মাহবুব খান বাবুল: সরাইল থেকে:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে শিশু কাশফিয়া (০৮) হত্যা মামলা থেকে রক্ষা করতে এক তরূনকে শিশু প্রমাণ করতে আদালতে ভূয়া জন্মনিবন্ধন সনদ জমা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জন্মনিবন্ধন সনদটি বাতিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর লিখিত আবেদন করেছেন মামলার বাদী আব্দুল কাদির (৪০)। আসামীর নাম হোসেন আলী। সরাইল সদর ইউনিয়নের নোয়াহাটি গ্রামের মীর শাহবাজ আলীর ছেলে হোসেন আলীর বয়স এজহারে উল্লেখ ছিল ২০ বছর। তার বর্তমান বয়স ২১ বছর। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জন্ম নিবন্ধন সনদ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ। সেই সাথে তারা সনদটি বাতিল করে দেওয়ার পক্রিয়া শুরূ করার কথাও জানিয়েছেন। মামলার এজহার, বাদী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাত্র ২ আনা ( ১ জোড়া কানের দুল) স্বর্ণের জন্য ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মার্চ আব্দুল কাদিরের কন্যা শিশু কাশফিয়া প্রকাশ সেফাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘাতকরা। পরের দিন পুলিশ বাড়ির পাশের ঝোঁপের ভেতর থেকে কাশফিয়ার লাশ উদ্ধার করেন। ওই বছরের ১৬ মার্চ একমাত্র কন্যা সন্তানকে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে মীর শাহবাজ আলী ও খোশেদা বেগমের ছেলে হোসেন আলীসহ তিন জনের বিরূদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অন্য দুই আসামী হলো রিমি আক্তার (২২) ও জামির প্রকাশ জামিল (১৯)। ১৮ মার্চ তিন আসামীকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হোসেন আলীসহ দুই আসামী হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। বর্তমানে একজন জামিনে থাকলেও হোসেন আলীসহ দুই আসামী জেলহাজতে রয়েছে। এক বছরেরও অধিক সময় পর গত ২৭ জুন আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন পুলিশ। অভিযোগপত্রেও হোসেন আলীর বয়স ২০ বছর উল্লেখ করা আছে। তবে বাদী আব্দুল কাদির ও তার স্বজনদের অভিযোগ প্রধান আসামী হোসেন আলীকে আদালতে শিশু প্রমাণ করে রক্ষা করার জন্য তাঁর স্বজনরা গত ৪ সেপ্টেম্বর সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি নতুন জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেছেন। এই সনদে হোসেন আলীর জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি। তার মায়ের নাম খোশেদা বেগমের স’লে লেখা হয়েছে সুমা আক্তার। বাদী আব্দুল কাদিরসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, হোসেন আলীর মায়ের নাম খোশেদা বেগম। ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে খোশেদা বেগম খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় মীর শাবাজ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেছেন। হোসেন আলীর পরিবার ও স্বজনরা সদর ইউপি সচিবের সঙ্গে যোগসাজশে নতুন এই জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরী করেছেন। মা-এর মৃত্যুর ৩ বছর পর কিভাবে ছেলে জন্ম গ্রহন করতে পারে? হোসেন আলীকে রক্ষা করতে প্রতারণা ও তথ্য গোপন করে শিশু বানিয়েছেন। হোসেন আলীর পিতা শাবাজ আলী জন্মসনদ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, হোসেন আলীর প্রকৃত জন্মধাত্রী বা গর্ভধারীণি মা খোশেদা বেগম। আসল মা ১৮-২০ বছর আগে মারা গেছেন। এজন্য কাগজে সৎ মা সুমা আক্তারের নাম দেয়া হয়েছে। ইউপি সচিব মোহাম্মদ রূবেল ভূঁইয়া বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে ৪ বছর কমিয়ে সনদ বানিয়ে নিয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি। সনদটি দ্রূতই ক্যান্সেল করে দিব। সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত বয়স ও মায়ের নাম গোপন করে হোসেন আলী নামের ব্যক্তির নামে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে গেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সনদটি বাতিলের পক্রিয়া চলছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই চেয়ারম্যানের ওই প্রতিবেদনটি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। জড়িতদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।