ঢাকা ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সরাইলে বেহাল ৩ সড়কে নাকাল দেড় লক্ষাধিক মানুষ; প্রতিশ্রূতি আর স্বপ্নেই পার ৫০ বছর

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:০১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ ২২৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সরাইলের শাহবাজপুর-শাহ্‌জাদাপুর, রসুলপুর-আজবপুর ও সরাইল-পানিশ্বর সড়ক ৩টিই বেহাল। যুগযুগ ধরে চরম দূর্ভোগে আছেন সেখানকার লক্ষাধিক বাসিন্দা। বর্ষায় কষ্টের মধ্যেও কিছুটা স্বস্থি দেয় নৌকা। আর বর্ষার শুরূ আর শীতের সময় কষ্টে নাভিশ্বাস ওঠে। প্রতিশ্রূতি আর স্বপ্ন দেখেই তারা পার করেছেন অর্ধশতাধিক বছর। আশায় বুক বেঁধে ভোট দিয়ে এমপি মন্ত্রী বানালেন তারা। কিন্তু প্রাণের সড়ক পেলেন না আদৌ। ধূঁলো আর কাঁদায় একাকার তাদের জীবন। ঘুছেনি তাদের ঘাড়ের গামছা। ডিজিটাল আর এমবি’র যুগেও পলিথিন ব্যাগে জুতো কাপড় নিয়ে তাদের সড়ক পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের। সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, শাহজাদাপুরের সড়কটি মাত্র ২.৬৫ কিলোমিটার (মলাইশ-শাহজাদাপুর)। সড়কটির জন্য সীমাহীন কষ্টের সাগরে ভাসছে গোটা ইউনিয়ন। আর এমন দূর্ভোগে আছেন আজবপুর ও পানিশ্বরের লোকজনও। গত ৫০ বছর ধরে তারা শুনছেন শুধু আশ্বাসের বাণী। জাপা, বিএনপি ও আওয়ামীলীগ ৩ দলের সরকারই দেখেছেন তারা। সকলেই শুধু ভোট নিলেন। বিনিময়ে তাদের একমাত্র দাবীটি পূরণ করলেন না কেউই। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা পর্যায়ে শাজাদাপুরের সড়কটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উপর সভা হয়েছিল। আশায় বুক বেঁধেছিল শাহজাদাপুরবাসী। কিন্তু সেই আশা ও স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল আদৌ। বৃষ্টি হলে সড়কে থাকে হাটু সমান কাঁদা। যুদ্ধ করে পাড়ি দেয় তারা। বৃদ্ধ ও রোগীদের দূর্ভোগ সীমাহীন। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা-আর কত দূর্ভোগে মন গলবে কর্তৃপক্ষের? চুন্টার আজবপুর ও পানিশ্বরের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে হ্যাঁ হুতাশ। তাদের জিজ্ঞাসা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূত এ সড়কটি আদৌ হবে কি? তবে এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন অভিভাবকহীন সরাইল। তাই সরাইলের ৩টি (শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর, সরাইল-পানিশ্বর ও রসুলপুর-আজবপুর) সড়ক নির্মাণের কাজ পিছিয়ে গেছে। উপজেলা এলজিইডি অফিস ও স্থানীয়রা জানায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে বুধবার জেলা শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাইলের এই ৩ সড়কের কাজ করার প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন। এরপর থেকে এই প্রকল্পের নাম হয় ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূত ৩ রাস্তার কাজ।’ সেই প্রতিশ্রূতির ১১ বছর পরও কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শাহবাজপুর থেকে শাহজাদাপুর গ্রামের পূর্ব পাশের হাওর পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব ৭.৫০০ কিলোমিটার। মলাইশের ব্রিজ পর্যন্ত ৪.৮৫০ কিলোমিটার সড়কটির পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই। খোয়ালিয়ার পাড়ের পরের অংশ থেকে চকবাজার পর্যন্ত এইচ বিডি’র কাজ হয়েছে। বাজারে সড়কের প্রায় ১০০ মিটার জায়গায় হয়েছে সিসি ঢালাই। মাঝখানে মলাইশ ব্রিজ থেকে হাওরের মাঝ দিয়ে খোয়ালিয়ার পাড় পর্যন্ত ২.৬৫ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। শুস্ক মৌসমে ধোলা ও বৃষ্টির সময়ে কাঁদায় লুটুপুটি খাচ্ছে ওই জনপদের মানুষ। কিছু জায়গায় হাঁটু সমান কাঁদা। আটকে যাচ্ছে অটোরিকশা। চালকের সাথে ধাক্কায় যুক্ত হচ্ছে যাত্রীরা। সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন বৃদ্ধ গর্ভবতী মহিলা ও গুরূতর অসুস্থ্য রোগীরা। বর্তমানে বর্ষা শুরূ। সড়কে মানুষের কষ্ট দেখলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। এ দূর্ভোগ শতাধিক বছরের। মন্ত্রী এমপি’র প্রতিশ্রূতি, আশ্বাস ও বিশ্বাসেইর পাড় করছেন ৫০-৬০টি বছর। মানুষ বাঁচে কত বছর? জাপা, বিএনপি ও আওয়ামীলীগ কেউই কথা রাখেননি। তিন দলই সরকার গঠন করেছেন। দেশ পরিচালনা করেছেন ও করছেন। কিন্তু মাত্র ২.