Dhaka 7:06 am, Sunday, 8 September 2024
News Title :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রফেসর ডাঃ ইব্রাহিম এর ৩৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিপিএফ এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতির বার্ষিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছে চাঁদপুর নৌ পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডেলটা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির বীমার মেয়াদপূর্তি চেক প্রদান ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের আহ্বানে আখাউড়ায় ত্রাণ বিতরণ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে গুজব প্রতিরোধে সেমিনার ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মেয়রকে অশ্রুসিক্ত বিদায় সতীর্থদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সভাপতি নির্বাচিত জাবেদ রহিম বিজন

দালাল শরীফের ফাঁদে সব হারিয়ে সৌদীর মরূভূমি থেকে সরাইলের ২ যুবকের আকুতি

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:19:07 pm, Wednesday, 29 May 2024
  • 45 Time View

দালাল শরীফের ফাঁদে সব হারিয়ে সৌদীর মরূভূমি থেকে সরাইলের ২ যুবকের আকুতি

নাম কাজী বাদল। পিতা কাজী মুরাদ মিয়া। পেশায় গাড়ি চালক। সরাইলের আখিঁতারা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে স্বপ্ন দেখেন প্রবাসের। মাধ্যম একই গ্রামের ছমির বাড়ির শেখ শরীফ। নানা ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে বাদলকে সম্মত করেন। চুক্তি হয় ড্রাইভিং ভিসায় সৌদী নেওয়ার। আল্লাহর কছম করে শরীফ বাদলকে ২২শত রিয়াল বেতন, আকামা, লাইসেন্স, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া মালিকের বলে নিশ্চিত করেন। প্রয়োজন অনেক টাকার। বাদল সর্বস্ব খুঁইয়ে ধার দেনা সুদি করে মোট পোনে পাঁচ লাখ টাকা দেন শরীফকে। কথা রাখেননি শরীফ। বাদলকে নিয়ে যান সৌদী আরবের এক মরূভূমিতে। আকামা বিহীন দূর্বিসহ কষ্টের জীবন শুরূ হয় বাদলের। শরীফ চলে যায় ধরাছুঁয়ার বাহিরে। ১৪ দিনে চোখে সরিষা ফুল দেখতে থাকেন বাদল। আকামা চাইলে শরীফ বাদলের সকল নম্বর ব্লক করে দেন। ২ মাসের অধিক সময় পরও বাদল এখনও বেকার।

মরূভূমিতে অনাহার অর্ধাহারে মানববেতর জীবন-যাপন করছেন বাদল ও শাজাদাপুর গ্রামের জসিম। বাদলের সাথে শরীফ শাহজাদাপুর গ্রামের জসিমকে নিয়েছিল। জসিমও বর্তমানে আকামা বিহীন অবস্থায় খুবই কষ্টে আছে। সম্প্রতি এক ভিডিও লাইভে এসে বাদল তার জীবন বাঁচানোর আকুতি করেছেন। দালাল শরীফের প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরে বিচার দাবী করেছেন। কারণ মোটা অংকের টাকা নিয়ে লোকজনকে মরূভূমিতে ছেড়ে দেওয়াই শরীফের কাজ। শরীফের দ্বারা জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে বাদল উপজেলা/পুলিশ প্রশাসন, গ্রামবাসী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা চেয়েছেন। বাদলের স্ত্রী সন্তানরা শরীফের স্বজনদের কাছে দৌঁঁড়ঝাঁপ করছেন। তারা বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন।

সরজমিন অনুসন্ধান, ভুক্তভোগিরা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার আখিঁতারা ছমির বাড়ির আব্দুল শুক্কুর মিয়ার ছেলে শেখ শরীফ গত প্রায় তিন বছর ধরে সৌদী আরব আছেন। তিনি সম্প্রতি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে জরূরী ভিত্তিতে সৌদী আরবে লোক নেয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছেন। ইচ্ছুক লোকদের সাথে বাংলাদেশে যোগাযোগ, টাকা লেনদেন, ভিসা প্রসেসিং সহ সকল কাজ করেন শরীফের মামাত ভাই জহির। আখিঁতারা বাজারে রয়েছে জহিরের মুদির দোকান। শরীফের চাচাত ভাই মোস্তাক মিয়ার ছেলে একই বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ি রাজিবও (২৭) টাকা গ্রহন করে পাঠান। আখিঁতারা গ্রামের বাসিন্দা বাদল। পেশায় একজন গাড়ি চালক। বাদল প্রবাসে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে এগিয়ে আসেন শরীফ। বাদলকে নানা ধরণের প্রলোভন দেখাতে থাকেন। এক সময় শরীফের প্রলোভনে গলে যান সহজ-সরল বাদল। সৌদী আরবে ভাল বেতন সহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধার কথা বলে বাদলের কাছ থেকে শরীফ সর্বমোট পোনে পাঁচ লাখ নিয়ে নেন।

