ঢাকা ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৪ কেজি গাঁজাসহ ২ জন গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত চলা চলের রাস্তায় বেড়া নির্মাণ, একসপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ বৃদ্ধ কাজল মিয়ার পরিবার রূপম ধরের তুলিতে তিতাস পাড়ের গল্প: তরী বাংলাদেশের নদী সম্মেলন সংবাদ সম্মেলনের মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশে প্রতিবাদ: বেদে প্রেমিক যুগলের বিষপান, হাসপাতালে ভর্তি একটি পরিবারকে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আ.লীগ নেতা ও এস.আই’র বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এনেসথেসিয়া সোসাইটির কমিটি গঠন, নেতৃত্বে ডা. মকবুল-ডা. আরিফ ৫০ কেজি গাঁজা ১টি পিকআপ ভ্যানসহ ১ জন গ্রেফতার জনগণের ভালবাসা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে-খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল

সরাইলে প্রবাসী হামিদ হত্যা রহস্য উৎঘাটন করেছে ডিবি; লোমহর্ষক বর্ণনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৩০৮ বার পড়া হয়েছে

sarail pic(mali arrest)

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রবাসী আব্দুল হামিদকে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। বাড়ির পাশের খালি জমি থেকে হামিদের লাশ উদ্ধারের পর শরীরের আঘাতের কোন চিহ্ন না থাকায় হত্যা নাকি অন্য কিছু নিয়ে ধুম্রজাল তৈরী হয়েছিল। ফাঁকে অপরাধকে চাপা দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছিল একটি মহল। অবশেষে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৫ দিন পর গত রোববার গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর শহরের শিমরাইল কান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিলিং মিশনের অন্যতম হোতা ইয়ামিন মিয়া (২৫) প্রকাশ মালিকে গ্রেপ্তার করেছেন ডিবি পুলিশ। মালির বাড়ি সরাইল সদরের বণিকপাড়া মহল্লায়। মালি গ্রেপ্তারের পরই বেড়িয়ে আসছে হামিদ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। কবুতর বিক্রির টাকা আত্মসাৎ ও অপকর্মের স্বাক্ষী উধাও করতেই খুন করা হয়েছে হামিদকে। গতকাল সোমবার সকালে ডিবি ও থানা পুলিশের উপসি’তিতে ঘটনাস’ল উচালিয়া পাড়ায় সরজমিনে এসে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের লোমহর্ষক বর্ণনা নিজ মুখে দিয়েছে মালি। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে মালি গতকাল আদালতেও ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তি দিয়েছে। এই হত্যাকান্ডের পেছনে আরো কিছু আছে কিনা খতিয়ে দেখছেন ডিবি। ডিবি পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রবাসী হামিদের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই রাতে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ করে আসছিলেন স্বজনরা। আর ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্ট্রোক জনিত কারণকে চাউর করে আসছিলেন আরেকটি বলয়। লাশ উদ্ধারের পর ওই রাতেই পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে উচালিয়াপাড়া গ্রাম থেকে রতন মালাকার (৩২), মোফাচ্ছেল মিয়া (২০), শাহিন মিয়া (১৯) ও মারূফ মিয়া (২৭) নামের ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন’ থানায় মামলা দায়েরের ৫ দিন পরই তদন্তের জন্য মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কাজ শুরূ করেন ডিবি পুলিশ। মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই চমক দেখিয়েছেন তারা। মোবাইল ট্রেকিং ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার গভীর রাতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকায় অভিযানে নামেন এস আই রেজাউল। অভিযানকালে হামিদ হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত মালি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি’র জিজ্ঞাসাবাদে কিলিং মিশনে থেকে হামিদ হত্যার কাজে সহযোগিতা করার দায় স্বীকার করেছে মালি। গতকাল সোমবার সকালে উচালিয়া পাড়ায় ঘটনাস্থলে নিয়ে আসলে ডিবি ও থানা পুলিশের ১২-১৫ জন সদস্যের উপসি’তিতে মালির বয়ানে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা বেরিয়ে আসে। মালি বলে, মোফাচ্ছেলের কাছে কবুতর বিক্রির টাকা পেত হামিদ। টাকা চাইলেই মোফাচ্ছেল রাগ করত। মোফাচ্ছেল ওইদিন আমাকে বলেছে আজ একটা কাজ করতে হবে। হামিদ টাকা চাইলেই তুই ভয় ভীতি দেখাবে। বিনিময়ে তোকে টাকা দিব। গত ১ ফেব্রূয়ারি রাত ১১ টার পর মোফাচ্ছেলের বাড়িতে যায়। সেখানে রতন মালাকার ও শাহিনকে নিয়ে গ্রামের পাশের খালি মাঠে একটি পুকুরের পাড়ে যায় । পুকুরে সামান্য পানি। তারা আমাকে বলে হামিদকে দুইবার গাঁজা খাওয়াইছি। আর তারা ইয়াবা খাইছে। আমি গাঁজা খায় না। ইয়াবা খাই। তারা বলে, হামিদকে এখন ধরব। তুইও ধরিস। সহযোগিতা করিস। বলেই ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। কাঁদায় পানিতে হামিদ উপোড় হয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমি (মালি) হামিদের পিঠে ও ঘাড়ে চাপ দিয়ে ধরি। অন্যরা হাতে ও পায়ে চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর হামিদকে সোজা করে ওঠালে একটি শ্বাস ছেড়ে মাটিতে পড়ে যায়। নড়ে চড়ে না। বুঝে ফেলি হামিদ মারা গেছে। সকলে মিলে হামিদের লাশটি পুকুরের একটু দূরে খালি ফসলি জমিতে রেখে চলে আসি।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল মালি। তদন্তে বুঝতে পারি ঘটনার সাথে মালির সম্পৃক্ততা আছে। প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে মালির অবস’ান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। গতকাল আদালতে মালি ১৬৪ ধারায় ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার পেছনে আরো কিছু আছে কিনা খতিয়ে দেখছি। প্রসঙ্গত: গত ১ ফেব্রূয়ারি বুধবার রাত ১১ টায় ৪ সন্তানের জনক প্রবাসী আব্দুল হামিদকে কে বা কাহারা মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যায়। ওই রাতে আর বাড়ি ফিরেনি হামিদ। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে হামিদের বসতবাড়ির উত্তর পাশের খালি জায়গায় হামিদের লাশ পড়ে থাকতে দেখে শিশুরা। হামিদ উচালিয়াপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল আলীমের ছেলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সরাইলে প্রবাসী হামিদ হত্যা রহস্য উৎঘাটন করেছে ডিবি; লোমহর্ষক বর্ণনা

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রবাসী আব্দুল হামিদকে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। বাড়ির পাশের খালি জমি থেকে হামিদের লাশ উদ্ধারের পর শরীরের আঘাতের কোন চিহ্ন না থাকায় হত্যা নাকি অন্য কিছু নিয়ে ধুম্রজাল তৈরী হয়েছিল। ফাঁকে অপরাধকে চাপা দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছিল একটি মহল। অবশেষে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৫ দিন পর গত রোববার গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর শহরের শিমরাইল কান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিলিং মিশনের অন্যতম হোতা ইয়ামিন মিয়া (২৫) প্রকাশ মালিকে গ্রেপ্তার করেছেন ডিবি পুলিশ। মালির বাড়ি সরাইল সদরের বণিকপাড়া মহল্লায়। মালি গ্রেপ্তারের পরই বেড়িয়ে আসছে হামিদ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। কবুতর বিক্রির টাকা আত্মসাৎ ও অপকর্মের স্বাক্ষী উধাও করতেই খুন করা হয়েছে হামিদকে। গতকাল সোমবার সকালে ডিবি ও থানা পুলিশের উপসি’তিতে ঘটনাস’ল উচালিয়া পাড়ায় সরজমিনে এসে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের লোমহর্ষক বর্ণনা নিজ মুখে দিয়েছে মালি। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে মালি গতকাল আদালতেও ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তি দিয়েছে। এই হত্যাকান্ডের পেছনে আরো কিছু আছে কিনা খতিয়ে দেখছেন ডিবি। ডিবি পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রবাসী হামিদের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই রাতে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ করে আসছিলেন স্বজনরা। আর ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্ট্রোক জনিত কারণকে চাউর করে আসছিলেন আরেকটি বলয়। লাশ উদ্ধারের পর ওই রাতেই পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে উচালিয়াপাড়া গ্রাম থেকে রতন মালাকার (৩২), মোফাচ্ছেল মিয়া (২০), শাহিন মিয়া (১৯) ও মারূফ মিয়া (২৭) নামের ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন’ থানায় মামলা দায়েরের ৫ দিন পরই তদন্তের জন্য মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কাজ শুরূ করেন ডিবি পুলিশ। মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই চমক দেখিয়েছেন তারা। মোবাইল ট্রেকিং ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার গভীর রাতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকায় অভিযানে নামেন এস আই রেজাউল। অভিযানকালে হামিদ হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত মালি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি’র জিজ্ঞাসাবাদে কিলিং মিশনে থেকে হামিদ হত্যার কাজে সহযোগিতা করার দায় স্বীকার করেছে মালি। গতকাল সোমবার সকালে উচালিয়া পাড়ায় ঘটনাস্থলে নিয়ে আসলে ডিবি ও থানা পুলিশের ১২-১৫ জন সদস্যের উপসি’তিতে মালির বয়ানে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা বেরিয়ে আসে। মালি বলে, মোফাচ্ছেলের কাছে কবুতর বিক্রির টাকা পেত হামিদ। টাকা চাইলেই মোফাচ্ছেল রাগ করত। মোফাচ্ছেল ওইদিন আমাকে বলেছে আজ একটা কাজ করতে হবে। হামিদ টাকা চাইলেই তুই ভয় ভীতি দেখাবে। বিনিময়ে তোকে টাকা দিব। গত ১ ফেব্রূয়ারি রাত ১১ টার পর মোফাচ্ছেলের বাড়িতে যায়। সেখানে রতন মালাকার ও শাহিনকে নিয়ে গ্রামের পাশের খালি মাঠে একটি পুকুরের পাড়ে যায় । পুকুরে সামান্য পানি। তারা আমাকে বলে হামিদকে দুইবার গাঁজা খাওয়াইছি। আর তারা ইয়াবা খাইছে। আমি গাঁজা খায় না। ইয়াবা খাই। তারা বলে, হামিদকে এখন ধরব। তুইও ধরিস। সহযোগিতা করিস। বলেই ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। কাঁদায় পানিতে হামিদ উপোড় হয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমি (মালি) হামিদের পিঠে ও ঘাড়ে চাপ দিয়ে ধরি। অন্যরা হাতে ও পায়ে চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর হামিদকে সোজা করে ওঠালে একটি শ্বাস ছেড়ে মাটিতে পড়ে যায়। নড়ে চড়ে না। বুঝে ফেলি হামিদ মারা গেছে। সকলে মিলে হামিদের লাশটি পুকুরের একটু দূরে খালি ফসলি জমিতে রেখে চলে আসি।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল মালি। তদন্তে বুঝতে পারি ঘটনার সাথে মালির সম্পৃক্ততা আছে। প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে মালির অবস’ান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। গতকাল আদালতে মালি ১৬৪ ধারায় ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনার পেছনে আরো কিছু আছে কিনা খতিয়ে দেখছি। প্রসঙ্গত: গত ১ ফেব্রূয়ারি বুধবার রাত ১১ টায় ৪ সন্তানের জনক প্রবাসী আব্দুল হামিদকে কে বা কাহারা মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যায়। ওই রাতে আর বাড়ি ফিরেনি হামিদ। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে হামিদের বসতবাড়ির উত্তর পাশের খালি জায়গায় হামিদের লাশ পড়ে থাকতে দেখে শিশুরা। হামিদ উচালিয়াপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল আলীমের ছেলে।