মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকে:
আর মাত্র ৪-৫ দিন পরই ঈদ-উল-ফিতর। মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব এটি। এই ঈদেই ধনী গরিব সকলেই নতুন জামা কাপড় ও জুতা ক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই রমজান মাসের শুরূ থেকেই ব্যবসায়িরা নানা রকম ও ডিজাইনের কাপড় দিয়ে সাজাতে থাকেন বিপণী বিতান গুলো। সরাইল সদরের বকুলতলা, মুন্সি কমপ্লেক্স, দেওয়ান বাড়ি মার্কেট, শপার্স গ্যালারীসহ ছোটখাট মার্কেটের সকল বিপণী বিতানেই নতুন ও আধুনিক ডিজাইনের কাপড় ওঠেছে। আর ক্রেতারাও ছুটে চলেছেন ওইসব বিপণী বিতান গুলোতে। প্রতিদিন সকাল ১০টার পরই যানজটে নাকাল হয়ে পড়ে সরাইল সদরের প্রধান সড়ক। গত কয়েক দিন ধরে জমে ওঠেছে এখানকার ঈদ বাজার। উপচেপড়া ক্রেতার ভীড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই দোকান গুলোতে। ‘আলিয়া’ নামের ড্রেস ঘিরে রব ওঠেছে চারিদিকে। বঙ্গ গার্মেন্টস নামক দোকানে ‘আলিয়া’ নিয়ে দিনভর টানাটানি করছে মহিলা, কিশোরী ও যুবতি মেয়েরা। প্রতিদিন ১/২ লাখ টাকা বিক্রি করছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ি।
সরজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টার পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে ক্রেতারা সরাইল সদরে প্রবেশ করতে থাকেন। ফলে ক্রেতাদের পদভারে সকাল ১০টার পরই প্রধান সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে নারী পুরূষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতি রয়েছে। তবে ক্রেতাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মহিলা। পছন্দমত জামা কাপড় ও জুতা ক্রয় করতে সকলেই দল বেঁধে ছুটছে দোকান গুলোতে। সরাইল সদরের প্রত্যেকটি মার্কেটে ক্রেতার উপচেপড়া ভীড়। মার্কেট গুলোর সামনের সড়কে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। বঙ্গ গার্মেন্টস, আলা উদ্দিন গার্মেন্টস, এস আর গার্মেন্টস, রাকিব ফ্যাশন ও ইনসাফ গার্মেন্টস সহ সকল দোকানেই ক্রেতার গিজাগিজি। একদল বসে ক্রয় করছেন। আরেক দল পেছনে দাঁড়িয়ে কাপড় দরদাম করছেন। কার আগে কে নিবেন রীতিমত এক প্রতিযোগিতা। সকাল ১১টায় বঙ্গ গার্মেন্টস ও আলা উদ্দিন গার্মেন্টেস-এ দেখা যায় মহিলাদের ভীড়। বসার চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বয়সের নারীর সংখ্যা বেশী। সকলেই শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রীপিস ক্রয়ে ব্যস্ত। ব্যবসায়ি আসমত আলী বলেন, ১০ রমজান পর্যন্ত ছিল এক রকম। ১১ থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ২১ রমজান থেকে ক্রেতার উপচেপড়া ভীড়। ৫-৬ জন বিক্রির কাজ করেও সামাল দেওয়া কষ্ট হচ্ছে।
প্রতিদিন কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারছি। বঙ্গের অপর শাখায় দেখা যায়, মহিলা কিশোরী ও যুবতি মেয়েদের ভীড়। দাঁড়িয়েই দরদাম করছেন বিভিন্ন ডিজাইনের থ্রীপিস। এরমধ্যে ‘আলিয়া’ নামের ড্রেসের দিকে আকর্ষণ বেশী। একজনের হাত থেকে আরেকজন নিয়ে দেখছেন। ‘আলিয়া’ রীতিমত টানাটানির এক প্রতিযোগিতা। মূল্যের চেয়ে প্রাপ্তি ও ক্রয়ই যেন মুখ্য ক্রেতাদের কাছে। ব্যবসায়ি আবু লাল জানায়, এবার অধিকাংশ মেয়ের পছন্দ ‘আলিয়া’। আলিয়ার মূল্য ৪ হাজার টাকা। পিছিয়ে নেই ‘নাইরা’ মূল্য ২ হাজার টাকা, পদ্মহারের মূল্য ৫ হাজার টাকা, ‘সাররা’র মূল্য ২৫ শত টাকা, ইসকাটের মূল্য ৫-৬ শত টাকা, ‘গ্রাউন্ডজামা’র মূল্য ২ হাজার থেকে ২৫ শত টাকা ও লেহেঙ্গা ২ হাজার টাকা। ক্রেতারা মূল্যের চেয়ে প্রাপ্তিকেই গুরূত্ব দিচ্ছেন। দৈনিক ১-দেড় লাখ টাকার ড্রেস বিক্রি করতে পারছি। অন্যান্য বিপণী বিতানে দেখা যায়, শিশুদের কাপড় ও জুতার দোকান গুলোতেও প্রচন্ড ভীড়। তুলনা মূলক ভাবে বড়দের কাপড়ের চেয়ে শিশুদের কাপড়ের মূল্য বেশী।
আর দেশী জুতার চেয়ে চায়না ব্রান্ডের জুতার দিকে অভিভাবক ও শিশুদের আকর্ষণ বেশী। চায়না জুতার দামও অধিক। বাজার করতে এসে অনেক মহিলা নিজের বাচ্চা হারিয়ে চিৎকার করার ঘটনাও ঘটছে। কোন কোন সময় সুযোগ নিচ্ছে পকেটমার ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারা কৌশলে অনেক মহিলাকে ঘায়েল করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছেন। আবার ওই চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্যে ধরাও পড়ছেন। সরাইল বিকাল বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা কুতুব উদ্দিন বলেন, আমরা ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহন ও চেষ্টা করে আসছি। এ কাজে পুলিশ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ দফাদার বা গ্রাম পুলিশ দিয়ে আমাদের সহায়তা করে থাকেন। তবে সবশেষ কথা সতর্ক ও সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।