মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও টানা তিন বার সদর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে গঠিত দলীয় কর্মকান্ডে ব্যর্থ অযোগ্য অদক্ষ লোকদের দ্বারা ঘোষিত সরাইল উপজেলা আ’লীগের আংশিক কমিটি মানি না। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করলাম। আমাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করেছেন কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা। মাঠে দীর্ঘদিনের শ্রম ঘাম জড়ানো মুক্তিযোদ্ধা ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে রাজাকার ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরের ঘনিষ্ট জনদের কমিটিতে এনেছেন। এটা আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করার নীল নকশা। আজ রবিবার বিকালে প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপথিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তিন বার নির্বাচিত কমান্ডার (বর্তমানে সাবেক) ও আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমত আলী, যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহফুজ আলী প্রমূখ। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ইকবাল আজাদ কান্ড একটি জঘণ্য অপরাধ। কিন্তু আমাদেরকে ওই মামলায় ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আসামী করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে আমরা কখনো জড়িত ছিলাম না। মিথ্যাকে পুঁজি করে আমাদের হয়রানি ও বড় ধরণের ক্ষতি করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আ’লীগকে ধ্বংস করার জন্য এ মামলায় আসামী করা হয়েছে ১৯৯৬ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নৌকার টিকেট পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও উপজেলা আ’লীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল হালিমকে (প্রয়াত), বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ছাদেক মিয়াকে (প্রয়াত), সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেনকে, প্রবীন আ’লীগ নেতা ও সরাইল সদরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলীকে, দুইবার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুরকে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজারকে। সরাইল আ’লীগের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন জেলা আ’লীগ। এরপরই স’বির হয়ে পড়ে সরাইল আ’লীগ। ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রাণের সংগঠন আ’লীগ করে আসছি। এখন এই মামলাকে পুঁজি করেই আমাদেরকে দল থেকে সরানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে কতিপয় ব্যক্তি। আমরা আ’লীগকে বুকে ধারণ করে দলীয় সকল কর্মসূচি পালন করে আসছি। ইকবাল আজাদ হত্যার পর ৯০ দিনের জন্য একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি পাড় করে ৮ বছর। ৯টির মধ্যে তারা ৩টি ইউনিয়ন কমিটি করেছিল। এই কমিটির ব্যর্থতায় দূর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে সরাইল আ’লীগ। ফলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়। হেফাজতের তান্ডবের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং পরে হেফাজত কর্মীদের রক্ষার অভিযোগ আছে তাদের বিরূদ্ধে। ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার সম্মেলন ঘোষণার পর দ্রূত তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি করেন। বিএনপি’র নেতাকে দিয়ে বসেন আ’লীগের পদ। রহস্যজনক কারণে রাজাকারের উত্তরসূরিদের দেয়া হয়েছে দায়িত্বশীল পদ। কোথাও কোন কমিটিতে স্থান দেননি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রতিবাদে একাধিক স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। অনেকে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। শাহবাজপুর পানিশ্বরে ভোট হলেও অন্য সব ইউনিয়নে নিজের মত করে কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। না পারলে জেলা শহরে গিয়ে পত্রিকায় কমিটি প্রকাশ করেছেন। কাউন্সিলের আগের দিন পর্যন্ত ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি। সম্মেলনে প্রার্থীদের তালিকাও নেয়া হয়নি। ১৪ তারিখের সম্মেলনে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চট্রগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু ছাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি’র ‘চার্জশীটভুক্ত আসামীরা কমিটিতে থাকতে পারবে না।’ এ বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে তারা বলেন, সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল হক হত্যা মামলার আসামী। অরূয়াইলের সাধারণ সম্পাদক একাধিক খুনের মামলার আসামী ও পাকশিমুল ইউপি আ’লীগের সভাপতির বিরূদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। আমরা সাজাপ্রাপ্ত আসামী নয়। তাহলে আমরা পারব না কেন? আ’লীগের গঠনতন্ত্রের কোথাও এই ধরণের বিধিবিধান নেই। কেন্দ্র এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের কোন পত্র দেয়নি। সম্মেলন স্থলে কমিটি ঘোষণা না দিয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে গিয়ে ১০-১৫ জনের সামনে তিন জনের নাম ঘোষণা দিলেন। এটা কোন গণতান্ত্রিক পক্রিয়া? তাই তৃণমূল আ’লীগকে শক্তিশালী করতে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে ঘোষিত অবৈধ কমিটি বাতিল করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরাইল উপজেলা আ’লীগের কমিটি করার জোর দাবী করছি। সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী বলেন, ৯টি ইউনিয়নের কোথাও মুক্তিযোদ্ধা বা সন্তানকে কমিটিতে স্থান দেয়নি। এই আহবায়ক কমিটি কোন নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছেন? কেন উনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বারবার অপমান করছেন? এ জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। আমি মনে করি সরাইলে আ’লীগকে ধ্বংস করা খেলা খেলছেন নাজমুল গংরা। তাদের ঘোষিত মনগড়া কমিটি আমরা মানি না।