৬৫ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করেননি কেউই। চার বার কথা দিয়েছিলেন বর্তমান বিএনপি দলীয় এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। কথা দিয়েছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী হুজুর (বর্তমানে প্রয়াত)। কেউ কথা রাখেননি। প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন দুইবারের নির্বাচিত মহাজোটের এমপি জাপা নেতা এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাও। এখন এলাকায় কোন প্রোগ্রামে গেলেই দুই মহিলা এমপি খুবই দ্রূততম সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের হাততালি। বেড়ে যাচ্ছে অতিথিদের আপ্যায়ন। খোয়ালিয়ার খাল পেরিয়ে আসলেই বেমালুম সব ভুলে যান তারা। ফাঁকে কিছু সুবিধাবাদী লোক বিষয়টিকে ঘিরে সস্তা রাজনীতি করারও চেষ্টা করেন। তবে এমপি জিয়াউল হক মৃধা ৩টি সড়কের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন। উনার দাবী ও চেষ্টায় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সড়ক ৩টি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। শাহজাদাপুরের সড়কটি নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয়ও ১২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে দু’পাশের স্থাপনা সমূহ সরানোর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি সভাও করেছিলেন। প্রায় দেড় বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছিল কাজটি একনেকের সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে শাহ্‌জাদাপুরবাসীর দাবী একটাই। দ্রূততম সময়ের মধ্যে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ। তারা বলেন, পরিদাদা, দাদা, বাবা চাচা ও আমাদের জীবন দূর্ভোগেই শেষ। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটু স্বস্থি চাই। আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়ন চাই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুর রশীদ খান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূতির (অগ্রাধিকার ক্রমিক নং-১৬,১৭ ও ১৮) প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ও নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর সড়কের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭২ হাজার ৮৬ টাকা। রসুলপুর-আজবপুর সড়কে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৭ হাজার ৭৩৩ টাকা। সরাইল-পানিশ্বর সড়কের ব্যয় ৮ কোটি ৬১ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৭ টাকা। আর বাস্তবায়নকাল হচ্ছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন। এই প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে ২০২১ খ্রিষ্টব্দের ৬ এপ্রিল পত্র দিয়েছেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী। অভিভাবকহীন সরাইলের উচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের সজাগ দৃষ্টি না থাকায় কাজটি আবারও পিছিয়ে গেল বলে জানিয়েছেন ওই দপ্তরের একাধিক সূত্র। তবে কাজটি বাস্তবায়নের ফাইল নিয়ে এখন দৌঁড়ঝাপ করছেন জনৈক সচিব। উনার বাড়ি সরাইল উপজেলার ভূঁইশ্বর গ্রামে। উনার সাথে রয়েছেন চুন্টা ইউনিয়নের আজবপুর গ্রামের হারূন নামের এক যুবক। দেওড়া মিতালী সমাজ কল্যাণ সমিতি সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুব খান বলেন, ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে পৃথিবী যখন হাতের মুঠোয়। দেশ এগিয়ে গেছে কয়েক ধাপ। মানুষ চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চিন্তা করে প্রতি মূহুর্তে। বাস্তবায়িত হচ্ছে এসডিজি। আর সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূতির ১১ বছর পরও সড়ক ডটিন কাজ হচ্ছে না। শাহজাদাপুরের ২.৬৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে আছে। সরকার ও সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে এ বিষয়ে দ্রূত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি। যে সরকার বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু নিজেরাই করতে পারে। সেই সরকারের জন্য এটা কোন বিষয়ই না। সরকারকে অনুরোধ করে বলছি ‘দয়া করে সরাইলের দেড় লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগ লাঘব করূন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের কাজের জন্য সকল কিছু স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বোচ্চ জায়গায় প্রেরণ করা হয়েছে। কাজের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে।

