দেখতে শুরূ করছিলেন আলেপ খান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। গত ১৭ ফেব্রূয়ারি রাতে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন মাসুম। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ষ্ট্রোক জনিত কারণে ঘুমের মধ্যেই মাসুম মৃত্যুবরণ করেন। মাসুমের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে আলেপ খানের। এক দিকে পুত্র শোক। অপরদিকে চড়া সুদের টাকা পরিশোধের চিন্তায় বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন আলেপ। অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে গোটা পরিবারে। প্রতি মূহুর্তে জ্ঞান হারাতে থাকেন মাসুমের মা।

গোটা শাহজাদাপুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। দীর্ঘ প্রায় এক মাস অপেক্ষার পর দুবাই থেকে গতকাল বিকেলে শাহজাদাপুর গ্রামে পৌঁছে মাসুমের মরদেহ। এর আগে মাসুমের লাশ আসছে আসবে এমন খবরে গ্রামের শত শত নারী পুরূষ এক নজর দেখতে ভীর করছিলেন বাড়িতে। লাশ পৌঁছার পর কি এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ভাইয়ের শোকে ভাই বোনদের মাটিতে গড়াগড়ি আর্তচিৎকার। শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন গ্রামবাসী। বাদ আছর শতশত লোকের অংশ গ্রহনে শাহজাদাপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মাসুমের জানাযা। পরে পারিবারিক কবরস’ানে দাফন করা হয় মাসুমের মরদেহ। নিহত মাসুমের পিতা আলেপ খান বলেন, পরিবারের দীর্ঘদিনের দু:খ কষ্ট ঘুচাতেই অনেক কষ্টে দেনা ও সুদে টাকা নিয়ে ছেলেটাকে প্রবাসে পাঠিয়েছিলাম। এই বয়সে আমার মাসুম মারা যাবে কখনো ভাবিনি। পুত্র শোকের পাশাপাশি ঋণ সুদের চাপে আমি অন্ধকার দেখছি। আমার সংসারটা এখন কিভাবে চলবে?