Dhaka 8:37 am, Saturday, 27 July 2024
News Title :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ভারতের আবৃত্তি সংস্থা শ্রুতির শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা নবীনগরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তরী বাংলাদেশ বিজয়নগর উপজেলা আহবায়ক কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ১৮ সদস্যকে সংবর্ধণা প্রদান মেসার্স সরকার কনস্ট্রাকশনে একজনকে নিয়োগ দেয়া হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সরাইলে ৭০ লক্ষাধিক টাকা কর আদায় ৩ কর্মকর্তাকে অভিনন্দন স্মারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ল্যাপটপ প্রদান গুজবরোধে সাইবার আইন কাজে লাগানো বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা জানালেন নেদারল্যান্ডের উপ-রাষ্ট্রদূত

সরাইলে ব্যক্তি উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ সহস্রাধিক কৃষকের দূর্ভোগ লাঘব!

  • Reporter Name
  • Update Time : 02:52:14 pm, Tuesday, 20 February 2024
  • 68 Time View

সরাইলে ব্যক্তি উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ সহস্রাধিক কৃষকের দূর্ভোগ লাঘব!

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আব্দুল মালেকের উদ্যোগ অর্থায়ন ও কিছু মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে এক কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। শতাধিক বছরের আইল সড়কে পরিণত হওয়ায় দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে সহস্রাধিক কৃষকের। যোগাযোগ সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে ৮-১০ গ্রামের মানুষের। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে দু’পাশে ফসলি মাঠের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে সড়কটি। সরজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িউড়া-কালিকচ্ছ সড়কের কাটানিশার গ্রাম থেকে ফসলি মাঠের মাঝ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার আইল পূর্বপাড়ায় শেষ হয়েছে। শতাধিক বছর ধরে ওই আইল দিয়েই দূর্ভোগে চলছে সেখানকার ৮-১০ গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি এই কষ্ট ও দূর্ভোগের কথা গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক আব্দুল মালেককে জানান তারা। এগিয়ে আসেন মালেক। আচরণ ব্যবহার আর ভালবাসা দিয়ে আইলের দু’পাশের মানুষকে ম্যানেজ করেন। আইলের পাশের গাছ ও ডালপালা কেটে সড়কটির প্রস’ বৃদ্ধি করেন।

গত ৬ মাস আগে থেকেই তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সড়কে মাটি ফেলতে শুরূ করেন। দীর্ঘ চার মাস পরিশ্রমের পর সড়কের অবস্থান ও প্রস্থ দৃশ্যমান হয়। গত দুই মাস ধরে দৈনিক ৬০-৭০ জন শ্রমিক সড়কে মাটি ফেলছেন। শ্রমিকদের মুজুরি দিচ্ছেন মালেক। জেলা শহর থেকে নিজের হোটেলের খাবার এনে শ্রমিক ও গ্রামের লোকজনকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। কোঁদাল হাতে মালেক নিজেও মাটি কেটেছেন নিয়মিত। সড়কটি হচ্ছে দেখে আনন্দে স্বেচ্ছায় মাটি কাটার কাজে অংশ গ্রহন করেন গ্রামের কিছু লোক। তারা কখনো শ্রমিকদের সাথে কখনো সন্ধ্যার পর মাটি কেটেছেন। এখন মনপ্রাণ খুলে হেঁসে খেলে ১২-১৫ প্রসে’র ওই সড়ক দিয়ে হাঁটছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক হোসেন আলী (৫৫), বকুল মিয়া (৬০), মো. বজলু মিয়া (৬৫), মো. মনির (৩৭) ও নূর আলমসহ অনেকেই বলেন, শতাধিক বছর ধরে একটি আইল দিয়ে কৃষি কাজের মালামাল বহন ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। রোগী, নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতেন। পূর্বপাড়ায় ও আইলের পাশের বাড়ির বিয়ে-শাদী সহজে হতো না। মালেক মিয়া এই সড়কটি করে আমাদের শতশত বছরের কষ্ট দূর করলেন। আনন্দে আমরাও স্বেচ্ছায় মাটি কেটেছি। এখন সহজেই কৃষি কাজের মালামাল বহন করা যাবে।

জমির ফসলও সহজে বাড়ি নেয়া যাবে। চেয়ারম্যান মেম্বার এতদিন যা করতে পারেননি। মালেক তা করেছেন। আমরা মালেকের জন্য দোয়া করি। ব্যবসায়ি ও সামজসেবক আব্দুল মালেক বলেন, বৃষ্টির সময় কৃষক, নারী পুরূষ সকলেই জুতা হাতে পা টিপে সড়ক নামের আইল দিয়ে চলার কষ্ট দেখেছি। শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ মানুষদের পড়ে কাপড় নষ্ট হতে দেখেছি। এই সমস্যা গুলো আমাকে বারবার পীড়া দিয়েছে। তাই নিজ থেকেই উদ্যোগ গ্রহন করেছি। নিজ হাতে মাটি কেটেছি। কারণ মানবসেবার চেয়ে বড় কিছু নেই। আমাকে সহযোগিতা করেছেন গ্রামবাসী। সড়কের পাশের ফসলি জমি, মোরগের ফার্ম থেকে মাটি দিয়েছেন। সড়কটি নির্মাণ করতে আমার প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আমার কোন আক্ষেপ নেই। শতাধিক বছর পর গ্রামের কৃষকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ স্বাচ্ছন্দে হাঁটছে হাঁসছে। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে এমন জনহিতকর কাজ অবশ্যই সমাজ/দেশের জন্য আশাব্যাঞ্জক। এমনসব কাজে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করি। তবে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ বা ঝামেলা যেন না হয় সেই দিকেও সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল

fapjunk
© All rights reserved ©
Theme Developed BY XYZ IT SOLUTION

সরাইলে ব্যক্তি উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ সহস্রাধিক কৃষকের দূর্ভোগ লাঘব!