মাহবুব খান বাবুল

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সরাইলে বেহাল ৩ সড়কে নাকাল দেড় লক্ষাধিক মানুষ; প্রতিশ্রূতি আর স্বপ্নেই পার ৫০ বছর

আপডেট সময় : ০১:০১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

সরাইলের শাহবাজপুর-শাহ্‌জাদাপুর, রসুলপুর-আজবপুর ও সরাইল-পানিশ্বর সড়ক ৩টিই বেহাল। যুগযুগ ধরে চরম দূর্ভোগে আছেন সেখানকার লক্ষাধিক বাসিন্দা। বর্ষায় কষ্টের মধ্যেও কিছুটা স্বস্থি দেয় নৌকা। আর বর্ষার শুরূ আর শীতের সময় কষ্টে নাভিশ্বাস ওঠে। প্রতিশ্রূতি আর স্বপ্ন দেখেই তারা পার করেছেন অর্ধশতাধিক বছর। আশায় বুক বেঁধে ভোট দিয়ে এমপি মন্ত্রী বানালেন তারা। কিন্তু প্রাণের সড়ক পেলেন না আদৌ। ধূঁলো আর কাঁদায় একাকার তাদের জীবন। ঘুছেনি তাদের ঘাড়ের গামছা। ডিজিটাল আর এমবি’র যুগেও পলিথিন ব্যাগে জুতো কাপড় নিয়ে তাদের সড়ক পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের। সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, শাহজাদাপুরের সড়কটি মাত্র ২.৬৫ কিলোমিটার (মলাইশ-শাহজাদাপুর)। সড়কটির জন্য সীমাহীন কষ্টের সাগরে ভাসছে গোটা ইউনিয়ন। আর এমন দূর্ভোগে আছেন আজবপুর ও পানিশ্বরের লোকজনও। গত ৫০ বছর ধরে তারা শুনছেন শুধু আশ্বাসের বাণী। জাপা, বিএনপি ও আওয়ামীলীগ ৩ দলের সরকারই দেখেছেন তারা। সকলেই শুধু ভোট নিলেন। বিনিময়ে তাদের একমাত্র দাবীটি পূরণ করলেন না কেউই। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা পর্যায়ে শাজাদাপুরের সড়কটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উপর সভা হয়েছিল। আশায় বুক বেঁধেছিল শাহজাদাপুরবাসী। কিন্তু সেই আশা ও স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল আদৌ। বৃষ্টি হলে সড়কে থাকে হাটু সমান কাঁদা। যুদ্ধ করে পাড়ি দেয় তারা। বৃদ্ধ ও রোগীদের দূর্ভোগ সীমাহীন। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা-আর কত দূর্ভোগে মন গলবে কর্তৃপক্ষের? চুন্টার আজবপুর ও পানিশ্বরের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে হ্যাঁ হুতাশ। তাদের জিজ্ঞাসা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূত এ সড়কটি আদৌ হবে কি? তবে এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন অভিভাবকহীন সরাইল। তাই সরাইলের ৩টি (শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর, সরাইল-পানিশ্বর ও রসুলপুর-আজবপুর) সড়ক নির্মাণের কাজ পিছিয়ে গেছে। উপজেলা এলজিইডি অফিস ও স্থানীয়রা জানায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে বুধবার জেলা শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাইলের এই ৩ সড়কের কাজ করার প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন। এরপর থেকে এই প্রকল্পের নাম হয় ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূত ৩ রাস্তার কাজ।’ সেই প্রতিশ্রূতির ১১ বছর পরও কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শাহবাজপুর থেকে শাহজাদাপুর গ্রামের পূর্ব পাশের হাওর পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব ৭.৫০০ কিলোমিটার। মলাইশের ব্রিজ পর্যন্ত ৪.৮৫০ কিলোমিটার সড়কটির পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই। খোয়ালিয়ার পাড়ের পরের অংশ থেকে চকবাজার পর্যন্ত এইচ বিডি’র কাজ হয়েছে। বাজারে সড়কের প্রায় ১০০ মিটার জায়গায় হয়েছে সিসি ঢালাই। মাঝখানে মলাইশ ব্রিজ থেকে হাওরের মাঝ দিয়ে খোয়ালিয়ার পাড় পর্যন্ত ২.৬৫ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। শুস্ক মৌসমে ধোলা ও বৃষ্টির সময়ে কাঁদায় লুটুপুটি খাচ্ছে ওই জনপদের মানুষ। কিছু জায়গায় হাঁটু সমান কাঁদা। আটকে যাচ্ছে অটোরিকশা। চালকের সাথে ধাক্কায় যুক্ত হচ্ছে যাত্রীরা। সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন বৃদ্ধ গর্ভবতী মহিলা ও গুরূতর অসুস্থ্য রোগীরা। বর্তমানে বর্ষা শুরূ। সড়কে মানুষের কষ্ট দেখলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। এ দূর্ভোগ শতাধিক বছরের। মন্ত্রী এমপি’র প্রতিশ্রূতি, আশ্বাস ও বিশ্বাসেইর পাড় করছেন ৫০-৬০টি বছর। মানুষ বাঁচে কত বছর? জাপা, বিএনপি ও আওয়ামীলীগ কেউই কথা রাখেননি। তিন দলই সরকার গঠন করেছেন। দেশ পরিচালনা করেছেন ও করছেন। কিন্তু মাত্র ২.