কথার আগে চড়, ঘুসি, লাথি, অশালিন গালমন্দ করা যার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শিবির থেকে আসা নাম তার শফিকুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে ইসলামী ছাত্র শিবীর থেকে ছাত্রলীগে যোগ দেন। পরের বছরই পেয়ে যান কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। ক্ষমতার দাপটে চুন থেকে পান খসলেই দলীয় প্রতিপক্ষের গায়ে হাত দিতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেন না এই নেতা। ১৯৯৯ সালে কসবা টেম্পু স্টেশনে হামলা চালিয়ে অনেক টেম্পু ও বেবি ট্যাক্সী ভাংচুর করেন। ফলে শফিক ও তার সাঙ্গপাংগদের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। দীর্ঘদিন হাজত খাটেন। পরে আপোষরফা করে রক্ষা পান। তবে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়ে ছিলেন শফিক। এযাবত ২৮ টি মামলা ও সাধারণ ডাইরি হয়েছে শফিকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৪টি মামলাই জননিরাপত্তা ও দ্রুতবিচার আইনে। বর্তমানে ৬টি মামলা চলমান আছে। মহিলাদের মারধোর করতেও তিনি এগিয়ে আছেন। নারীশিশু নির্যাতন দমন আইনেও মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকায় চোরাকারবারী ভূমি দস্যু, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ ছাপালেও সাংবাদিকদের প্রাননাশের হুমকী দেন শফিক বাহিনী। সমকাল প্রতিনিধি কসবা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সোলেমান খান, আমার সংবাদ প্রতিনিধি ভজন শংকর আচার্যকেও প্রাননাশের হুমকী দিয়েছেন শফিক। থানায় জিডি ও মানবন্ধন করেছেন কসবার সাংবাদিকরা। অপরাধ পত্র সম্পাদক ও মোহনা টিভি প্রতিনিধি খ.ম হারুনুর রশীদ ঢালীকেও হুমকী দিয়েছেন শফিক। থানায় জিডি করেছেন ঢালী। অভিযোগ রয়েছে ২০১১ সালে টাকার বিনিময়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শফিক। যুবলীগ কমিটি নিয়েই ওই সময় আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। এই কমিটিকে কেন্দ্র করেই সাবেক এমপি কসবার রাজনীতি থেকে শটকে পড়েন। বর্তমান এমপি আনিসুল হকের সুযোগ আসে। ১১ বছর যাবত যুবলীগের সম্মেলন হয়নি। তিনি কসবা পুরান বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বাজারে নানা প্রকার অবৈধ কাজ যেমন; সরকারী জায়গায় দোকান করা, খাস জায়গা দখল, ফুটপাতে দোকান বিক্রীসহ দোকানীদের গায়ে হাত তোলা তার সাধারন ব্যাপার। তার অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে গত বছর পৌর নির্বাচনে তার ভাই জাহাংগীর নির্বাচনে ৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিপুল ভোটে পরজয় বরন করতে হয় ছাত্রলীগের আলাল নামক এক কর্মীর সাথে। কসবা মহিলা মাদ্রাসায় বিএনপির লোকদের দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য পদে প্যানেল দিয়েছিল শফিক। তার প্যানেলের ৫ জন প্রার্থীই বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরন করে। গত বছর জলাশয় ভরাট করার দায়ে ভুমি অফিস পরিবেশ সংরক্ষন আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। শফিক আওয়ামী যুবলীগ করলেও বিএনপি-জামাতের সংগেই তার সখ্যতা। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সংগে তার বিরোধ লেগেই আছে। ২৮ টি মামলা ও জিডির মধ্যে সবকটিই আওয়ামীলীগের লোকজনের দায়েরকৃত। মাত্র ২ টি জিডি আছে বাদী দুজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিক। কসবা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৩১ মার্চ। জানা যায় শফিক আবার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।কসবার আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও স্থানীয় জনগনের ধারনা তাকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হলে পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের ধস নামবে। কারন বরাবরই তিনি বিএনপি-জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। শফিক পেশাগত ভাবে গোপীনাথপুর শাহ আলম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক শিক্ষক। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কলেজে না গিয়েই বেতন নিচ্ছেন। কলেজের অধ্যক্ষ ভয়ে মুখ খোলেন না। তার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার আপন ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন কসবা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন-আহবায়ক। বর্তমানে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী। তার ঘরে কেউ বিএনপি কেউ জাপা আবার কেউ জামাত। আবার শফিক আওয়ামী লীগ করেন। দেহটা আওয়ামী লীগের হলেও তার আত্নাটা বিএনপি জামাতে। এদিকে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মন্ত্রীর দেয়া এক ট্রাক ত্রাণ চুরি করে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান ওই ত্রান উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে শফিককে ফোনে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা আট ভাই, সাত জনই আওয়ামী লীগের সব মিটিং মিছিলে অংশ নেয় এবং দলের সাথে সম্পৃক্ত আর সবার ছোট ভাই সাদ্দাম, তাকে কিছু বিএনপির লোক ফুসলিয়ে ঐপথে নিয়ে গেছে তাই আমাদের সাত ভাইয়ের সংগে তার কোন সম্পর্ক নেই।’
এ আই আকঞ্জি