মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশে নোয়াগাঁও কালীকচ্ছ মৌজায় হাওরে রয়েছে সরকারী জায়গায় গৌচারণ ভূমি। রয়েছে বেশ কয়েকটি বাতানও। বাতানে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে ধান বন শুকায় কৃষকরা। বেকু দিয়ে কেটে ওই জায়গা গুলির মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় এক শ্রেণির লোকজন। তারা কাটছেন ফসলি জমির মাটিও। রাতের আধাঁরে ১৫-২০ টি অত্যাধুনিক ট্রাক দিয়ে সরাইলের এই মাটি নিয়ে যাচ্ছেন আশুগঞ্জ উপজেলায়। ইটভাটা বসতবাড়ি পুকুর ভরাট ও সড়কে নিচ্ছেন এখানকার মাটি। ইউএনও বলেন, সরাইলের মাটি আশুগঞ্জে যাচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। ফসলি জমির টপসয়েল কাটার কোন বিধান নেই।
সরজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় কৃষক সূত্র জানায়, গত শনিবার রাত ১০ টা। সড়কের পাশের হাওরে বাতি জ্বলছে। ৩-৪ টি বেকু মাটি কাটছে। দ্রূততম সময়ের মধ্যে লোড করছেন অত্যাধুনিক (ডাম্পিং) ট্রাক। মাটি নিয়ে হাওর থেকে একসাথে সড়কে ওঠছে ৩-৪ টি ট্রাক। চালক আলমগীর (ট্রাক নং-ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৬৯৭৮) ও জুনায়েদ (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৬৩৯০) বলেন, ফসলি জমির মাটি আশুগঞ্জের তালশহরে ইটভাটায় নিচ্ছি। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৩ টা-৪ টা পর্যন্ত মাটি বহন করি। ঘন্টায় দেড়শত টাকা পায়। এখানে মাটির ঠিকাদার উসমান মিয়া, আওয়াল ও কবিরসহ কয়েকজন। উনারা মাটি বিক্রি করছেন। আমাদের কাছে কোন কাগজপত্র নেই। দিনে সড়কে জ্যামের কারণে রাতে মাটি টানছি। চালক শিবলু (ট্রাক নং- যশোর-ট-১১-৫৪৭৩) বলেন, সড়কের ফোরলেনের কাজে মাটি আশুগঞ্জ যাচ্ছে। আমরা কোম্পনীর কাজ করছি। এখানকার স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার মাটি বিক্রি করছেন। রাজন (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৭৮৯৩) ও রূবেল (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-২৪-৪৫৯৭) বলেন, আশুগঞ্জের তালশহরে বাড়ির ভিটা ভরাটের জন্য মাটি নিচ্ছেন। অনেকে পুকুরও ভরাট করছেন। সারা রাতই মাটি টানি। কাগজপত্রের কথা আমরা বলতে পারব না। স্থানীয় একাধিক কৃষক বলেন, স্থানীয় কিছু লোক দীর্ঘদিন ধরে গোচারণ ভূমির মাটি করছেন। এ গুলি নাকি সরকারী জায়গা তাই কেউ বাধাঁ দেন না। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। মাঠে গরূর ঘাস খাওয়ার জায়গা ধ্বংস হচ্ছে। বৈশাখ মাসে বাতান (আঞ্চলিক ভাষা) বানিয়ে এখানে ধান ছুরি। রোদে দিয়ে ধান শুকায়। বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। বাতান গুলোও কেটে গর্ত করছেন। ফলে আগামীতে আমরা ধান নিয়ে বিপাকে পড়ব। অগণিত ফসলি জমির মাটিও কেটে নিচ্ছেন। এতে করে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। জনৈক পথচারী বলেন, রাতের বেলা ওই ট্রাক গুলো থেকে মাটি সড়কে পড়ে। এটেল মাটি হওয়ায় কূঁয়াশায় পিচ্ছিল হয়। যান ও মানুষের চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় দূর্ঘটনাও ঘটছে। আওয়াল মিয়া ফসলি জমির মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, জমির মূল মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়ন মিয়া। আমরা তদারকি করছি। তিনি জমি কেটে পুকুর করছেন। তাই সড়কের কাজে ইন্ডিয়ান কোম্পানীর কাছে মাটি বিক্রি করছেন। আমরা ইটভাটায় মাটি দেয় না।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, সরাইলের মাটি আশুগঞ্জে নেয়ার কোন অনুমতি আমি দেইনি। আমাকেও কেউ জানায়নি। ফসলি জমির টপসয়েল কাটা বেআইনি। সরকারী জায়গার মাটিও কেউ কাটার অধিকার রাখেন না। আমি বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিব।