ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অন্নদার দেড়শ বছর উদযাপনের নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন ৬ দফা দাবি আদায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি বাঞ্ছারামপুরে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধে হামলা বাড়িঘর ভাঙচুর, ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত রোটারি ক্লাব অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিডটাউনের সাধারণ সম্পাদক হলেন সানাউল্লাহ্ বাঞ্ছারামপুরে ‘ত্রাসের রাজত্ব’, ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর বিজয়নগরে ৬২ কেজি গাঁজাসহ ২ জন গ্রেফতার সরাইলে ছেত্রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিপিএফ’র মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

ফুলবাড়িয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুরসহ গৃহবধুকে ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২ ১২৩০ বার পড়া হয়েছে

ফুলবাড়িয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুরসহ গৃহবধুকে ধর্ষণ

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মারধরে আহত অচেতন সাইফুলকে মৃত ভেবে চলে যায় হামলাকারীরা

পূর্ব শত্রুতার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর-ধর্ষণসহ ঘরবাড়ি ভাংচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামলীগের প্রভাবশালী নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাগিনা শাহিন উদ্দিন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী গোলাম সারওয়ার নিপুসহ একদল দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) তারিখে পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ফুলবাড়িয়ায় মোঃ সাইফুল ইসলামের বাড়িতে। সাইফুল ইসলাম ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ ও মেসার্স আয়াত গার্মেন্টস এর চেয়ারম্যান। তিনি তাদের মারধরে মাথায় ও বাম হাতে গুরুতর আঘাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন। মারধরে আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে সাইফুল মারা গেছে মনে করে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে পাশের রুমে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ ও তার দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে মারধর করে। ঘটনা দেখে আশপাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে হামলাকারীরা ঘরের বিভিন্ন অংশে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাগিনা শাহিন উদ্দিন ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেন নি। পরে বিভিন্নভাবে তাগদা দিয়ে ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় মাল্টিপারপাস লিমিটেড এর পক্ষ থেকে ১৮৮১ এর দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারামতে ২০১৮ সনের অক্টোবরে শাহিন উদ্দিনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয় (সিআর নং- ৩০৭/১৮)। মামলা দায়েরের পর শাহিন উদ্দিন বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এতে মামলা না উঠানোয় মাল্টিপারপাস অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছিলেন। এ ঘটনায়ও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

অপরদিকে মাল্টিপারপাস এর নিয়ম অনুযায়ী ঋণ দিয়ে তা আদায়ের পাশাপাশি ২ শতাংশ হারে ইন্টারেস্ট (সুদ) আদায় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে নারী উদ্যোক্তা জড়িত থাকার কারণে ইসলামী দলগুলির নেতাকর্মীরাও এই প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। তারা বিষয়টিকে হারাম ফতোয়া দিয়ে এই ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কয়েকবার হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন। পরবর্তীতে অনাদায়ী ঋণের মামলায় ঋণ পরিশোধের আদেশ দিয়ে শাহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত রায় প্রকাশ করেন এবং গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট জারী করেন। এতে আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে শাহিন উদ্দিন নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী গোলাম সারওয়ার নিপুসহ ৮/১০ জন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে গত শনিবার গভীর রাতে শহরের ফুলবাড়িয়ায় সাইফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাইফুল ইসলামকে মারধর করে আহত করে। এ সময় পাশের কক্ষে ২/৩ জন হামলাকারী সাইফুলের স্ত্রী ফারজানা কবির লিন্ডাকে ধর্ষণ করে। ঘরে থাকা সাইফুলের বৃদ্ধা মা ও দুই শিশু সন্তানকেও মারধর করে। তাদের চিৎকারে আশাপাশের বাড়ি-ঘরের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে হামলাকারীরা দ্রুত কেরোসিন ঢেলে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরে থাকা টেলিভিশন, এসি, ফ্রিজসহ সকল আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে সাইফুল ইসলামের দুই হাত ও তার স্ত্রীর ডান হাতের কিছু অংশ পুড়ে যায়। হামলাকারীদের মধ্যে তাজুল ইসলাম নামের এক হামলাকারীও অগ্নিদগ্ধ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে বার্ন ইউনিটে তাদেরকে ভর্তি করা হয়।

ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শাহিন উদ্দিন আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আর দিচ্ছিল না। পরে আদালতে মামলা করলে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। বিভিন্ন সময় তার মামার প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে হুমকি-ধমকিসহ প্রতিষ্ঠানও ভাংচুর করেছিল। এবার আমাকে প্রাণে মারার জন্য আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করে ও আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে এবং আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি তাদের মারধরে অজ্ঞান হয়ে গেলে হামলাকারীরা আমি মৃত ভেবে চলে যায়। তিনি তার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফুলবাড়িয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুরসহ গৃহবধুকে ধর্ষণ

আপডেট সময় : ০৩:৪৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

মারধরে আহত অচেতন সাইফুলকে মৃত ভেবে চলে যায় হামলাকারীরা

পূর্ব শত্রুতার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর-ধর্ষণসহ ঘরবাড়ি ভাংচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামলীগের প্রভাবশালী নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাগিনা শাহিন উদ্দিন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী গোলাম সারওয়ার নিপুসহ একদল দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) তারিখে পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ফুলবাড়িয়ায় মোঃ সাইফুল ইসলামের বাড়িতে। সাইফুল ইসলাম ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ ও মেসার্স আয়াত গার্মেন্টস এর চেয়ারম্যান। তিনি তাদের মারধরে মাথায় ও বাম হাতে গুরুতর আঘাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন। মারধরে আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে সাইফুল মারা গেছে মনে করে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে পাশের রুমে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ ও তার দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে মারধর করে। ঘটনা দেখে আশপাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে হামলাকারীরা ঘরের বিভিন্ন অংশে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাগিনা শাহিন উদ্দিন ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেন নি। পরে বিভিন্নভাবে তাগদা দিয়ে ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় মাল্টিপারপাস লিমিটেড এর পক্ষ থেকে ১৮৮১ এর দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারামতে ২০১৮ সনের অক্টোবরে শাহিন উদ্দিনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয় (সিআর নং- ৩০৭/১৮)। মামলা দায়েরের পর শাহিন উদ্দিন বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এতে মামলা না উঠানোয় মাল্টিপারপাস অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছিলেন। এ ঘটনায়ও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

অপরদিকে মাল্টিপারপাস এর নিয়ম অনুযায়ী ঋণ দিয়ে তা আদায়ের পাশাপাশি ২ শতাংশ হারে ইন্টারেস্ট (সুদ) আদায় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে নারী উদ্যোক্তা জড়িত থাকার কারণে ইসলামী দলগুলির নেতাকর্মীরাও এই প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। তারা বিষয়টিকে হারাম ফতোয়া দিয়ে এই ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কয়েকবার হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন। পরবর্তীতে অনাদায়ী ঋণের মামলায় ঋণ পরিশোধের আদেশ দিয়ে শাহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত রায় প্রকাশ করেন এবং গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট জারী করেন। এতে আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে শাহিন উদ্দিন নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী গোলাম সারওয়ার নিপুসহ ৮/১০ জন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে গত শনিবার গভীর রাতে শহরের ফুলবাড়িয়ায় সাইফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাইফুল ইসলামকে মারধর করে আহত করে। এ সময় পাশের কক্ষে ২/৩ জন হামলাকারী সাইফুলের স্ত্রী ফারজানা কবির লিন্ডাকে ধর্ষণ করে। ঘরে থাকা সাইফুলের বৃদ্ধা মা ও দুই শিশু সন্তানকেও মারধর করে। তাদের চিৎকারে আশাপাশের বাড়ি-ঘরের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে হামলাকারীরা দ্রুত কেরোসিন ঢেলে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরে থাকা টেলিভিশন, এসি, ফ্রিজসহ সকল আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে সাইফুল ইসলামের দুই হাত ও তার স্ত্রীর ডান হাতের কিছু অংশ পুড়ে যায়। হামলাকারীদের মধ্যে তাজুল ইসলাম নামের এক হামলাকারীও অগ্নিদগ্ধ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে বার্ন ইউনিটে তাদেরকে ভর্তি করা হয়।

ন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শাহিন উদ্দিন আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আর দিচ্ছিল না। পরে আদালতে মামলা করলে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। বিভিন্ন সময় তার মামার প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে হুমকি-ধমকিসহ প্রতিষ্ঠানও ভাংচুর করেছিল। এবার আমাকে প্রাণে মারার জন্য আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করে ও আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে এবং আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি তাদের মারধরে অজ্ঞান হয়ে গেলে হামলাকারীরা আমি মৃত ভেবে চলে যায়। তিনি তার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করেছেন।