Dhaka 3:08 pm, Thursday, 2 May 2024
News Title :
মা-বাবার নিয়মিত ঝগড়া বিরক্ত হয়ে থানায় শিশু সন্তান সিয়াম পাক্ষিক মত ও পথ এর সম্পাদক হওয়ায় প্রফেসর ফাহিমা খাতুন কে অভিনন্দন নবীনগরে সওজের জায়গায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ দোকান: চলছে কোটি টাকার দখল বাণিজ্য। ফেইক আইডি’র মাধ্যমে প্রার্থীর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র শঙ্কায় থানায় অভিযোগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন সরাইল বিএনপি’র সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিম পাইকপাড়ায় ইমারত আইন অমান্য করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ সরা্‌ইলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সরাইলে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় চেয়ারম্যান, সাংবাদিকে আসামী করে মামলা সারাদেশে হিট এলার্ট; চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩ সাহিত্য একাডেমির বৈশাখী উৎসবের চতুর্থ দিনে মুজিবনগর দিবস পালন

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক আছে গাইনী নেই মেশিন আছে সিজার নেই

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:08:53 pm, Monday, 10 July 2023
  • 245 Time View

সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিন পূর্বে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু উন্নীত হয়নি সেবার মান। সরকারের দেয়া কোটি টাকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি থাকলেও গর্ভবতী মহিলাদের সিজার হচ্ছে না। বর্তমানে এই হাসপাতালে এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ আছে। নেই গাইনী বিশেষজ্ঞ। রহস্যজনক কারণে এই দুই পদের চিকিৎসক এক সাথে না থাকাটা এখানের দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। তাই অত্যাধুনিক মেশিন থাকলেও বন্ধ সিজার কার্যক্রম। ৮ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে চিকিৎসক নেই ৪ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ৫০ শয্যা হাসপাতালের সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার বাসিন্দারা।

হাসপাতাল সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে ৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে সরাইল হাসপাতালটি। রোগীর বেড, চিকিৎসক, জনবল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির আশায় বুক বেঁধেছিল স্থানীয়রা। কিন্তু সরাইলবাসীর সেই আশা পূরণ হয়নি আদৌ। এই হাসপাতালে নিয়মিত থাকছে না বরাদ্ধকৃত চিকিৎসক। ২-৪জন চিকিৎসক মাঝে মধ্যে আসলেও আবার দ্রূত বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। নামে ৫০ শয্যা হাসপাতালে বাস্তবে ৫০টি বেড না থাকার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের স্বল্প খরচে সিজারের মাধ্যমে নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্যই কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক মেশিন দিয়েছেন সরকার। কিন্তু শুরূ থেকেই চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘ দিনের জন্য বন্ধ থাকছে সিজার। অজানা কারণে এই হাসপাতালে এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ থাকলে থাকেন না গাইনী বিশেষজ্ঞ। আবার গাইনী বিশেষজ্ঞ থাকলে থাকেন না এ্যানেসথেসিয়া। অর্থাৎ উল্লেখিত ওই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে এক সাথে থাকেন না। আবার গাইনী বিশেষজ্ঞ এখানে যোগদান করে জেলা শহরের প্রাইভেট হাসপাতালে দিনে রাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেও সরাইল হাসপাতালে আসেন না। এমন ঘটনা ঘটছে গত দুই ২-৩ বছর ধরে। এমন অনিয়মের জন্য কর্তৃপক্ষ তাদেরকে একাধিকবার শোকজ করলেও ক্ষমতার দাপুটে চুল পরিমাণ নড়েনটি ওই চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তাই লম্বা সময় ঝুলে থাকায় সিজার কক্ষের তালায় ঝং ধরার ঘটনাও ঘটেছে।