ভিসার মধ্যে লোডিং আনলোডিং লেখা দেখে বেঁকে যান বাদল। শরীফ কছম করে বাদলকে বলেন, ২২শত রিয়াল বেতন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আকামা, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া সবকিছুই বহন করবেন মালিক। এতে সম্মত হন বাদল। শরীফের কথায় বিশ্বাস করে স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে সুখের আশায় সৌদীতে পাড়ি দেন বাদল। সৌদীতে যাওয়ার পর প্রথম দিনই বাদলের কপাল উপরে ওঠে যায়। কারণ শরীফ ড্রাইভিং ভিসার কথা বললেও বাদলকে নিয়ে যায় মরূভূমির এক টিনশেড ঘরে। সেখানে ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও আকামাসহ কোন কিছুই করে দেয়নি শরীফ। অনেক অনুরোধ করার পর বাদলকে রিয়াদের আরার ওগিলা নামক স্থানে শরীফের এক স্বজনের কাছে পাঠায়। সেখানেও এক কক্ষে খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে বাদলের দিন। কিছুদিন পর শরীফের ফোনে হোয়াটস্‌আপে আর যোগাযোগ করতে পারে না বাদল। কারণ বাদলকে ব্লক মেরে দিয়েছেন শরীফ। নিরূপায় বাদলের ভাগ্যে জুটে অবর্ণনীয় কষ্ট। জীবন বাঁচানোর জন্য বাদল সৌদীতে বসবাসকারী পরিচিত জন ও বাংলাদেশীদের দ্বারস’ হতে থাকে। নিরূপায় বাদল এখন সেখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জীবন বাঁচানোর জন্য বাদলকে বাড়ি থেকে টাকা নিতে হচ্ছে।

ওদিকে বাদলের স্ত্রী সন্তান ও স্বজনরা শরীফের স্বজনদের কাছে যাচ্ছে বারবার। তারা বিষয়টি নিস্পত্তির আশ্বাস দিয়ে ১০-১২ দিন আগে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শরীফ আকামা দিতে না পারলে আকামার জন্য বাদলকে ২ লাখ টাকা দিবে। নতুবা বাদলের পুরো টাকা ফেরৎ দিবে। কিন’ অজানা কারণে তারা এখন সেই সিদ্ধান্তে নেই। উল্টো জনৈক উকিলের কাছে বাদলদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড আইডিতে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাদল। লাইভে ও মুঠোফোনে বাদল বলেন, দালাল শরীফ যে এত ভয়ঙ্কর প্রতারক আমার জানা ছিল না। মক্কা মদিনার কছম খেয়ে শরীফ আমাকে বলেছে, ড্রাইভিং ভিসায় সৌদী নিবে। ২২ শত রিয়াল বেতন দিবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, আকামা, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া সব বহন করবেন মালিক। আমার কোন চিন্তা করতে হবে না। এই কথা গুলো বলে আমার কাছ থেকে মোট পোনে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন।

তার মামাত ভাই জহির দেশে শরীফের পক্ষে টাকা গ্রহনসহ সকল কাজ প্রসেস করেন। তিনিও সাপোর্ট করেছেন। জহিরের কাছে আমি ২ লাখ ও শরীফের চাচাত ভাই রাজিবের কাছে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। গত ১লা মার্চ শরীফ আমাকে সৌদী আরব এনে মরূভূমিতে ছেড়ে দিয়েছে। ড্রাইভিং-এর খবর নেই। আকামা দিচ্ছে না। থাকা খাওয়া নেই। আমার নম্বর ব্লক করে দিয়েছে শরীফ। তার সাথে যোগাযোগও করতে পারছি না। আমি এখন যাযাবরের মত খুব কষ্টে আছি। আমার পরিবারের লোকজন খুবই কষ্টে আছে। তারপরও তাদের কাছ থেকে টাকা এনে খাচ্ছি। যেখানেই থাকি বন্দি থাকতে হচ্ছে। কারণ আকামা ছাড়া বের হওয়া যায় না। শরীফ এত বড় মাপের বাটপার, দালাল জানতাম না। এই পর্যন্ত শাহাজাদাপুরের জসিম সহ ৪-৫ জন লোক এনে মরূভূমিতে ছেড়ে দিয়েছে। তারা সকলই খুবই কষ্টে আছেন। সে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এখন চোখে কিছু দেখছি না। অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে পারছি না। ইদানিং শরীফ আমাকে হত্যা করে মরূভূমির বালিতে পুঁতে রাখার হুমকিও দিচ্ছে। আমার সম্বল যা ছিল সব শেষ করে সৌদীতে এসেছিলাম। আমি এখন নি:স্ব। আমার কিছুই নেই। আমার ভুল ক্রটি ক্ষমা করে দিবেন।

