১০ বছর পর সংযোগ অবৈধ ঘুষ ১ লাখ, জরিমানা ১৯ লাখ

- আপডেট সময় : ০৭:৩১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৯৩ বার পড়া হয়েছে
মাহবুব খান বাবুল: সরাইল থেকে:
১০-১২ বছর ব্যবহারের পর হঠাৎ করে পিডিবি বলছেন সংযোগ বাইপাস। ৫ টি লাইন কেটে ৩০-৩২ টি মিটার নিয়ে যান। আর গ্রাহক বলছেন বৈধ লাইন থেকে সাব-মিটার দিয়েছি। ১টি থ্রি ফেইজসহ ৬টি মিটারের বিল দিচ্ছি নিয়মিত। তাড়ঘড়ি নিজেরাই বাইপাস ঘোষণা দিয়েছেন। নিয়ম মাফিক বাইপাস লাইন প্রমাণ করতে ভিডিও লাগে। লাগে ছবিও। তাদের কাছে কিছুই নেই। প্রথমে জরিমানা বিল ৫২ লাখ টাকা বলে কাহিল করেন গ্রাহককে। পরে ৫০ লাখ। এরপর ২৫ লাখ। এক পর্যায়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিলে ২০ হাজার টাকায় রফাদফার আশ্বাস দেন প্রকৌশলী সুমন ও আতিকুল্লাহ। আল্লাহ ও মানুষের কাছে দায়মুক্তির কথা বলে গ্রাহক ইব্রাহিমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেন আতিক উল্লাহ। ঘুষের ৫ লাখ না পাওয়ায় বেঁকে যান ২ প্রকৌশলী। হাজার থেকে চলে যান লাখে। ১৯ লাখ ৪০ হাজার ১৮২ টাকা জরিমানা বিল ধরিয়ে দেন ইব্রাহিম খলিলকে। অভিযোগ সমূহ ও ঘুষ গ্রহনকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে আসে অতীতে ঘুষ বাণিজ্য করতে না পারার ঘটনা। চিন্তায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন ইব্রাহিম। পিডিবি’র চাপে বিল পরিশোধ করতে মাদ্রাসার জায়গা বিক্রি করে দেন। উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারের আবাবীল মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই মার্কেটের মালিক মো. ইব্রাহিম খলিল। স্থানীয় পিডিবি, গ্রাহক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইল পিডিবি অফিস থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূর কালীকচ্ছ আবাবীল মার্কেট। মালিক ইব্রাহিম খলিল ১০-১২ বছর আগে ১টি থ্রি ফেইজসহ ৬টি (বসতবাড়ি সহ) সংযোগ নেন সরাইল পিডিবি থেকে। এর মধ্যে ১টি থ্রি ফেইজ। ২টি প্রিপ্রেইড। ২টি ডিজিটাল। আর বাড়িতে ডিজিটাল মিটার ১টি। মার্কেটের ৩০ ভাড়াটিয়াকে দিয়েছেন সাব-মিটার। সরাইল পিডিবি’র কর্মকর্তা কর্মচারিরা নিয়মিত যাচ্ছেন ওই মার্কেটে। নিয়মিত রিডিং কালেক্ট করছেন পিডিবি’র লোক। সব মিলিয়ে প্রতি মাসেই বিলও দিচ্ছেন ইব্রাহিম। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই মার্কেটে প্রবেশ করেন উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন হোসেন সর্দার, মো. আতিক উল্লাহ ও মো. হারূন অর রশিদ। তারা বলেন অনুমোদন বিহীন ডাইরেক্ট সংযোগে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন ভাড়াটিয়ারা। আর গ্রাহক ইব্রাহিম বলছেন, না আমাদের বৈধ সংযোগ থেকে ভাড়াটিয়াদের সাব-মিটারের মাধ্যমে সংযোগ দিয়েছি। ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যবহার করছি। ইব্রাহিমকে ধমকাতে থাকেন পিডিবি’র কর্তারা। সুমন সর্দার ও সরাইল অফিসে আছেন ৬ বছর ধরে। হঠাৎ করে কি যেন চাপাতে চাচ্ছেন। তারা ইব্রাহিমের ৫টি সংযোগই কেটে দেন। প্রথমে ৫২ লাখ টাকা জরিমানা বিলের কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর বলেন ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করব। পরে ২৫ লাখও বলেছেন। পরের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর অফিসে গেলে প্রকৌশলী আতিক উল্লাহ কোরআন হাদিস ও দায়মুক্তির কথা ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন। বিনিময়ে জরিমানা বিল করবেন ২০ হাজার টাকা। মাথা খারাপ হয়ে যায় ইব্রাহিমের। হাতে টাকা নেই। ধার কর্য্য করে আতিক উল্লাহকে ঘুষ দেন এক লাখ টাকা। পাঁচ এর বদলে ১ লাখ দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হন আতিক ও সুমন। বেঁকে বসেন দু’জনই। ইচ্ছেমত জরিমানা বিল করা শুরূ করেন। নম্বর বিহীন (০) মিটারে ২০০১ ইউনিট দেখিয়ে ৬৪ হাজার ৯২৫ টাকা, ৯০৯৩০৮ নং মিটারে ৬০১০ ইউনিট দেখিয়ে তিনগুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৯ টাকার বিল জমা দিয়েছেন। একই দিন ২৫৯৬১৯ নং মিটারে ১৩০৫০ ইউনিট দেখিয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৪১৭ টাকা ও ২৫৮৫০৭ নং মিটারে জমা দেয় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৬১ টাকা। এভাবে ১৮ টি মিটারের নম্বরে মোট ৫৯৭৯৮ ইউনিট দেখিয়ে ভ্যাটসহ বিল করেন ১৯ লাখ ৪০ হাজার ১৮২ টাকা। নিরূপায় ইব্রাহিম মাদরাসার ১২ শতক জায়গা বিক্রি করেন। গত ২২, ২০ ও ১৯ সেপ্টেম্বর তিন দিনে পরিশোধ করেন সেই টাকা। তবে প্রকৌশলী আতিক উল্লাহকে দেয়া ১ লাখ টাকা ফেরৎ পাননি আদৌ। কালীকচ্ছ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ি ও গ্রাহক বলেন, পিডিবি অফিস থেকে কালীকচ্ছ আসতে ৭ মিনিট সময় লাগে। ১০ বছর ধরে এই লাইন গুলি চলছে। সাব-মিটার আছে আমরা জানি। প্রশ্ন হচ্ছে যদি ডাইরেক্ট বা অবৈধ হয়ে থাকে পিডিবি’র লোকজন এতদিন কি করেছেন? কর্তা ব্যক্তিরা এতদিন পরে জানলেন কেন? হয়ত বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোন কারণে ইব্রাহিমের উপর ক্ষুদ্ধ। নতুবা তারা মাসিক মাসোয়ারা পেতেন। জরিমানা বিল করলে আবার টাকা নিলেন কেন? আসলে সরিষার মধ্যেই ভূত। আর এ ঘটনার নেপথ্যে ভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসে গ্রাহক ইব্রাহিমের বয়ানে। ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ২ বছর আগে আমার এলাকায় ৮টি খুঁটি বসাতে প্রকৌশলী সুমন চেয়েছিলেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। কিন’ একই অফিসের আরেক কর্মকর্তা কাজটি করে একটি টাকাও নেননি। এতে চরম গাত্র হয়েছিল সুমন সর্দারের। তিনি আমাকে বলেই ফেলেছিলেন আমার কাছে না এসে ওইখানে যাচ্ছেন। তবে একদিন আসতে হবে। সেই ব্যবস’া আমি করব। ব্যবস’া তিনি করেছেন। আমার সাব মিটারকে ডাইরেক্ট বলে জরিমানার ফাঁদে ফেলে প্রতিশোধ নিয়েছেন। প্রথমে জরিমানা কোটি টাকা শুনিয়েছেন। পরে ৫২ থেকে ৫০ লাখ। এরপর ২৫ লাখ। দুই প্রকৗশলীই বলেছিলেন ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করবেন। সুন্দর কথা বলে ১ লাখ টাকা ঘুষ নিলেন আতিক উল্লাহ। এই টাকাটা কোন খাতে জমা হবে? কৌশলে ছাপিয়ে দেয়া এই বিল পরিশোধ করতে আমাকে সাজানো মাদরাসার জায়গা বিক্রি করতে হয়েছে। এর বিচার আল্লাহই করবেন। কালীকচ্ছে শাহজাহান নামের এক ব্যক্তিকে ৩ কোটি টাকা জরিমানার কথা ঘোষণা দিয়ে শেষমেষ অজানা কারণে জরিমানা করেছেন ৪ লক্ষাধিক টাকা। এই প্রকৌশলীরা এখন এমন খেলা খেলছেন অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের গ্যারেজের লাইন কেটে। এ বিষয়ে জানতে উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. আতিক উল্লাহ (০১৭৮৭-৫৬২৩৯৩) ও সুমন হোসেন সর্দারের (০১৬৭৭-২৩৮৮৫৮) মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আব্দুর রউফ বলেন, গ্রাহকের অভিযোগ সঠিক নয়। থ্রি ফেউজ মিটার থেকে সাব-মিটার দিতে পারতেন। তা না করে বাইপাস করেছেন। আতিক উল্লাহ ও সুমনের ৫ লাখ টাকা চাওয়া বা ১ লাখ টাকা নেয়ার বিষয় আমার জানা নেই। ১০ বছর ধরে পিডিবি’র লোকজন দেখলেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেখানে দুটি কার্ড মিটার আছে। লোকজন কার্ড মিটার দেখেই ঠিক থাকায় চলে আসত। গোপন বাইবাস চোখে ধরা পড়েনি।