সিজার কক্ষে ময়লার স্তুপ, টিকটিকি ও তেলাপোকার মলমূত্র জমে দূর্গন্ধও তৈরী হয়েছে। দীর্ঘ সময় ব্যবহার না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি গুলো বিকল হয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। অথচ সরকারি হাসপাতালের আশপাশের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে নিয়মিত মহিলাদের সিজার হচ্ছে। অপরিপক্ক ধাত্রীরাও চুক্তির মাধ্যমে করছেন সন্তান প্রসবের কাজ। তাদের ভুল চিকিৎসায় শিশু ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ব্যবস্থা নিতে গিয়ে স্থানীয় কতিপয় দালালের দ্বারা বাঁধা গ্রস্থও হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরাইল হাসপাতালের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বরাদ্ধ রয়েছে ৮ জন। বর্তমানে আছেন মাত্র ২ জন। এরা হলেন-এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা: শুভজিৎ ঘোষ ও অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা: শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ। দীর্ঘ দিন ধরে খালি রয়েছে সার্জারী, চর্ম, চক্ষু, মেডিসিন, ডেন্টাল সার্জন ও গাইনীসহ ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। গত এক/দেড় বছর ধরে উপজেলার ৪ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও যাচ্ছেন না কোন চিকিৎসক। ওই কেন্দ্র গুলোতে দরিদ্র অসহায় লোকজন সকাল ৯টা থেকে চিকিৎসার আশায় ঘুরতে থাকে। অনেক কেন্দ্র সমগ্র দিনই বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে খুললেও চিকিৎসক থাকে না। ফলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে গ্রামের লোকজন। ভুক্তভোগি আয়েশা বেগম ও জ্যোস্না বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কম টাকায় সন্তান প্রসবের আশায় হাসপাতালে এসেছি। স্যাররা বলছে ডাক্তার নেই। বাহিরে অনেক টাকা লাগে। সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান বলেন, এত মূল্যবান যন্ত্রপাতি থাকার পরও চিকিৎসকের সিজার না হওয়ার কথা শুনে আসছি গত ৩-৪ বছর ধরে। এর পেছনে অবশ্যই কোন অশুভ শক্তি কাজ করছেন। গর্ভবতী দরিদ্র অসহায় মহিলাদের সিজার নিশ্চিত করে মা শিশুর জীবন রক্ষা ও অর্থ সাশ্রয় নিশ্চিত করতে বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন।

সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া চিকিৎসকের অভাবে গর্ভবতী মহিলাদের সিজার বন্ধ থাকা ও ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্যা গুলি সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

মা-বাবার নিয়মিত ঝগড়া বিরক্ত হয়ে থানায় শিশু সন্তান সিয়াম

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক আছে গাইনী নেই মেশিন আছে সিজার নেই

Update Time : 01:08:53 pm, Monday, 10 July 2023

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিন পূর্বে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু উন্নীত হয়নি সেবার মান। সরকারের দেয়া কোটি টাকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি থাকলেও গর্ভবতী মহিলাদের সিজার হচ্ছে না। বর্তমানে এই হাসপাতালে এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ আছে। নেই গাইনী বিশেষজ্ঞ। রহস্যজনক কারণে এই দুই পদের চিকিৎসক এক সাথে না থাকাটা এখানের দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। তাই অত্যাধুনিক মেশিন থাকলেও বন্ধ সিজার কার্যক্রম। ৮ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে চিকিৎসক নেই ৪ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ৫০ শয্যা হাসপাতালের সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার বাসিন্দারা।

হাসপাতাল সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে ৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে সরাইল হাসপাতালটি। রোগীর বেড, চিকিৎসক, জনবল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির আশায় বুক বেঁধেছিল স্থানীয়রা। কিন্তু সরাইলবাসীর সেই আশা পূরণ হয়নি আদৌ। এই হাসপাতালে নিয়মিত থাকছে না বরাদ্ধকৃত চিকিৎসক। ২-৪জন চিকিৎসক মাঝে মধ্যে আসলেও আবার দ্রূত বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। নামে ৫০ শয্যা হাসপাতালে বাস্তবে ৫০টি বেড না থাকার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের স্বল্প খরচে সিজারের মাধ্যমে নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্যই কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক মেশিন দিয়েছেন সরকার। কিন্তু শুরূ থেকেই চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘ দিনের জন্য বন্ধ থাকছে সিজার। অজানা কারণে এই হাসপাতালে এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ থাকলে থাকেন না গাইনী বিশেষজ্ঞ। আবার গাইনী বিশেষজ্ঞ থাকলে থাকেন না এ্যানেসথেসিয়া। অর্থাৎ উল্লেখিত ওই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে এক সাথে থাকেন না। আবার গাইনী বিশেষজ্ঞ এখানে যোগদান করে জেলা শহরের প্রাইভেট হাসপাতালে দিনে রাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেও সরাইল হাসপাতালে আসেন না। এমন ঘটনা ঘটছে গত দুই ২-৩ বছর ধরে। এমন অনিয়মের জন্য কর্তৃপক্ষ তাদেরকে একাধিকবার শোকজ করলেও ক্ষমতার দাপুটে চুল পরিমাণ নড়েনটি ওই চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তাই লম্বা সময় ঝুলে থাকায় সিজার কক্ষের তালায় ঝং ধরার ঘটনাও ঘটেছে।

সিজার কক্ষে ময়লার স্তুপ, টিকটিকি ও তেলাপোকার মলমূত্র জমে দূর্গন্ধও তৈরী হয়েছে। দীর্ঘ সময় ব্যবহার না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি গুলো বিকল হয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। অথচ সরকারি হাসপাতালের আশপাশের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে নিয়মিত মহিলাদের সিজার হচ্ছে। অপরিপক্ক ধাত্রীরাও চুক্তির মাধ্যমে করছেন সন্তান প্রসবের কাজ। তাদের ভুল চিকিৎসায় শিশু ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ব্যবস্থা নিতে গিয়ে স্থানীয় কতিপয় দালালের দ্বারা বাঁধা গ্রস্থও হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরাইল হাসপাতালের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বরাদ্ধ রয়েছে ৮ জন। বর্তমানে আছেন মাত্র ২ জন। এরা হলেন-এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা: শুভজিৎ ঘোষ ও অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা: শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ। দীর্ঘ দিন ধরে খালি রয়েছে সার্জারী, চর্ম, চক্ষু, মেডিসিন, ডেন্টাল সার্জন ও গাইনীসহ ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। গত এক/দেড় বছর ধরে উপজেলার ৪ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও যাচ্ছেন না কোন চিকিৎসক। ওই কেন্দ্র গুলোতে দরিদ্র অসহায় লোকজন সকাল ৯টা থেকে চিকিৎসার আশায় ঘুরতে থাকে। অনেক কেন্দ্র সমগ্র দিনই বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে খুললেও চিকিৎসক থাকে না। ফলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে গ্রামের লোকজন। ভুক্তভোগি আয়েশা বেগম ও জ্যোস্না বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কম টাকায় সন্তান প্রসবের আশায় হাসপাতালে এসেছি। স্যাররা বলছে ডাক্তার নেই। বাহিরে অনেক টাকা লাগে। সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান বলেন, এত মূল্যবান যন্ত্রপাতি থাকার পরও চিকিৎসকের সিজার না হওয়ার কথা শুনে আসছি গত ৩-৪ বছর ধরে। এর পেছনে অবশ্যই কোন অশুভ শক্তি কাজ করছেন। গর্ভবতী দরিদ্র অসহায় মহিলাদের সিজার নিশ্চিত করে মা শিশুর জীবন রক্ষা ও অর্থ সাশ্রয় নিশ্চিত করতে বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন।

সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া চিকিৎসকের অভাবে গর্ভবতী মহিলাদের সিজার বন্ধ থাকা ও ৬ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্যা গুলি সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে।