Dhaka 10:07 am, Friday, 17 May 2024
News Title :
সরাইলে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মশালা বিজয়নগরে ভূমিদস্যু ইউনুসের অত্যাচারে টিকতে না পেরে থানায় অভিযোগ আশুগঞ্জে দুর্নীতি বিরোধী রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত সরাইলে অগ্নিকান্ডে ১৫ দোকান পুড়ে ছাঁই দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সরাইলের হেমেন্দ্র এখন মো. হিমেল মা-বাবার নিয়মিত ঝগড়া বিরক্ত হয়ে থানায় শিশু সন্তান সিয়াম পাক্ষিক মত ও পথ এর সম্পাদক হওয়ায় প্রফেসর ফাহিমা খাতুন কে অভিনন্দন নবীনগরে সওজের জায়গায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ দোকান: চলছে কোটি টাকার দখল বাণিজ্য। ফেইক আইডি’র মাধ্যমে প্রার্থীর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র শঙ্কায় থানায় অভিযোগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন সরাইল বিএনপি’র সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন

বেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটায়

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:07:03 pm, Thursday, 8 December 2022
  • 111 Time View

বেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটায়

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

সরাইলে দিনেরাতে একাধিক বেকু দিয়ে কাটছে ফসলি জমির মাটি। ৬টি ট্রাক্টরে মাটি নিচ্ছে গ্রামের বসতি এলাকা ঘেষা আশপাশের ৩/৪টি ইটভাটায়। এর মধ্যে ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটাটি চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাড়পত্র দিয়ে। কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে মাটি বিক্রি করতে কৃষকদের বাধ্য করার অভিযোগ ওঠেছে। ধূঁলোয় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বাড়ি ঘর। ট্রাক্টরের যাতায়তে ধূঁলোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের রবিশষ্য। অভিযোগ ওঠেছে ফসলি মাঠের সরকারী রাস্তা কেটে ফেলারও। গ্রামবাসীর বাঁধা, আর্তচিৎকার, কাকুতি, মিনতি কোনটাই আমলে নিচ্ছেন না ভাটার মালিকরা। এসব ইটভাটা গড়ে ওঠেছে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের গলানিয়া, ধর্মতীর্থ বিলের পাড় ও দৌলতপাড়া গ্রাম ঘেঁষে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মেয়াদ উত্তীর্ণ সনদপত্র দিয়েই চলছে ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটার উৎপাদন। তাদের নেই আর কোন বৈধ কাগজপত্র। সরজমিনে দেখা যায়, বেকু দিয়ে গলানিয়া গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ফসলি জমির মাটি কাটছেন ইটভাটার লোকজন। মাটি টানছে এক সাথে ৬টি ট্রাক্টর। তদারকি করছেন আল-আমীন নামের এক ব্যক্তি। গ্রাম ঘেঁষা কাঁচা সড়কে দিনে রাতে চলছে ট্রাক্টর। উড়ছে ধূঁলো। মূহুর্তের মধ্যে সবকিছু অন্ধকার। চারিদিকে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে শিশুরা। তাদের নাকে মুখে প্রবেশ করছে ধূঁলো। সড়কের পাশে গ্রামের কৃষকদের চাষ করা সকল রবিশষ্য ঢেকে যাচ্ছে ধূঁলোয়। বাড়ি ঘরের টিনের চালায় পড়েছে বালুর স্তর। ঘর থেকে বের হলেই ধূঁলো গিলতে হচ্ছে তাদের। ভিজে জামা কাপড় শুকাতে হচ্ছে ঘরের ভেতরেই। কৃষক মাহফুজ মিয়া (৬৫) দৌঁড়ে এসে চিৎকার করে জমি থেকে ট্রাক্টর সরাতে বলেন। তিনি বলেন, কত সুন্দর ছিল এই ফসলি মাঠ। এখন মাটি শ্বশ্বান করতেছে। কৃষি ধ্বংস করে দিচ্ছে এখানকার ইটভাটা গুলো। গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এত নিকটে ইটভাটা চালানোর অনুমতি সরকার কি ভাবে দিলেন? কৃষক ও প্রতিবন্ধি দুলাল মিয়া (৪৬) মাটি কাটায় বাঁধা দিয়ে বলেন, পাঁচ ফুট গভীরে মাটি কেটে উপরে রেখেছেন ২ ফুট জায়গা। আমার জমি ভেঙ্গে এই গর্তে পড়বে। দয়া করে মাটি কাটা বন্ধ করূন। আপনারা এমন সব কৌঁশলেই কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। সব শেষ করে দিয়েছেন তো। কৃষক ইদ্রিস মিয়া (৩১) অভিযোগ করে বলেন, সকল ফসল শেষ। আমরা না করলেও শুনতেছে না। ধানের বীজতলা বাদ হয়ে গেছে। গত বছরও আমার সকল ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। এবারও মরিচ, আলু, রসুন, পেয়াজ, সরিষা বুনেছি। সকল ফসলই ধূঁলোয় শেষ করে দিয়েছে। ধূঁলোর যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকা যায় না। কাপড় শুকাতে পারছি না। এ ছাড়া এখানে একটি মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা কষ্ট করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই সিয়াম ব্রিক্সের অবস্থান। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকায় ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। সিয়াম ইটভাটার মালিক মন মিয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ পরিবেশের ছাড়পত্র দেখিয়ে বলেন, অন্য কাগজ গুলো পক্রিয়াধীন। মেয়াদ শেষ হয়েছে এখন কর্তৃপক্ষ না বললে আমরা কাগজ করব কেন? ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন বলেন, সরাইলের ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটাকে আমরা অনেক আগেই অবৈধ ঘোষণা করেছি। কমপক্ষে ৫০ বা তার অধিক সংখ্যক পরিবার বসবাসের গ্রাম, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করার বিধান নেই। আমরা সরজমিনে বিষয় গুলো দেখব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রয় ও কাটার বিষয়ের আইনি ব্যাখ্যাটি আমি পরে দিচ্ছি। আর অন্যসব বিষয়েও খুঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সরাইলে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মশালা

বেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটায়

Update Time : 07:07:03 pm, Thursday, 8 December 2022

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

সরাইলে দিনেরাতে একাধিক বেকু দিয়ে কাটছে ফসলি জমির মাটি। ৬টি ট্রাক্টরে মাটি নিচ্ছে গ্রামের বসতি এলাকা ঘেষা আশপাশের ৩/৪টি ইটভাটায়। এর মধ্যে ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটাটি চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাড়পত্র দিয়ে। কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে মাটি বিক্রি করতে কৃষকদের বাধ্য করার অভিযোগ ওঠেছে। ধূঁলোয় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বাড়ি ঘর। ট্রাক্টরের যাতায়তে ধূঁলোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের রবিশষ্য। অভিযোগ ওঠেছে ফসলি মাঠের সরকারী রাস্তা কেটে ফেলারও। গ্রামবাসীর বাঁধা, আর্তচিৎকার, কাকুতি, মিনতি কোনটাই আমলে নিচ্ছেন না ভাটার মালিকরা। এসব ইটভাটা গড়ে ওঠেছে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের গলানিয়া, ধর্মতীর্থ বিলের পাড় ও দৌলতপাড়া গ্রাম ঘেঁষে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মেয়াদ উত্তীর্ণ সনদপত্র দিয়েই চলছে ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটার উৎপাদন। তাদের নেই আর কোন বৈধ কাগজপত্র। সরজমিনে দেখা যায়, বেকু দিয়ে গলানিয়া গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ফসলি জমির মাটি কাটছেন ইটভাটার লোকজন। মাটি টানছে এক সাথে ৬টি ট্রাক্টর। তদারকি করছেন আল-আমীন নামের এক ব্যক্তি। গ্রাম ঘেঁষা কাঁচা সড়কে দিনে রাতে চলছে ট্রাক্টর। উড়ছে ধূঁলো। মূহুর্তের মধ্যে সবকিছু অন্ধকার। চারিদিকে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে শিশুরা। তাদের নাকে মুখে প্রবেশ করছে ধূঁলো। সড়কের পাশে গ্রামের কৃষকদের চাষ করা সকল রবিশষ্য ঢেকে যাচ্ছে ধূঁলোয়। বাড়ি ঘরের টিনের চালায় পড়েছে বালুর স্তর। ঘর থেকে বের হলেই ধূঁলো গিলতে হচ্ছে তাদের। ভিজে জামা কাপড় শুকাতে হচ্ছে ঘরের ভেতরেই। কৃষক মাহফুজ মিয়া (৬৫) দৌঁড়ে এসে চিৎকার করে জমি থেকে ট্রাক্টর সরাতে বলেন। তিনি বলেন, কত সুন্দর ছিল এই ফসলি মাঠ। এখন মাটি শ্বশ্বান করতেছে। কৃষি ধ্বংস করে দিচ্ছে এখানকার ইটভাটা গুলো। গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এত নিকটে ইটভাটা চালানোর অনুমতি সরকার কি ভাবে দিলেন? কৃষক ও প্রতিবন্ধি দুলাল মিয়া (৪৬) মাটি কাটায় বাঁধা দিয়ে বলেন, পাঁচ ফুট গভীরে মাটি কেটে উপরে রেখেছেন ২ ফুট জায়গা। আমার জমি ভেঙ্গে এই গর্তে পড়বে। দয়া করে মাটি কাটা বন্ধ করূন। আপনারা এমন সব কৌঁশলেই কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। সব শেষ করে দিয়েছেন তো। কৃষক ইদ্রিস মিয়া (৩১) অভিযোগ করে বলেন, সকল ফসল শেষ। আমরা না করলেও শুনতেছে না। ধানের বীজতলা বাদ হয়ে গেছে। গত বছরও আমার সকল ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। এবারও মরিচ, আলু, রসুন, পেয়াজ, সরিষা বুনেছি। সকল ফসলই ধূঁলোয় শেষ করে দিয়েছে। ধূঁলোর যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকা যায় না। কাপড় শুকাতে পারছি না। এ ছাড়া এখানে একটি মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা কষ্ট করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই সিয়াম ব্রিক্সের অবস্থান। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকায় ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। সিয়াম ইটভাটার মালিক মন মিয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ পরিবেশের ছাড়পত্র দেখিয়ে বলেন, অন্য কাগজ গুলো পক্রিয়াধীন। মেয়াদ শেষ হয়েছে এখন কর্তৃপক্ষ না বললে আমরা কাগজ করব কেন? ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন বলেন, সরাইলের ‘সিয়াম’ নামের ইটভাটাকে আমরা অনেক আগেই অবৈধ ঘোষণা করেছি। কমপক্ষে ৫০ বা তার অধিক সংখ্যক পরিবার বসবাসের গ্রাম, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করার বিধান নেই। আমরা সরজমিনে বিষয় গুলো দেখব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রয় ও কাটার বিষয়ের আইনি ব্যাখ্যাটি আমি পরে দিচ্ছি। আর অন্যসব বিষয়েও খুঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।