মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকে:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ২৪ হেক্টরেরও অধিক ইরিবোরো ধানের জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অফিস বলছেন পোকা মাকড় জীবাণুর আক্রমন বা ব্লাস্ট রোগ। কৃষকরা বলছেন অজানা রোগ দেখা দিয়েছে। আবার কেউ বলছেন গায়েবি রোগ। ধানে চাল আসার আগেই ছড়া গুলো জ্বলে পোড়ে লালচে হয়ে ঝড়ে নীচে পড়ছে। কোথাও সাদা পাওডারের মত হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার জয়ধরকান্দি, দেওড়া, মলাইশ, নিয়ামতপুর, ধাউরিয়া, চুন্টা, বিটঘর গ্রামের ফসলি মাঠে ও কালিকচ্ছের ধর্মতীর্থ এলাকায় আকাশী হাওরের বিলের বি আর-২৮ ধানের জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এখানকার সহস্রাধিক কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাজ পড়েছে। জমির আইলে দাঁড়িয়ে অনেক কৃষক হ্যাঁ হুতাশ করছেন। মনের দু:খে অনেক কৃষক কাঁচা জমিই কাটতে শুরূ করেছেন। অযথা টাকা খরচ করে ধান কাটতে নারাজ অনেক কৃষক। কৃষকরা খাবার সংকটের শঙ্কায় পড়ে গেছেন। গোটা উপজেলায় এর প্রভাব পড়ার কথা ভাবছেন অনেকেই।
উপজেলা কৃষি অফিস ও সরজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরাইল উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ইরিবোরো ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২৪ হেক্টর জমি। তবে কৃষকদের দেয়া তথ্য মতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫-৪০ হেক্টর জমির ধান। অধিকাংশ এলাকায় বিআর-২৮ জাতের ধানের জমি গুলো আক্রান্ত হয়েছে। এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের নিরূৎসাহিত করে কৃষি অফিস। কারণ এগুলো অনেক পুরাতন মডেল। তাই ২৮ জাতের ধানে দ্রূত পোকা মাকড় ও জীবাণু আক্রমন করে ক্ষতি করে থাকে। এর পরিবর্তে নতুন উন্নত জাতের ধান এখন বিআর-৮৮, ৮৯ জাত। জয়ধরকান্দি গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া (৪০) ও ইমরান মিয়া (৩৫) বলেন, বিঘা প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করেছি। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধানে এখনো চাল হয়নি। এরই মধ্যে ছড়া লাল বা সাদা রং ধারণ করে নীচ দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। আবার সাদা পাউডারের মত হয়ে পড়ছে। এই এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি আক্রান্ত হয়েছে। কেটে আনলে হাঁস মোরগের খাবার হবে। গ্রামের দোকানদার থেকে ১০ কেজি ওজনের বীজ ধানের প্যাকেট ৬-৭ শত টাকা দিয়ে ক্রয় করেছিলাম। প্যাকেটের উপরে লেখা ছিল ‘কুমিল্লা’ও ‘চুয়াডাঙ্গা’। ধান নেই তারপরও এক কানি জমি কাটতে ৩৬ শত টাকা লাগে। এবার কী খেয়ে বাচব জানি না। দেওড়া গ্রামের কৃষক মো. জয়নাল মিয়া, ধাউরিয়া গ্রামের কৃষক ক্ষিরোদ মজুমদার, লিল মহন সরকার, নিরঞ্জন সরকার, জগদিশ সরকার বলেন, আমাদের এখানে প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা জমি শেষ। এখন কেটে গরূকে খাওয়ানো হচ্ছে। খুব কষ্ট করে টাকা খরচ করেছি। ঋণ পরিশোধ করব কিভাবে? আগামীতে খাব কী? পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার রাস্তা খুঁজছি। চুন্টার কৃষক মারফত আলী, জজ মিয়া, মুসা মিয়া ও রহিম মিয়া বলেন, এখানে প্রায় শতাধিক বিঘা জমির ধান শেষ। বড় ধরণের ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেলাম। খেয়ে বাঁচাই দায়। ধর্মতীর্থ ও নোয়াগাঁও এলাকার একাধিক কৃষক জানান, আকাশি বিলে ও হাওরে প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এবার কৃষকদের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামের কৃষক আমিনুল হক জানান, বিআর ২৮ ধানের ছড়াতে চাল হয়নি। কাটারিভোগ জাতের কিছু ধানেও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শাহবাজপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠে ও শাহজাদাপুর গ্রামের মাঠেও অনেক জমি আক্রান্ত হয়েছে। কালিকচ্ছ বাজারের ‘কৃষকবন্ধু’ দোকানের মালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় কৃষকরা লাইন ধরে পোকা মাকড় ধ্বংস ও আগাছা নাশক ঔষধ ক্রয় করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরাম হোসেন ২৮-২৯ জাতের ধানের জমি গুলো আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক পুরাতন হওয়ায় প্রকৃতিগত ভাবেই এই জাতের ধানে জীবাণু আক্রমন করে থাকে। এই ধান চাষে আমরা কৃষকদের নিরূৎসাহিত করে থাকি। লেটেস্ট ও ভাল বীজ হচ্ছে ৮৮, ৮৯ জাতের ধান। আমরা প্রণোদনায়ও আধুনিক বীজ দিয়ে থাকি। যে গুলি নষ্ট হয়ে গেছে সেই গুলি ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা নেই। ভাল জমি গুলোতে আগাছা নাশক ঔষধ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে বৃষ্টি হলে ঔষধ কাজ করবে না।