Update Time : 02:52:14 pm, Tuesday, 20 February 2024

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আব্দুল মালেকের উদ্যোগ অর্থায়ন ও কিছু মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে এক কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। শতাধিক বছরের আইল সড়কে পরিণত হওয়ায় দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে সহস্রাধিক কৃষকের। যোগাযোগ সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে ৮-১০ গ্রামের মানুষের। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে দু’পাশে ফসলি মাঠের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে সড়কটি। সরজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িউড়া-কালিকচ্ছ সড়কের কাটানিশার গ্রাম থেকে ফসলি মাঠের মাঝ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার আইল পূর্বপাড়ায় শেষ হয়েছে। শতাধিক বছর ধরে ওই আইল দিয়েই দূর্ভোগে চলছে সেখানকার ৮-১০ গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি এই কষ্ট ও দূর্ভোগের কথা গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক আব্দুল মালেককে জানান তারা। এগিয়ে আসেন মালেক। আচরণ ব্যবহার আর ভালবাসা দিয়ে আইলের দু’পাশের মানুষকে ম্যানেজ করেন। আইলের পাশের গাছ ও ডালপালা কেটে সড়কটির প্রস’ বৃদ্ধি করেন।

গত ৬ মাস আগে থেকেই তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সড়কে মাটি ফেলতে শুরূ করেন। দীর্ঘ চার মাস পরিশ্রমের পর সড়কের অবস্থান ও প্রস্থ দৃশ্যমান হয়। গত দুই মাস ধরে দৈনিক ৬০-৭০ জন শ্রমিক সড়কে মাটি ফেলছেন। শ্রমিকদের মুজুরি দিচ্ছেন মালেক। জেলা শহর থেকে নিজের হোটেলের খাবার এনে শ্রমিক ও গ্রামের লোকজনকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। কোঁদাল হাতে মালেক নিজেও মাটি কেটেছেন নিয়মিত। সড়কটি হচ্ছে দেখে আনন্দে স্বেচ্ছায় মাটি কাটার কাজে অংশ গ্রহন করেন গ্রামের কিছু লোক। তারা কখনো শ্রমিকদের সাথে কখনো সন্ধ্যার পর মাটি কেটেছেন। এখন মনপ্রাণ খুলে হেঁসে খেলে ১২-১৫ প্রসে’র ওই সড়ক দিয়ে হাঁটছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক হোসেন আলী (৫৫), বকুল মিয়া (৬০), মো. বজলু মিয়া (৬৫), মো. মনির (৩৭) ও নূর আলমসহ অনেকেই বলেন, শতাধিক বছর ধরে একটি আইল দিয়ে কৃষি কাজের মালামাল বহন ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। রোগী, নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতেন। পূর্বপাড়ায় ও আইলের পাশের বাড়ির বিয়ে-শাদী সহজে হতো না। মালেক মিয়া এই সড়কটি করে আমাদের শতশত বছরের কষ্ট দূর করলেন। আনন্দে আমরাও স্বেচ্ছায় মাটি কেটেছি। এখন সহজেই কৃষি কাজের মালামাল বহন করা যাবে।

জমির ফসলও সহজে বাড়ি নেয়া যাবে। চেয়ারম্যান মেম্বার এতদিন যা করতে পারেননি। মালেক তা করেছেন। আমরা মালেকের জন্য দোয়া করি। ব্যবসায়ি ও সামজসেবক আব্দুল মালেক বলেন, বৃষ্টির সময় কৃষক, নারী পুরূষ সকলেই জুতা হাতে পা টিপে সড়ক নামের আইল দিয়ে চলার কষ্ট দেখেছি। শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ মানুষদের পড়ে কাপড় নষ্ট হতে দেখেছি। এই সমস্যা গুলো আমাকে বারবার পীড়া দিয়েছে। তাই নিজ থেকেই উদ্যোগ গ্রহন করেছি। নিজ হাতে মাটি কেটেছি। কারণ মানবসেবার চেয়ে বড় কিছু নেই। আমাকে সহযোগিতা করেছেন গ্রামবাসী। সড়কের পাশের ফসলি জমি, মোরগের ফার্ম থেকে মাটি দিয়েছেন। সড়কটি নির্মাণ করতে আমার প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আমার কোন আক্ষেপ নেই। শতাধিক বছর পর গ্রামের কৃষকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ স্বাচ্ছন্দে হাঁটছে হাঁসছে। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে এমন জনহিতকর কাজ অবশ্যই সমাজ/দেশের জন্য আশাব্যাঞ্জক। এমনসব কাজে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করি। তবে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ বা ঝামেলা যেন না হয় সেই দিকেও সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।