সরাইলে ২২ বছর পর নৌকা! ৩ সদস্যের আওয়ামী লীগ পারবে তো?

- আপডেট সময় : ০৫:১৬:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩৩ বার পড়া হয়েছে
মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
দীর্ঘ ২২ বছরেরও অধিক সময় পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থকরা নৌকার দেখা পেয়েছেন। মাঝে দলীয় সিদ্ধান্তে জোট মহাজোট আর কলার ছড়ার পিছনে ছুঁটেছেন তারা । তাই নৌকা পেয়ে খুবই উৎফুল্ল দলটির সাধারণ কর্মীরা। প্রতীক ঘোষণার পরই তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন। রাতের বেলায়ই মিছিল করেছেন। করেছেন পথ সভাও। মিষ্টি বিতরণ করেছেন। অত্যন্ত ঝাঁকঝমকপূর্ণ ভাবে বর্ণাঢ্য মিছিল ও শো ডাউন করে প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজুকে নিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে জমা দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। নৌকার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ওঠান বৈঠক করছেন। ভোট চাচ্ছেন। তারপরও কর্মী সমর্থকদের জিজ্ঞাসা তিন সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগ কী পারবে নৌকাকে লক্ষে পৌঁছাতে? মনে কষ্ট নিয়ে ঘুরছেন ঘোষণার দেড় বছর পরও অনুমোদন বিহীন ইউনিয়ন কমিটির নেতারা। উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তো বলেই ফেললেন,‘সভাপতি ও সম্পাদকের সমন্বয়হীনতার কারণেই এক বছরও অনুমোদন হচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি।’
সরজমিনে দলীয় ও তৃণমূল সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের পর থেকেই এই আসনে নৌকার বেহাল দশা। শুরূ থেকেই এই আসনের লবিং গ্রূপিং দ্বন্ধ যেন কোন ভাবেই পিছু ছাড়ছে না। একজন মনোনয়ন পেলে দলের অন্য নেতারা বিরূধীতায় আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে এই আসনে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর। এর ১৭ বছর পর এখানে নৌকা প্রতীক পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন মেজর (অব:) জহিরূল ইসলাম। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল হালিম। এই দুইজন প্রার্থী পরাজিত হওয়ার পেছনের কারণ ছিল নিজ দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের কৌশলী বিরূধীতা। আর তখন থেকেই শুরূ হয় সরাইল আওয়ামী লীগের লবিং গ্রূপিং দ্বন্ধ। এই দ্বন্দ্ব এখানকার আওয়ামী লীগকে অনেক পেছনে ঠেলে দেয়।
সেখান থেকে আর ওঠে আসতে পারেনি দলটি। গ্রূপিং দ্বন্দ্বে এখনো জ্বলছে এখানকার আওয়ামী লীগ। ফলে দীর্ঘ ২২ বছরের মধ্যে এই আসনে আর নৌকার প্রার্থীর দেখা মিলেনি। মাঝখানে এখানকার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন মহাজোটের প্রার্থী তৎকালীন জাপা নেতা এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (লাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার (কলারছড়া) নির্বাচনে। ওই দুই প্রার্থী জয়লাভও করেছিলেন। পানিশ্বর ইউপি আ’লীগের সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, যথাসময়ে অনুমোদন হলে কমিটির ৭১টি লোকই মাঠে সমান ভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করতেন। মনের কষ্টে অনেকেই পিছিয়ে থাকেন। এটা নির্বাচনের জন্য অবশ্যই ক্ষতি। অরূয়াইল ইউপি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গাজী শফিকুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য উপজেলায় জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু অনুমাদন হয়নি আদৌ।
কমিটির তালিকার কিছু লোকজন প্রায়ই অনুমোদনযুক্ত তালিকা দেখতে চান। আমরা দেখাতে পারি না। এটা একটা সমস্যা। শাহজাদাপুর ইউপি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফুর রহমান বলেন, কমিটির অনুমোদন না থাকায় নৌকার পক্ষে কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। লোকজন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বছর দিন আগে কমিটি জমা দিলাম। উপজেলার প্রতিটি সভায় বলি। উনারা শুধু বলে হয়ে যাবে। আসলে তো হচ্ছে না। আর দলীয় গ্রূপিং স্থানীয় আওয়ামী লীগকে ভীষণ ক্ষতি করছে।
সরাইল উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজ আলী বলেন, আংশিক লোকের সমর্থনে উপজেলা আ’লীগের আংশিক কমিটির বয়স এক বছর। কিন্তু তাদের কোন কার্যক্রম নেই। প্রত্যেক ইউনিয়নে ত্যাগী নেতারা কমিটিতে আসতে পারেনি। এই অবস্থায় দলের যেকোন নির্বাচনের জন্যই সমস্যা। এবার আমরা সাবেক নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করছি। জয় হবে ইনশাল্লাহ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, আড়াই সদস্যের উপজেলা আর অনুমোদন বিহীন ইউপি কমিটি নির্বাচনে ভাল প্রভাব ফেলবে। এক/দেড় বছর পরও কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ। তারা আগ্রহের সাথে কাজ করতে চাইবে না।
কারণ তাদের দায়িত্বের কোন জবাবদিহিতা নেই। আমরা কাজ করছি। ইনশাল্লাহ নৌকা জয়লাভ করবে। দু:খ হয় যখন অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কোন লোককে ভোটের মাঠে দূর্বীন দিয়েও খোঁজে পায় না। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের (আংশিক কমিটি) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ঠাকুর রাব্বি ইউনিয়ন ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের দায় নিজেদের উপর নিয়ে বলেন, জেলা কমিটির যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকার পরও এখানকার সভাপতি সম্পাদকের সমন্বয়হীনতার কারণে উপজেলা কমিটির অনুমোদন ঝুলে আছে এক বছর ধরে। এর প্রভাব চলমান উপনির্বাচনে অবশ্যই পড়বে। তবে নৌকার পক্ষে কাজে সমস্যা হলেও ভোটের ক্ষতি হবে না। আর দলীয় গ্রূপিং যে দলটিকে ক্ষতি করছে এটা শতভাগ সত্য।