আমার জীবনটা আপনারা বাঁচান। দয়া করে সরাইল উপজেলা/পুলিশ প্রশাসন, গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীদের আমার বিষয়টি গুরূত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ করছি। মো. জহির তার বিরূদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, আমি কোন টাকা লেনদেন করিনি। শরীফের কোন কাজে আমি নেই। শরীফ ও বাদল কেউই ভাল নয়। তাই আমার কাছে একাধিকবার আসার পরও বাদলের টাকা হাতে নেয়নি। এমনকি গুণেও দেয়নি। শরীফ আমার ছেলে সহ এ পর্যন্ত ৪ জনকে বিদেশ নিয়েছে। ৪ লাখ টাকায় ছেলেকে পাঠিয়েছি। আমাকে বলেছে এক বছরের আকামা করে দিয়েছে। আমি অনুবাদ করে দেখি আকামা মাত্র ৯০ দিনের। শরীফকে ফোনে জিজ্ঞেস করলে নম্বর ব্লক করে দেয়। আমি তার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। বাদল লাইভে আমাকে নিয়ে যে কথা গুলো বলেছে সবগুলোই মিথ্যা। দুই গোষ্টীর লোকজন সাইমনের বাড়িতে বসেছিলেন। রেকর্ড শুনে এ ঘটনায় আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণিত হয়েছে। বাদলও সৌদীতে আমার এক স্বজনের মাধ্যমে ভুল স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে সৌদীতে অবস্থানরত ও অভিযুক্ত শেখ শরীফের ম্যাসেঞ্জারের একাধিকবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। এমনকি শরীফের ফেসবুক আইডিটি লক পাওয়া গেছে। পরে ম্যাসেঞ্জারে গণমাধ্যম কর্মীর নামসহ পরিচয় দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কোন রেসপন্স করেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রফেসর ডাঃ ইব্রাহিম এর ৩৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

fapjunk
© All rights reserved ©
Theme Developed BY XYZ IT SOLUTION

দালাল শরীফের ফাঁদে সব হারিয়ে সৌদীর মরূভূমি থেকে সরাইলের ২ যুবকের আকুতি

Update Time : 10:19:07 pm, Wednesday, 29 May 2024

নাম কাজী বাদল। পিতা কাজী মুরাদ মিয়া। পেশায় গাড়ি চালক। সরাইলের আখিঁতারা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে স্বপ্ন দেখেন প্রবাসের। মাধ্যম একই গ্রামের ছমির বাড়ির শেখ শরীফ। নানা ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে বাদলকে সম্মত করেন। চুক্তি হয় ড্রাইভিং ভিসায় সৌদী নেওয়ার। আল্লাহর কছম করে শরীফ বাদলকে ২২শত রিয়াল বেতন, আকামা, লাইসেন্স, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া মালিকের বলে নিশ্চিত করেন। প্রয়োজন অনেক টাকার। বাদল সর্বস্ব খুঁইয়ে ধার দেনা সুদি করে মোট পোনে পাঁচ লাখ টাকা দেন শরীফকে। কথা রাখেননি শরীফ। বাদলকে নিয়ে যান সৌদী আরবের এক মরূভূমিতে। আকামা বিহীন দূর্বিসহ কষ্টের জীবন শুরূ হয় বাদলের। শরীফ চলে যায় ধরাছুঁয়ার বাহিরে। ১৪ দিনে চোখে সরিষা ফুল দেখতে থাকেন বাদল। আকামা চাইলে শরীফ বাদলের সকল নম্বর ব্লক করে দেন। ২ মাসের অধিক সময় পরও বাদল এখনও বেকার।