৬৫ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করেননি কেউই। চার বার কথা দিয়েছিলেন বর্তমান বিএনপি দলীয় এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। কথা দিয়েছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী হুজুর (বর্তমানে প্রয়াত)। কেউ কথা রাখেননি। প্রতিশ্রূতি দিয়েছিলেন দুইবারের নির্বাচিত মহাজোটের এমপি জাপা নেতা এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাও। এখন এলাকায় কোন প্রোগ্রামে গেলেই দুই মহিলা এমপি খুবই দ্রূততম সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের হাততালি। বেড়ে যাচ্ছে অতিথিদের আপ্যায়ন। খোয়ালিয়ার খাল পেরিয়ে আসলেই বেমালুম সব ভুলে যান তারা। ফাঁকে কিছু সুবিধাবাদী লোক বিষয়টিকে ঘিরে সস্তা রাজনীতি করারও চেষ্টা করেন। তবে এমপি জিয়াউল হক মৃধা ৩টি সড়কের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন। উনার দাবী ও চেষ্টায় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সড়ক ৩টি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। শাহজাদাপুরের সড়কটি নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয়ও ১২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে দু’পাশের স্থাপনা সমূহ সরানোর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি সভাও করেছিলেন। প্রায় দেড় বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছিল কাজটি একনেকের সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে শাহ্‌জাদাপুরবাসীর দাবী একটাই। দ্রূততম সময়ের মধ্যে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ। তারা বলেন, পরিদাদা, দাদা, বাবা চাচা ও আমাদের জীবন দূর্ভোগেই শেষ। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটু স্বস্থি চাই। আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়ন চাই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুর রশীদ খান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূতির (অগ্রাধিকার ক্রমিক নং-১৬,১৭ ও ১৮) প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ও নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর সড়কের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭২ হাজার ৮৬ টাকা। রসুলপুর-আজবপুর সড়কে ১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৭ হাজার ৭৩৩ টাকা। সরাইল-পানিশ্বর সড়কের ব্যয় ৮ কোটি ৬১ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৭ টাকা। আর বাস্তবায়নকাল হচ্ছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন। এই প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে ২০২১ খ্রিষ্টব্দের ৬ এপ্রিল পত্র দিয়েছেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী। অভিভাবকহীন সরাইলের উচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের সজাগ দৃষ্টি না থাকায় কাজটি আবারও পিছিয়ে গেল বলে জানিয়েছেন ওই দপ্তরের একাধিক সূত্র। তবে কাজটি বাস্তবায়নের ফাইল নিয়ে এখন দৌঁড়ঝাপ করছেন জনৈক সচিব। উনার বাড়ি সরাইল উপজেলার ভূঁইশ্বর গ্রামে। উনার সাথে রয়েছেন চুন্টা ইউনিয়নের আজবপুর গ্রামের হারূন নামের এক যুবক। দেওড়া মিতালী সমাজ কল্যাণ সমিতি সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুব খান বলেন, ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে পৃথিবী যখন হাতের মুঠোয়। দেশ এগিয়ে গেছে কয়েক ধাপ। মানুষ চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চিন্তা করে প্রতি মূহুর্তে। বাস্তবায়িত হচ্ছে এসডিজি। আর সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রূতির ১১ বছর পরও সড়ক ডটিন কাজ হচ্ছে না। শাহজাদাপুরের ২.৬৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে আছে। সরকার ও সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে এ বিষয়ে দ্রূত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি। যে সরকার বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু নিজেরাই করতে পারে। সেই সরকারের জন্য এটা কোন বিষয়ই না। সরকারকে অনুরোধ করে বলছি ‘দয়া করে সরাইলের দেড় লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগ লাঘব করূন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের কাজের জন্য সকল কিছু স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বোচ্চ জায়গায় প্রেরণ করা হয়েছে। কাজের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে।

মাহবুব খান বাবুল