Dhaka ১০:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
News Title :
সারাদেশে হিট এলার্ট; চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩ সাহিত্য একাডেমির বৈশাখী উৎসবের চতুর্থ দিনে মুজিবনগর দিবস পালন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এক্স স্কাউট রি-ইউনিয়ন’ আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ সরাইলে চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা সরাইলে ২৩ রোগী পেল ১৮৪০০০ টাকা বাবার সেই চিঠি শুধুই মনে —–আল আমীন শাহীন জমে ওঠেছে সরাইলের ঈদ বাজার‘আলিয়া’ নিয়ে টানাটানি সরাইলে ১৪ কেজি গাঁজাসহ ২ কারবারী গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়ি়য়া জেলা কাজী সমিতির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল

সরাইলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল স্কুল ছাত্রী রূপালী ক্ষুদ্ধ দুই সালিসকারক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৫০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
  • ২৩৫ Time View

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পলিসি ফোরামের সদস্যদের (ডিপিএফ) দিনভর চেষ্টায় সরাইলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপালী (১৪ বছর, ১০ মাস)। বিয়েতে সম্মতি নেই প্রবাসী পাত্র তারেক মিয়ার (২৪) পরিবারের অভিভাবকদের। তারপরও মুঠোফোনে প্রবাসী স্বামীর সাথে ছাত্রীর বিয়ে পড়াতে না পারায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন লোকমান ও আলকাছ নামের দুই সালিসকারক। গতকাল শুক্রবার উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বড়-ইবাড়ি গ্রামে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাল্যবিয়েটি সম্পন্ন করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন ছাত্রীর মা শাহানা বেগম সহ একটি গ্রূপ। মোল্লা বিয়ে। কাজীর নিবন্ধন দুই চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। বাধা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও। তবে আপাতত নয়। কিছুদিন পর অন্যত্র সরিয়ে বাল্যবিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আটছেন এখন ছাত্রীর মা। তারেকের পরিবার, বিদ্যালয় ও স্থানীয়রা জানায়, বড়-ইবাড়ি গ্রামের আলালের বাড়ির এরশাদ মিয়ার মেয়ে রূপালী আক্তার বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। শাখা মানবিক। রোল নম্বর-৫৭। বিদ্যালয়ের নথিপত্রে রূপালীর জন্ম তারিখ-১৫ আগষ্ট ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ। সেই হিসেবে আজ শনিবার পর্যন্ত রূপালীর বয়স ১৪ বছর, ১০ মাস ৩ দিন। অর্থাৎ রূপালী এখনও শিশু। বিয়ে ও সংসার কি জানে না রূপালী। কিন্তু বোঝামুক্ত হতে শিশু রূপালীকে বিয়ে দিতে ওঠে পড়ে লেগেছেন মা বাবা। সুবিধার বিনিময়ে সাথে শক্তির যোগান দিতে লড়ছেন স্থানীয় সালিসকারক লোকমান মিয়া (৪০) ও আলকাছ মিয়া (৫০)। বিয়েটি ঠেকানোর জন্য জোর চেষ্টা করছেন তারেকের বড় ভাই রূক্কু মিয়া (৩৮)। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই রূপালীদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন। তিন বছর ধরে বাহরাইন প্রবাসী পাত্র তারেকের সাথে মুঠোফোনে বিয়ে হবে শিশু রূপালীর। বিষয়টি বুঝতে পারেন মাহবুব খানসহ আরো কয়েকজন ডিপিএফ সদস্য। বাল্যবিয়েটি প্রতিরোধে চেষ্টা করতে থাকেন। চেয়ারম্যান, কাজী, মৌলভীসহ অনেকের সাথেই তারা যোগাযোগ করেন। প্রথমে মোল্লা বিয়ে পড়াতে স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম হাফেজ উসমান গণির কাছে যান। রূপালী প্রাপ্তবয়স্ক নয় বলে চলে যান তিনি। পরে কাজীর দারস্থ হলে তিনিও ফিরিয়ে দেন। বাল্যবিয়ে দেওয়া অপরাধ। জেনে শুনে এমন অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। এমন সব বার্তায় পিছিয়ে যায় রূপালীর মা বাবা সহ সবলেই। তারা আপাতত রূপালীর বিয়ে নয় বলে চুপসে যায়। পরবর্তীতে কিছুদিন পর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে শিশু রূপালীর বিয়ের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করার বিষয়টি চাউর হচ্ছে গোটা ইউনিয়নে। পিতা মাতাহীন তারেকের বড় ভাই রূক্কু মিয়া বলেন, মেয়েটির বয়স হয়নি। এখন বিয়ে হলে অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু আমার প্রবাসী ভাইকে ভুল বুঝিয়ে রূপালীর পরিবারের লোকজন, লোকমান মিয়া ও আলকাছ মিয়া নামের দুই সালিসকারক বাল্যবিয়ে দেওয়ার জন্য লড়ছেন। আমি উপজেলার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানিয়েছি। উনার পরামর্শে ওই নম্বরের ম্যাসেঞ্জারে সকল তথ্য পাঠিয়ে একাধিকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি আর রিসিভ করেননি। লাইন কেটে দিয়েছেন। তবে বাঁধা হয়েছে দাঁড়িয়েছেন পিফরডি প্রকল্পের ডিপিএফ-এর সদস্য মাহবুব খান সহ কয়েকজন। শিশু রূপালীর বিয়েটি বন্ধের জন্য তারা বিভিন্ন লেভেলে চেষ্টা করতে থাকেন। সফল হয়েছেন তারা। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আপাতত চুড়ান্ত ভাবে বাল্যবিয়ে থেকে পিছিয়ে আসেন। বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার দেব বলেন, বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপালীর বয়স ১৫ বছরেরও নীচে। এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। বাল্যবিয়ে কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সালিসকারক লোকমান মিয়া বাল্যবিয়েতে মনেপ্রাণে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ছেলে বিদেশ থেকে মেয়ের সাথে কথা বলে। তারা রাজি। আমাদেরকেও বলে। মেয়ের বয়স কম। তাই আপাতত মোল্লা বিয়েটা পড়ানোর কাজটা শেষ পর্যায়ে ছিল। দুলাল না কে যেন অভিযোগ দিয়ে ঝামেলা করেছে। ছেলে দেশে থাকলে তো আদালত থেকে বয়স ঠিক করে আনতাম। এমন অনেকের বয়স ঠিক করে বিয়ে দিয়েছি। আমিও আইন কম জানি না। চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমার সম্পর্কে জেনে নিয়েন। আবার বাবাও সর্দার ছিল। পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ মিষ্টার বলেন, আমি দফাদার পাঠিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ রাখতে বলেছি। কাজীকেও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিবাহ নিবন্ধন করতে নিষেধ করেছি।