মরূভূমিতে অনাহার অর্ধাহারে মানববেতর জীবন-যাপন করছেন বাদল ও শাজাদাপুর গ্রামের জসিম। বাদলের সাথে শরীফ শাহজাদাপুর গ্রামের জসিমকে নিয়েছিল। জসিমও বর্তমানে আকামা বিহীন অবস্থায় খুবই কষ্টে আছে। সম্প্রতি এক ভিডিও লাইভে এসে বাদল তার জীবন বাঁচানোর আকুতি করেছেন। দালাল শরীফের প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরে বিচার দাবী করেছেন। কারণ মোটা অংকের টাকা নিয়ে লোকজনকে মরূভূমিতে ছেড়ে দেওয়াই শরীফের কাজ। শরীফের দ্বারা জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে বাদল উপজেলা/পুলিশ প্রশাসন, গ্রামবাসী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা চেয়েছেন। বাদলের স্ত্রী সন্তানরা শরীফের স্বজনদের কাছে দৌঁঁড়ঝাঁপ করছেন। তারা বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন।

সরজমিন অনুসন্ধান, ভুক্তভোগিরা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার আখিঁতারা ছমির বাড়ির আব্দুল শুক্কুর মিয়ার ছেলে শেখ শরীফ গত প্রায় তিন বছর ধরে সৌদী আরব আছেন। তিনি সম্প্রতি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে জরূরী ভিত্তিতে সৌদী আরবে লোক নেয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছেন। ইচ্ছুক লোকদের সাথে বাংলাদেশে যোগাযোগ, টাকা লেনদেন, ভিসা প্রসেসিং সহ সকল কাজ করেন শরীফের মামাত ভাই জহির। আখিঁতারা বাজারে রয়েছে জহিরের মুদির দোকান। শরীফের চাচাত ভাই মোস্তাক মিয়ার ছেলে একই বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ি রাজিবও (২৭) টাকা গ্রহন করে পাঠান। আখিঁতারা গ্রামের বাসিন্দা বাদল। পেশায় একজন গাড়ি চালক। বাদল প্রবাসে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে এগিয়ে আসেন শরীফ। বাদলকে নানা ধরণের প্রলোভন দেখাতে থাকেন। এক সময় শরীফের প্রলোভনে গলে যান সহজ-সরল বাদল। সৌদী আরবে ভাল বেতন সহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধার কথা বলে বাদলের কাছ থেকে শরীফ সর্বমোট পোনে পাঁচ লাখ নিয়ে নেন।

ভিসার মধ্যে লোডিং আনলোডিং লেখা দেখে বেঁকে যান বাদল। শরীফ কছম করে বাদলকে বলেন, ২২শত রিয়াল বেতন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আকামা, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া সবকিছুই বহন করবেন মালিক। এতে সম্মত হন বাদল। শরীফের কথায় বিশ্বাস করে স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে সুখের আশায় সৌদীতে পাড়ি দেন বাদল। সৌদীতে যাওয়ার পর প্রথম দিনই বাদলের কপাল উপরে ওঠে যায়। কারণ শরীফ ড্রাইভিং ভিসার কথা বললেও বাদলকে নিয়ে যায় মরূভূমির এক টিনশেড ঘরে। সেখানে ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও আকামাসহ কোন কিছুই করে দেয়নি শরীফ। অনেক অনুরোধ করার পর বাদলকে রিয়াদের আরার ওগিলা নামক স্থানে শরীফের এক স্বজনের কাছে পাঠায়। সেখানেও এক কক্ষে খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে বাদলের দিন। কিছুদিন পর শরীফের ফোনে হোয়াটস্‌আপে আর যোগাযোগ করতে পারে না বাদল। কারণ বাদলকে ব্লক মেরে দিয়েছেন শরীফ। নিরূপায় বাদলের ভাগ্যে জুটে অবর্ণনীয় কষ্ট। জীবন বাঁচানোর জন্য বাদল সৌদীতে বসবাসকারী পরিচিত জন ও বাংলাদেশীদের দ্বারস’ হতে থাকে। নিরূপায় বাদল এখন সেখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জীবন বাঁচানোর জন্য বাদলকে বাড়ি থেকে টাকা নিতে হচ্ছে।

