গোত্রগত দ্বন্ধ নিস্পত্তি করায় কোটি টাকার দুগ্ধ খামার বন্ধের হুমকি!

- আপডেট সময় : ০৬:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮৮ বার পড়া হয়েছে
মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে দুই গোত্রের দ্বন্ধের আপোষ নিস্পত্তি করায় হেদায়ত উল্লাহর উপর ক্ষুদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সাবাছ আলী। ক্ষোভে গ্রাম এলাকায় গড়ে ওঠা হেদায়তের কোটি টাকা মূল্যের দুগ্ধ খামারটি (মাহির এগ্রো ফার্ম) বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন ওই ইউপি সদস্য। সরকারী জায়গায় দেয়া খামারের পানি নিস্কাশনের পাইপ নিজ হাতে তুলে ফেলে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। ছোট বিষয়টিকে ঘিরে গ্রামকে বিভক্ত করার অভিযোগ ওঠেছে সাবাছ আলীর বিরূদ্ধে। উপজেলা প্রশাসন বলছেন, সরজমিন তদন্ত করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিব।
সরজমিনে স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সহিদের ছেলে হেদায়ত উল্লাহ। প্রবাস জীবন শেষ করে ৩ বছর আগে নিজ গ্রামে কোটি টাকার উপরে খরচ করে একটি দুগ্ধ খামার দিয়েছেন। খামারে কাজ করছেন ৬-৭ জন লোক। বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৩৫ টি গাভী পালন করছেন। দুধ দোহন করছেন ১৮টি গাভির। প্রতিদিন ২৩০ কেজি দুধ অরূয়াইল, সরাইল ও মাধবপুরে বিপণন করে প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা আসে। এই খামারের দুধ দিয়ে অত্র এলাকার বড় ধরণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। নিজ ওয়ার্ডে খামারটি প্রতিষ্ঠার সময় হেদায়তকে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন ইউপি সদস্য সাবাছ আলী। বিনা মূল্যে খামার থেকে দুধও নিয়েছেন। উনার নির্বাচনে হেদায়ত সকল প্রকার সহযোগিতাও করেছেন। নিজের শ্বশুর জয়নাল আবেদীনদের গোত্রের সাথে হেদায়তদের গোত্রের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্ধ চলে আসছিল।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউপি সদস্য হয়ে মুছকি হাঁসছেন সাবাছ আলী। তাই দ্বন্ধটির নিরসন চাননি সাবাছ। সম্প্রতি নিজ চেষ্টায় ওই দুই গোত্রের দীর্ঘদিনের দ্বন্ধ নিস্পত্তি করে শ্বশুরবাড়ির জায়গা দিয়ে খামারের পানি নিস্কাশনের পাইপ নিয়েছেন হেদায়ত। সর্দার ছাড়া দ্বন্ধ নিরসন ও পাইপ টানায় গাত্রদাহ শুরূ হয়েছে সাবাছ আলীর। এরপরই ঘুরে গিয়ে রক্ত চক্ষু দেখাচ্ছেন হেদায়তকে। সরকারী জায়গায় দেয়া খামারের পাইপ তুলে নেয়ার জন্য হেদায়তকে হুমকি দিচ্ছেন। অন্যথায় সাবাছ কর্তৃক নিজ হাতে পাইপ তুলে ফেলে খামার বন্ধ করে দেয়ার হুমকির কথাও জানিয়েছেন হেদায়ত। খামার থেকে প্রায় ৫-৬ শত মিটার দূরে তিতাসের শাখা (কোরে) সংলগ্ন ১ নং খাস খতিয়ানের ৬ একর ১০ শতাংশ ডুবা রয়েছে। ডুবাটি গত দুই বছর ধরে ইজারা আনেন সাবাছ আলীর সহোদর ভাই আতাব উল্লাহ ও স্বজন মন্তাজ মিয়া।
এবার ইজার প্রক্রিয়া মাত্র শুরূ হয়েছে। এরই মধ্যে ডালপালা ফেলে খুঁটি বসিয়ে ইজারামূলে মালিকানা দাবী করে গ্রামবাসীকে জড়ো করছেন ইউপি সদস্য। তিনি সকলকে বুঝিয়েছেন খামার থেকে ওই পাইপে গোবর এসে ডুবাতে পরে পানি নষ্ট হচ্ছে। অথচ ডুবাটির চারিদিকে প্রায় ১৫-২০ টি খোলা ল্যাট্রিন রয়েছে। অনেকে পাইপ দিয়ে ল্যাট্রিনের পানির ডুবায় ছেড়ে রেখেছেন। এর কোন প্রতিবাদ ও বন্ধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ইউপি সদস্য। গ্রামের বাসিন্দা আহাম্মদ আলী (৫৬), তাজু মিয়া (৬০), হানিফ মিয়া (৪৮) ও লিটন মিয়া (৩৭) বলেন, ওই পাইপের পাইপের পানি এখন পর্যন্ত কোরের (ডুবার) পানির কোন ক্ষতি করছে না। সকলেই সেখানে গোসল করছেন। মাছ ধরছেন। খামারের মালিক হেদায়ত উল্লাহ বলেন, অনেকেই নিজ গ্রামে উন্নয়ন বা উৎপাদনমূলক কিছু করতে উৎসাহিত হয় না কেন? তা আমি বুঝেছি। ইউপি সদস্য আমার সকল কাজে সহায়তা করেছেন। নিজেদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের একটি দ্বন্ধ নিরসনই কাল হলো আমার জন্য। এরপরই মেম্বার আমার পিছে লেগেছেন। তিনি এখন খামার বন্ধ ও আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। অভিযোগ সঠিক নয়। খামারের গোবর বিক্রি করি। গাভীর গোসলের পানিটা শুধু পাইপে নিস্কাশন হয়।
ইউপি সদস্য সাবাছ আলী বলেন, এটা আমার নয় গোটা গ্রামের সিদ্ধান্ত। খামারের গোবর প্রসাব ওই পানির ক্ষতি করছে। পাইপ তাকে তুলতেই হবে। নতুবা দেখে নিব। হত্যা মামলার এক নম্বর আসামী দিয়েই কিছু করতে পারেনি। আর হেদায়ত কি করবে? সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা ওই ডুবাটি এখনো কাউকে ইজারা দেয়নি। ইজারার প্রক্রিয়া চলমান। পাইপের বিষয়টি সরজমিনে দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। ইউপি সদস্যকে ডেকে ডুবা দখল করে থাকলে ছাড়তে বলেছি। অন্যথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।