দূর থেকে মনে হয় কি যেন একটা দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলেও প্রথমে বুঝা কঠিন। কারণ মাটি থেকে এটির উচ্চতা প্রায় ৮-১০ ফুট। চারটি সিমেন্টের তৈরী পিলারের উপরে একটি চৌকি। চৌকি থেকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি নীচের দিকে গিয়ে সবুজ ঘাস ও ঝোঁপঝাঁড়ে মিলিত হয়েছে। একপাশে গ্রামীণ সড়ক। আর তিন পাশে ফসলি জমি। এটির সামনে ছোট একটি পরিত্যাক্ত ডোবা। পানি নেই। চৌকির এক পাশে একটি ফলক সাটানো। ফলকটিতে বাংলায় লেখা- ‘রাণীদিয়া লাতাইরা পুকুরে দক্ষিণপাড়ে গণগাটলা নির্মাণ। বাস্তবায়নে-উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল। অর্থ বছর-২০১৬-২০১৭ ইং।’ বানান ভুল থাকলেও ফলকটি পড়ে বুঝা গেল এটি একটি ঘাটলা। মজার বিষয় হচ্ছে ফলকে বরাদ্ধকৃত অর্থের পরিমাণ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রকল্পের সভাপতির নাম নেই। এটি সরাইল উপজেলার অরূয়াইল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রাণীদিয়া গ্রামে নির্মিত। নির্মাণের ৪ বছরের মধ্যে মানুষের কোন উপকারে আসেনি এটি। ব্যবহারই বা করবে কি করে? এই ঘাটলার চৌকিতে যেতে বাঁশের সিঁড়ি লাগবে। স্থানীয়রা জানায়, এটি নির্মাণে লাভ হয়েছে প্রকল্পের সভাপতির। ঠিকাদার ও মালামাল বিক্রেতার। আর এখন বর্ষা মৌসুমে জেলেদের। সরকারি তহবিলের অর্থ এভাবেই লুটপাট হয়। কে ছিলেন সভাপতি? বলতেও নারাজ স্থানীয় লোকজন। আর তখনই প্রশ্ন করতে হল। ঘাটলা তুমি কার? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক জনপ্রতিনিধি বলেন, ফসলি মাঠে ঘাটলা দিয়ে কি লাভ? টাকা আত্মসাৎ করতে প্রকল্প এনেছেন। বাস্তবায়নের জায়গা নেই। পুকুর না থাকলেও জায়গাটি খালি ছিল। তাই কোন রকমে লেপপোজ করে বিল উত্তোলন করে নিলেন। যারা বিল ছাড় করেছেন তারাই বা কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন? আসলে তো সরিষার মধ্যেই ভূত। ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রইছ মিয়া বলেন, ওই পুকুরে তো এখন ধান চাষ হয়। ঘাটলা থেকে সেটি ১০ ফুট দূরে। মাটি থেকে ঘাটলার চৌকির উচ্চতা কমপক্ষে ৯ ফুট। ঘাটলাটি ব্যবহার হয় না।
মাহবুব খান বাবুল