ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

“ঈদ আনন্দ” সরাইলের মিনি কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল ঠাঁই নেই রিসোর্টে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এবার ঈদ আনন্দে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে সরাইলের মিনি কক্সবাজার। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। প্রচন্ড তাপদাহও থামাতে পারেনি ভ্রমণ পিপাষুদের। ঈদ-উল আযহার দিনে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি চোখে পড়েনি। কিন্ত পরের দিন গত সোমবার দুপুর ১২ টার পর থেকেই হাওর বেষ্টিত সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইলের ধর্মতীর্থ এলাকায় স্রোতের মত আসতে থাকেন পর্যটকরা। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে পর্যটকদের ঢল নামে। সড়কের ২-৩ কিলোমিটার এলাকায় মানুষের ঠাসাঠাসি। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না সদ্য উদ্বোধনকৃত রিসোর্টে। তবে রিসোর্টে প্রবেশ ফি ও খাবারের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। প্রথম দিনই রিসোর্টে ২ হাজার পর্যটক প্রবেশের কথা জানিয়েছেন রিসোর্ট মালিক জিহাদ উদ্দিন। ওইদিন শুধু প্রবেশ ফি থেকেই রিসোর্টের আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সরজমিনে দেখা যায়, কোরবানীর ঈদের পরের দিন গত সোমবার ভিন্ন রূপের সরাইলের মিনি কক্সবাজার। বর্ণিল সাজে সেজে আছে সদ্য চালুকৃত হাওরের পানির উপর ভাসমান রিসোর্ট ও রেষ্টুরেন্ট। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ১২টা। ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মটর বাইক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে আসছেন পর্যটকরা। সাথে পরিবার। কারো সাথে ভালবাসার মানুষ। অনেকে আসছেন গ্রূপ বেঁধে। বাহারি সাজে উপস্থিত হচ্ছে কিশোর কিশোরী ও বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা। দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল। বৃদ্ধি পেতে থাকে পর্যটকদের স্রোত। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়। সেখানে আসছেন মাধবপুর, নরসিংদী, ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজনও। এক সময় কালীকচ্ছ বাজার থেকে ভূঁইয়ার ঘাট এলাকা পর্যন্ত সড়কটিতে মানুষের ঢল নামে। সড়কে দল বেঁধে হেঁটে উপভোগ করছেন হাওরের পানির ঢেউ ও হিমেল বাতাস। কেউ চড়ছেন ঘোড়ায়। কেউ নাগর দোলায়। ভাসমান হকারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন ১৫-২০ জন করে। পছন্দের ছটপটি, আলুভাজা, ফুসকা, ঝালমুড়ি, বুট-বাদাম ক্রয়ে ব্যস্ত তারা। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে শশা আমড়া ও ভিন্ন স্বাদের কোমল পানীয়। পাল্টে যেতে থাকে দু’পাশের হাওর ও সদ্য চালুকৃত রিসোর্টের চিত্র। হাওরের পানিতে ঘুরে বেড়াতে ছোট ডিঙ্গি ভাড়া করছেন। কেউ নিজের পরিবার নিয়ে ঘুরছেন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ও স্পিডবোডে। আবার দূর দূরান্ত থেকে ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী বা অন্য পেশার কিশোর কিশোরী ও বয়স্ক লোকজনও মিলে মিশে বড় নৌকায় করে আসছেন। আর চারিদিকে ঘুরছেন ইচ্ছেমত। অনেকে নৌকাতেই নাচছেন গাইছেন ও খাচ্ছেন। এ যেন এক ভিন্ন আমেজ ও অনুভূতি। দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তখনও হাওর ও সড়ক ছাড়তে চাচ্ছেন না পর্যটকরা। আবার হঠাৎ করে রিসোর্ট দেখে অভিভূত হচ্ছেন পর্যটকরা। রিসোর্টের বর্ণিল সাজ কাছে টানছে তাদের। ছুটে যাচ্ছেন রিসোর্টের দিকে। ২০ টাকায় টিকেট কেটে প্রবেশ করছেন রিসোর্টে। ভেতরে প্রবেশ করে তারা উপভোগ করছেন হাওরের চারিদিক। পছন্দমত খাবার খাচ্ছেন। পান করছেন ড্রিংকস। এক সময় রিসোর্টের প্রধান ফটকে পর্যটকদের জ্যাম লেগে যায়। ভেতরেও আসন খালি নেই। কাণায় কাণায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে রিসোর্ট। রিসোর্টে প্রবেশের জন্য সড়কে নারী পুরূষের দীর্ঘ লাইন। আছরের পর দর্শনার্থীদের ভীরে সরাইল-নাসিরনগর সড়কে যান চলাচল থমকে যায়। মাত্র ২-৩ কিলোমিটার জায়গা পার হতে যাত্রীবাহী গাড়ি গুলোর সময় লাগে দেড়/ দুই ঘন্টা। দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ওই সড়কের যাত্রী ও চালকদের। সেখানকার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিকাল থেকে অবস্থান করছিল সরাইল থানার পুলিশ সদস্যরা। তবে রিসোর্টে প্রবেশ ফি ও খাবারের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক পর্যটক। পর্যটক মো. নাঈম দুর্জয় ও মেহেদী হাসান রজত বলেন, ২০ টাকা প্রবেশ ফি অনেক বেশী। আর রিসোর্টের খাবারের মূল্য ফাইভ ষ্টার হোটেলের মূল্যের চেয়েও অধিক। রিসোর্টের একজন মালিক জিহাদ উদ্দিন প্রবেশ ফি ২০ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ফি না নিলে সকল পর্যটক এক সাথে প্রবেশ করবে। কাউকে ফেরানো যাবে না। এক সাথে সকলে ওঠলে রিসোর্টটি হুমকির মধ্যে পড়বে। অধিক মূল্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/১০ টাকা বেশী নিচ্ছি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, আমি যায়নি। তবে শুনেছি এবার ঈদে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তি মালিকানা। প্রবেশ ফি-এর বিষয়টি তাদের উপরই নির্ভর করে। আর খাবার মূল্যের যদি তালিকা ঝুলিয়ে রাখা (প্রকাশ করে) হয় সেই ক্ষেত্রে খাওয়া না খাওয়া সেটা কাষ্টমারের সিদ্ধান্ত। আর তালিকা না ঝুলিয়ে যদি (গোপন রেখে) চাপিয়ে দেয়া হয় সেইটা আইনগত ভাবে সঠিক নয়। আমরা এই ধরণের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

