সৌদীতে গৃহপরিচারিকা বাংলাদেশের সুরমার বাঁচার আকুতি

- আপডেট সময় : ০৭:৩৫:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ২৩২ বার পড়া হয়েছে
সৌদী আরবে বাসা বাড়ির কাজে অনেক টাকা বেতন। আমি লোক পাঠায়। সামান্য কিছু খরচ লাগবে। মাসে আয় হবে অনেক টাকা। অভাব থাকবে না। দালাল অহেদ মিয়ার এমন সব প্রলোভনের ফাঁদে পা দেয় দরিদ্র পরিবারের অবিবাহিত যুবতি মেয়ে সুরমা (২৫)। ২০১৮ সালের শেষের দিকে অহেদ ৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে। সুরমার পরিবার ২ হাজার টাকা দেয়। ঢাকার এক ট্রাভেলস্ এর মাধ্যমে অহেদ মিয়া সুরমাকে সৌদী আরবে বাসাবাড়ির কাজে পাঠায়। সুরমার পাসপোর্ট নম্বর-ইএ ০০২৫৫২৮। আল-কাশিম জেলার আল-আরতাওয়াইয়া থানার আল সাভা গ্রামের আবদুল হামিদ চেপ মোতাইয়েরী বাড়িতে কাজের নামে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে সুরমা। অহেদ ও সুরমাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নুরপুর এলাকায়। সুরমার মা হোসনা বেগম ও তার স্বজনরা জানায়, সুরমার প্রকৃত বয়স হবে ১৫-১৬ বছর। দালালসহ সকলে মিলে বয়স বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন করে সৌদীতে পাঠিয়েছে। সুরমাকে নেওয়ার সময় অহেদ মাসিক বেতন ১৮ হাজার টাকা বলেছিল। ৭ মাস পর মালিক মাত্র ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল সুরমার বাবার ব্যাংক হিসাবে । গত দেড়/দুই বছর ধরে সুরমাকে আর বেতন দিচ্ছেন না মালিক। উল্টো ওই যুবতির উপর অনেক কাজ চাপিয়ে দিচ্ছেন গৃহকর্তী। না করলে চলছে নির্যাতন। খুবই কষ্টে আছে সুরমা। দিনরাত তিন বাসায় কাজ করতে হচ্ছে। দেশে আসার কথা বললেও তার উপর চলে শাররীক নির্যাতন। অনেক দিন হয়ে গেছে এখন আর টাকা পাঠায় না। সেখানকার মালিক মহিলা। বাসায় একজন বৃদ্ধ লোকও আছেন। ওই মহিলার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। মালিকের মেয়ে ও বোনের বাসায়ও সুরমাকে কাজ করতে হয়। তিন বাসায় কাজ করে পেরেশান সুরমা। আর কুলিয়ে ওঠতে পারছে না। শাররীক কষ্ট ও যন্ত্রণায় সর্বদাই ছটফট করছে। এরপরও টাকা দিচ্ছে না। মা বাবা সহ পরিবারের কারো সাথে সুরমাকে মুঠোফোনে কথা বলতে দিচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে গোপনে অন্যের ফোন থেকে সুরমা মা সহ অন্যদের সাথে কথা বলে। সুরমার মা হোসনা বেগম জানায় মুঠোফোনে সুরমার আকুতি-‘ মা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে তোমরা কেমনে নিবা তাড়াতাড়ি নেও।’ কন্যা সন্তানের এমন আকুতিতে হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে মা হোসনার। দালাল অহেদের কাছে বারবার ধরণা দিচ্ছেন। কিন’ অহেদ কোন গুরূত্বই দিচ্ছে না। বিভিন্ন কায়দা কৌশল করে কালক্ষেপন করছে অহেদ। স’ানীয় সালিসকারক, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানিয়েছেন সুরমার পরিবার। সুরমাকে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থাই হচ্ছে না। আর দালাল অহেদ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ৩-৪ বার ঢাকায় নিয়েছেন। কিন’ সুরমাকে ফেরত আনার ব্যবস্থা হয়নি। সুরমার মা হোসনা বেগম বলেন, ফ্রিতে তো কেউ বিদেশ নিতে পারে না। অহেদ আমার মেয়েকে কি বিক্রি করে দিল কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। এতদিন ঘুরিয়ে অহেদ এখন বলছে আর ২-৩ মাস সময় দাও। একটা ব্যবস্থা করে দিব। অভিযুক্ত অহেদ মিয়া সুরমাকে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদী আরবে বাসা বাড়ির কাজে পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেন, সুরমার মা বাবার সম্মতিতেই পাঠিয়েছিলাম। বেতন দেয়। তবে কম। জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে দেওয়ায় পাঠাতে পেরেছি। নতুবা সম্ভব হত না। আমার কি দোষ? সুরমাকে দেশে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। মাস খানেক পরে নিয়ে আসতে পারব। গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন বলেন, এ ঘটনাটি আমার ভালভাবে জানা নেই। তবে শুধু সুরমা কেন? কোন মেয়ে বা মহিলাকে বিদেশ পাঠানো উচিত না। এ ঘটনায় যে কোন সহযোগিতা দিতে আমি প্রস’ত আছি।
মাহবুব খান বাবুল