মাহবুব খান বাবুল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

সারাদেশে হিট এলার্ট; চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩

সরাইলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল স্কুল ছাত্রী রূপালী ক্ষুদ্ধ দুই সালিসকারক

Update Time : ০৬:৫০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পলিসি ফোরামের সদস্যদের (ডিপিএফ) দিনভর চেষ্টায় সরাইলে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপালী (১৪ বছর, ১০ মাস)। বিয়েতে সম্মতি নেই প্রবাসী পাত্র তারেক মিয়ার (২৪) পরিবারের অভিভাবকদের। তারপরও মুঠোফোনে প্রবাসী স্বামীর সাথে ছাত্রীর বিয়ে পড়াতে না পারায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন লোকমান ও আলকাছ নামের দুই সালিসকারক। গতকাল শুক্রবার উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বড়-ইবাড়ি গ্রামে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাল্যবিয়েটি সম্পন্ন করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন ছাত্রীর মা শাহানা বেগম সহ একটি গ্রূপ। মোল্লা বিয়ে। কাজীর নিবন্ধন দুই চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। বাধা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও। তবে আপাতত নয়। কিছুদিন পর অন্যত্র সরিয়ে বাল্যবিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আটছেন এখন ছাত্রীর মা। তারেকের পরিবার, বিদ্যালয় ও স্থানীয়রা জানায়, বড়-ইবাড়ি গ্রামের আলালের বাড়ির এরশাদ মিয়ার মেয়ে রূপালী আক্তার বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। শাখা মানবিক। রোল নম্বর-৫৭। বিদ্যালয়ের নথিপত্রে রূপালীর জন্ম তারিখ-১৫ আগষ্ট ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ। সেই হিসেবে আজ শনিবার পর্যন্ত রূপালীর বয়স ১৪ বছর, ১০ মাস ৩ দিন। অর্থাৎ রূপালী এখনও শিশু। বিয়ে ও সংসার কি জানে না রূপালী। কিন্তু বোঝামুক্ত হতে শিশু রূপালীকে বিয়ে দিতে ওঠে পড়ে লেগেছেন মা বাবা। সুবিধার বিনিময়ে সাথে শক্তির যোগান দিতে লড়ছেন স্থানীয় সালিসকারক লোকমান মিয়া (৪০) ও আলকাছ মিয়া (৫০)। বিয়েটি ঠেকানোর জন্য জোর চেষ্টা করছেন তারেকের বড় ভাই রূক্কু মিয়া (৩৮)। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই রূপালীদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন। তিন বছর ধরে বাহরাইন প্রবাসী পাত্র তারেকের সাথে মুঠোফোনে বিয়ে হবে শিশু রূপালীর। বিষয়টি বুঝতে পারেন মাহবুব খানসহ আরো কয়েকজন ডিপিএফ সদস্য। বাল্যবিয়েটি প্রতিরোধে চেষ্টা করতে থাকেন। চেয়ারম্যান, কাজী, মৌলভীসহ অনেকের সাথেই তারা যোগাযোগ করেন। প্রথমে মোল্লা বিয়ে পড়াতে স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম হাফেজ উসমান গণির কাছে যান। রূপালী প্রাপ্তবয়স্ক নয় বলে চলে যান তিনি। পরে কাজীর দারস্থ হলে তিনিও ফিরিয়ে দেন। বাল্যবিয়ে দেওয়া অপরাধ। জেনে শুনে এমন অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। এমন সব বার্তায় পিছিয়ে যায় রূপালীর মা বাবা সহ সবলেই। তারা আপাতত রূপালীর বিয়ে নয় বলে চুপসে যায়। পরবর্তীতে কিছুদিন পর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে শিশু রূপালীর বিয়ের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করার বিষয়টি চাউর হচ্ছে গোটা ইউনিয়নে। পিতা মাতাহীন তারেকের বড় ভাই রূক্কু মিয়া বলেন, মেয়েটির বয়স হয়নি। এখন বিয়ে হলে অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু আমার প্রবাসী ভাইকে ভুল বুঝিয়ে রূপালীর পরিবারের লোকজন, লোকমান মিয়া ও আলকাছ মিয়া নামের দুই সালিসকারক বাল্যবিয়ে দেওয়ার জন্য লড়ছেন। আমি উপজেলার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানিয়েছি। উনার পরামর্শে ওই নম্বরের ম্যাসেঞ্জারে সকল তথ্য পাঠিয়ে একাধিকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি আর রিসিভ করেননি। লাইন কেটে দিয়েছেন। তবে বাঁধা হয়েছে দাঁড়িয়েছেন পিফরডি প্রকল্পের ডিপিএফ-এর সদস্য মাহবুব খান সহ কয়েকজন। শিশু রূপালীর বিয়েটি বন্ধের জন্য তারা বিভিন্ন লেভেলে চেষ্টা করতে থাকেন। সফল হয়েছেন তারা। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আপাতত চুড়ান্ত ভাবে বাল্যবিয়ে থেকে পিছিয়ে আসেন। বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার দেব বলেন, বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী নবম শ্রেণির ছাত্রী রূপালীর বয়স ১৫ বছরেরও নীচে। এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। বাল্যবিয়ে কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সালিসকারক লোকমান মিয়া বাল্যবিয়েতে মনেপ্রাণে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ছেলে বিদেশ থেকে মেয়ের সাথে কথা বলে। তারা রাজি। আমাদেরকেও বলে। মেয়ের বয়স কম। তাই আপাতত মোল্লা বিয়েটা পড়ানোর কাজটা শেষ পর্যায়ে ছিল। দুলাল না কে যেন অভিযোগ দিয়ে ঝামেলা করেছে। ছেলে দেশে থাকলে তো আদালত থেকে বয়স ঠিক করে আনতাম। এমন অনেকের বয়স ঠিক করে বিয়ে দিয়েছি। আমিও আইন কম জানি না। চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমার সম্পর্কে জেনে নিয়েন। আবার বাবাও সর্দার ছিল। পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ মিষ্টার বলেন, আমি দফাদার পাঠিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ রাখতে বলেছি। কাজীকেও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিবাহ নিবন্ধন করতে নিষেধ করেছি।

মাহবুব খান বাবুল