মাহবুব খান বাবুল

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

“ঈদ আনন্দ” সরাইলের মিনি কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল ঠাঁই নেই রিসোর্টে

আপডেট সময় : ০২:০৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২

এবার ঈদ আনন্দে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে সরাইলের মিনি কক্সবাজার। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। প্রচন্ড তাপদাহও থামাতে পারেনি ভ্রমণ পিপাষুদের। ঈদ-উল আযহার দিনে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি চোখে পড়েনি। কিন্ত পরের দিন গত সোমবার দুপুর ১২ টার পর থেকেই হাওর বেষ্টিত সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইলের ধর্মতীর্থ এলাকায় স্রোতের মত আসতে থাকেন পর্যটকরা। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে পর্যটকদের ঢল নামে। সড়কের ২-৩ কিলোমিটার এলাকায় মানুষের ঠাসাঠাসি। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না সদ্য উদ্বোধনকৃত রিসোর্টে। তবে রিসোর্টে প্রবেশ ফি ও খাবারের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। প্রথম দিনই রিসোর্টে ২ হাজার পর্যটক প্রবেশের কথা জানিয়েছেন রিসোর্ট মালিক জিহাদ উদ্দিন। ওইদিন শুধু প্রবেশ ফি থেকেই রিসোর্টের আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সরজমিনে দেখা যায়, কোরবানীর ঈদের পরের দিন গত সোমবার ভিন্ন রূপের সরাইলের মিনি কক্সবাজার। বর্ণিল সাজে সেজে আছে সদ্য চালুকৃত হাওরের পানির উপর ভাসমান রিসোর্ট ও রেষ্টুরেন্ট। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ১২টা। ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মটর বাইক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে আসছেন পর্যটকরা। সাথে পরিবার। কারো সাথে ভালবাসার মানুষ। অনেকে আসছেন গ্রূপ বেঁধে। বাহারি সাজে উপস্থিত হচ্ছে কিশোর কিশোরী ও বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা। দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল। বৃদ্ধি পেতে থাকে পর্যটকদের স্রোত। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়। সেখানে আসছেন মাধবপুর, নরসিংদী, ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজনও। এক সময় কালীকচ্ছ বাজার থেকে ভূঁইয়ার ঘাট এলাকা পর্যন্ত সড়কটিতে মানুষের ঢল নামে। সড়কে দল বেঁধে হেঁটে উপভোগ করছেন হাওরের পানির ঢেউ ও হিমেল বাতাস। কেউ চড়ছেন ঘোড়ায়। কেউ নাগর দোলায়। ভাসমান হকারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন ১৫-২০ জন করে। পছন্দের ছটপটি, আলুভাজা, ফুসকা, ঝালমুড়ি, বুট-বাদাম ক্রয়ে ব্যস্ত তারা। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে শশা আমড়া ও ভিন্ন স্বাদের কোমল পানীয়। পাল্টে যেতে থাকে দু’পাশের হাওর ও সদ্য চালুকৃত রিসোর্টের চিত্র। হাওরের পানিতে ঘুরে বেড়াতে ছোট ডিঙ্গি ভাড়া করছেন। কেউ নিজের পরিবার নিয়ে ঘুরছেন ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ও স্পিডবোডে। আবার দূর দূরান্ত থেকে ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী বা অন্য পেশার কিশোর কিশোরী ও বয়স্ক লোকজনও মিলে মিশে বড় নৌকায় করে আসছেন। আর চারিদিকে ঘুরছেন ইচ্ছেমত। অনেকে নৌকাতেই নাচছেন গাইছেন ও খাচ্ছেন। এ যেন এক ভিন্ন আমেজ ও অনুভূতি। দিন শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তখনও হাওর ও সড়ক ছাড়তে চাচ্ছেন না পর্যটকরা। আবার হঠাৎ করে রিসোর্ট দেখে অভিভূত হচ্ছেন পর্যটকরা। রিসোর্টের বর্ণিল সাজ কাছে টানছে তাদের। ছুটে যাচ্ছেন রিসোর্টের দিকে। ২০ টাকায় টিকেট কেটে প্রবেশ করছেন রিসোর্টে। ভেতরে প্রবেশ করে তারা উপভোগ করছেন হাওরের চারিদিক। পছন্দমত খাবার খাচ্ছেন। পান করছেন ড্রিংকস। এক সময় রিসোর্টের প্রধান ফটকে পর্যটকদের জ্যাম লেগে যায়। ভেতরেও আসন খালি নেই। কাণায় কাণায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে রিসোর্ট। রিসোর্টে প্রবেশের জন্য সড়কে নারী পুরূষের দীর্ঘ লাইন। আছরের পর দর্শনার্থীদের ভীরে সরাইল-নাসিরনগর সড়কে যান চলাচল থমকে যায়। মাত্র ২-৩ কিলোমিটার জায়গা পার হতে যাত্রীবাহী গাড়ি গুলোর সময় লাগে দেড়/ দুই ঘন্টা। দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ওই সড়কের যাত্রী ও চালকদের। সেখানকার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিকাল থেকে অবস্থান করছিল সরাইল থানার পুলিশ সদস্যরা। তবে রিসোর্টে প্রবেশ ফি ও খাবারের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক পর্যটক। পর্যটক মো. নাঈম দুর্জয় ও মেহেদী হাসান রজত বলেন, ২০ টাকা প্রবেশ ফি অনেক বেশী। আর রিসোর্টের খাবারের মূল্য ফাইভ ষ্টার হোটেলের মূল্যের চেয়েও অধিক। রিসোর্টের একজন মালিক জিহাদ উদ্দিন প্রবেশ ফি ২০ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ফি না নিলে সকল পর্যটক এক সাথে প্রবেশ করবে। কাউকে ফেরানো যাবে না। এক সাথে সকলে ওঠলে রিসোর্টটি হুমকির মধ্যে পড়বে। অধিক মূল্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/১০ টাকা বেশী নিচ্ছি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, আমি যায়নি। তবে শুনেছি এবার ঈদে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তি মালিকানা। প্রবেশ ফি-এর বিষয়টি তাদের উপরই নির্ভর করে। আর খাবার মূল্যের যদি তালিকা ঝুলিয়ে রাখা (প্রকাশ করে) হয় সেই ক্ষেত্রে খাওয়া না খাওয়া সেটা কাষ্টমারের সিদ্ধান্ত। আর তালিকা না ঝুলিয়ে যদি (গোপন রেখে) চাপিয়ে দেয়া হয় সেইটা আইনগত ভাবে সঠিক নয়। আমরা এই ধরণের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

মাহবুব খান বাবুল