ওদিকে বাদলের স্ত্রী সন্তান ও স্বজনরা শরীফের স্বজনদের কাছে যাচ্ছে বারবার। তারা বিষয়টি নিস্পত্তির আশ্বাস দিয়ে ১০-১২ দিন আগে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শরীফ আকামা দিতে না পারলে আকামার জন্য বাদলকে ২ লাখ টাকা দিবে। নতুবা বাদলের পুরো টাকা ফেরৎ দিবে। কিন’ অজানা কারণে তারা এখন সেই সিদ্ধান্তে নেই। উল্টো জনৈক উকিলের কাছে বাদলদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড আইডিতে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাদল। লাইভে ও মুঠোফোনে বাদল বলেন, দালাল শরীফ যে এত ভয়ঙ্কর প্রতারক আমার জানা ছিল না। মক্কা মদিনার কছম খেয়ে শরীফ আমাকে বলেছে, ড্রাইভিং ভিসায় সৌদী নিবে। ২২ শত রিয়াল বেতন দিবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, আকামা, এসি রূমে থাকা ও খাওয়া সব বহন করবেন মালিক। আমার কোন চিন্তা করতে হবে না। এই কথা গুলো বলে আমার কাছ থেকে মোট পোনে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন।

তার মামাত ভাই জহির দেশে শরীফের পক্ষে টাকা গ্রহনসহ সকল কাজ প্রসেস করেন। তিনিও সাপোর্ট করেছেন। জহিরের কাছে আমি ২ লাখ ও শরীফের চাচাত ভাই রাজিবের কাছে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। গত ১লা মার্চ শরীফ আমাকে সৌদী আরব এনে মরূভূমিতে ছেড়ে দিয়েছে। ড্রাইভিং-এর খবর নেই। আকামা দিচ্ছে না। থাকা খাওয়া নেই। আমার নম্বর ব্লক করে দিয়েছে শরীফ। তার সাথে যোগাযোগও করতে পারছি না। আমি এখন যাযাবরের মত খুব কষ্টে আছি। আমার পরিবারের লোকজন খুবই কষ্টে আছে। তারপরও তাদের কাছ থেকে টাকা এনে খাচ্ছি। যেখানেই থাকি বন্দি থাকতে হচ্ছে। কারণ আকামা ছাড়া বের হওয়া যায় না। শরীফ এত বড় মাপের বাটপার, দালাল জানতাম না। এই পর্যন্ত শাহাজাদাপুরের জসিম সহ ৪-৫ জন লোক এনে মরূভূমিতে ছেড়ে দিয়েছে। তারা সকলই খুবই কষ্টে আছেন। সে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এখন চোখে কিছু দেখছি না। অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে পারছি না। ইদানিং শরীফ আমাকে হত্যা করে মরূভূমির বালিতে পুঁতে রাখার হুমকিও দিচ্ছে। আমার সম্বল যা ছিল সব শেষ করে সৌদীতে এসেছিলাম। আমি এখন নি:স্ব। আমার কিছুই নেই। আমার ভুল ক্রটি ক্ষমা করে দিবেন।

আমার জীবনটা আপনারা বাঁচান। দয়া করে সরাইল উপজেলা/পুলিশ প্রশাসন, গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীদের আমার বিষয়টি গুরূত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ করছি। মো. জহির তার বিরূদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, আমি কোন টাকা লেনদেন করিনি। শরীফের কোন কাজে আমি নেই। শরীফ ও বাদল কেউই ভাল নয়। তাই আমার কাছে একাধিকবার আসার পরও বাদলের টাকা হাতে নেয়নি। এমনকি গুণেও দেয়নি। শরীফ আমার ছেলে সহ এ পর্যন্ত ৪ জনকে বিদেশ নিয়েছে। ৪ লাখ টাকায় ছেলেকে পাঠিয়েছি। আমাকে বলেছে এক বছরের আকামা করে দিয়েছে। আমি অনুবাদ করে দেখি আকামা মাত্র ৯০ দিনের। শরীফকে ফোনে জিজ্ঞেস করলে নম্বর ব্লক করে দেয়। আমি তার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। বাদল লাইভে আমাকে নিয়ে যে কথা গুলো বলেছে সবগুলোই মিথ্যা। দুই গোষ্টীর লোকজন সাইমনের বাড়িতে বসেছিলেন। রেকর্ড শুনে এ ঘটনায় আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণিত হয়েছে। বাদলও সৌদীতে আমার এক স্বজনের মাধ্যমে ভুল স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে সৌদীতে অবস্থানরত ও অভিযুক্ত শেখ শরীফের ম্যাসেঞ্জারের একাধিকবার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। এমনকি শরীফের ফেসবুক আইডিটি লক পাওয়া গেছে। পরে ম্যাসেঞ্জারে গণমাধ্যম কর্মীর নামসহ পরিচয় দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কোন রেসপন্স করেননি।