‘মানুষের জন্য সাহিত্য-সাহিত্যের জন্য আমরা’ এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণ কবিদের সাহিত্য সংগঠন ‘কবির কলম’।
এ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা, গুণিজন সম্মাননা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, কবি জয়দুল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগার এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট অঞ্চল), বাচিকশিল্পী মোঃ মনির হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কবি ও গীতিকার দেওয়ান দিদারুল আলম মারুফ। সভায় সভাপতিত্ব করেন কবির কলমের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ। অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদার রাখায় ৯জন গুণিব্যক্তি সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তগণ হলেন কবি ও প্রাবন্ধিক বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক খান (মরণোত্তর), কবি ও সংগঠক মিলি চৌধুরী (মরণোত্তার), লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক রেজাউল করিম (মরণোত্তর), প্রাবন্ধিক ও গল্পকার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুজ্জামান, কবি, সাংবাদিক, উপস্থাপক সুমিতা বর্ধন (ভারত), কবি ও প্রাবন্ধিক মোঃ মোবারক হোসেন, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার মোঃ নুরুল হক, কবি ও সাংবাদিক আবু আহাম্মদ মৃধা, কবি ও সাংবাদিক রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস। অনুষ্ঠানে প্রত্যেক সম্মাননা প্রাপ্তগণকে সম্মাননা স্মারক, সনদ ও বই উপহার প্রদান করা হয়। সভায় সংগঠনের সহ-সভাপতি কবি সিরাজুম মুনিরা শশী ও সহ-সম্পাদক শাজাহান আহমেদ সাজন এর সঞ্চালনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গোর্কণঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, রম্য লেখক ও নাট্যকার পরিমল ভৌমিক, উলচাপাড়া মালেকা সাহেব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবি সেলিম হোসাইন হাওলাদার, আশুগঞ্জ ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কবি এম এ হানিফ, উদিচি জেলা শাখার সহ-সভাপতি মোঃ ফারুক আহমেদ ভুইয়া, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, কবি শিরিন আক্তার, কবি ও গল্পকার শৌমিক ছাত্তার, পৌরসভার বাজার পরির্দশক কবি এড. হুমায়ন কবির, অংকুর শিশু-কিশোর সংগঠনের সভাপতি আনিসুল হক রিপন, কবির কলমের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির, প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি কবি সুমন সাহা, সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন তানভীর ইকরাম। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত, গল্পকার শামস সোলেমান, রোকেয়া সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি রোকেয়া রহমান, নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙরের জেলা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খালেদা মুন্নি, সাহিত্য একাডেমির পরিচালক জামিনুর রহমান, অ্যাড বশির আহমেদ খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান আবৃত্তিশিল্পী রেজা-ই-রাব্বির নির্দেশনায় তিতাস অবৃত্তি সংগঠন ও ফাহিম মুনতাসির নির্দেশনায় সোনালী সকাল সংগঠনের সদস্যরা একক ও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, যে সমাজে গুণি মানুষদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না সেই সমাজে গুণি মানুষের জন্ম হয় না। এই কথা আমরা সবাই বিশ্বাস করলেও অনেকেই তা মানতে চায় না। তাই দেখা যায় সমাজে যারা জ্ঞানী-গুণি বলে পরিচিত তারা অনেক ক্ষেত্রেই অমর্যাদা ও অবহেলা শিকার হন। তাদের আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করি না। বিশেষত সাহিত্য অঙ্গনের ব্যক্তিরাই এই বিষয়টি বেশি উপলব্ধি করতে পারেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃত অঙ্গনের প্রয়াত ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করে তিনি বলেন, কবির কলম গুণিদেরকে সম্মান দেয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কবির কলমের একঝাক তরুণ নেতৃত্ব সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে গুণিদের সম্মাননা প্রদান করবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, সাহিত্য মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, পাওয়া না পাওয়া, জয় পরজয়ের কথা বলে। সাহিত্য স্বাধীনতার কথা বলে, জীবন সংগ্রামের কথা বলে। তাই কবির কলমের এই বছরের স্লোগান ‘মানুষের জন্য সাহিত্য-সাহিত্যের জন্য আমরা’ খুব ভালো একটি স্লোগান হয়েছে। এই বিষয়টিকে ধারণ করে কবির কলম সহ সকল সাহিত্যপ্রেমীদের সাহিত্যচর্চা করতে হবে। অনুষ্ঠানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়। উল্লেখ্য গতমাসের ৭ আগস্ট ছিল কবির কলম এর ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জাতীয় শোক দিবস ও অন্যান্য কারণে অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করে গতকাল উদযাপন করা হয়।