ঢাকা ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সরাইলে পরকিয়ার বলি গৃহবধু; পেট্রোল ঢেলে স্ত্রীকে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ৬০ বার পড়া হয়েছে

স্বামী আল-আমিন

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যৌতুক ও পরকিয়ার বলি হয়েছেন গৃহবধু দুই সন্তানের জননী শাহিদা বেগম (৩০)। এক সময়ের ভালবাসার শাহিদার শরীরে মধ্যযোগীয় কায়দায় পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাষন্ড স্বামী আল-আমিনের বিরূদ্ধে। পিতার দেয়া আগুনে শরীরের ৯০ ভাগ পুঁড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু আলিফা (০২)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় স্বামীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বামী আল-আমিনসহ ৪ জনকে আসামী করে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন শাহিদার সহোদর ভাই মো. আবেদ মুন্সি। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নোয়াগাঁও গ্রামের প্রয়াত এলাই মুন্সির মেয়ে শাহিদা বেগম। ৮-৯ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মো. সেলিম মিয়ার ছেলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রী আল-আমিনের সাথে শাহিদার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রেম ভালবাসা এক সময় অনেক দূর এগিয়ে যায়। পরে উভয় পরিবার মিলে তাদের বিয়ে দেয়। বিয়ের ৮ মাস পরই অন্তসত্তা স্ত্রীকে রেখে লেবাননে পাড়ি জমায় আল-আমিন। প্রবাসে যাওয়ার পর পাল্টে যায় আল-আমিন। তাদের সংসারে আসে জুবাইদ (০৭) ও আলিফা (০২) নামের ফুটফুটে দুটি শিশু। কিন্তু মুঠোফোনে পরিচয়ের পর কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দৌলতের পাড়া এলাকার এক মহিলার সাথে পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে আল আমিন। শাহিদার প্রতি আল-আমিনের ভালবাসা কমতে থাকে। শ্বাশুড়ি রাবেয়া বেগম ও স্বামীর বাড়ি থেকে ফেরৎ আসা ননদের নির্যাতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। দেশে এসে আল-আমিন যৌতুকের জন্য শাহিদার উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। না করলেই শাহিদার উপর চলে নির্যাতনের ষ্ট্রীম রোলার। ওদিকে দিনে রাতে মুঠোফোনে চলে আল-আমিনের পরকিয়া প্রেম। এক সময় শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও ননদের সীমাহীন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শাহিদার সংসার জীবন। বিষয়টি বাবার পরিবারকে জানায় শাহিদা। তারা আল-আমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে উল্টো তিরস্কারের শিকার হন। এরই মধ্যে স্ত্রীর কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে সম্প্রতি আল-আমিন শাহিদাকে হত্যার হুমকি দিত। গোটা পরিবারের চক্ষুশূল হয়ে পড়ে শাহিদা। ঠিকমত তিন বেলা আহার জুটে না শাহিদার ভাগ্যে। এরপর আবার স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের নির্যাতনে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন শাহিদা। তারপরও দুটি শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ ও ইজ্জতের ভয়ে শাহিদা টর্চার সহ্য করে স্বামীর সংসার করার চেষ্টা করেছেন। শেষ রক্ষা হয়নি ওই গৃহবধূর। গত সোমবার সকালে টাকা চাইলে শাহিদা দিতে পারেনি। তখনি নিজের মোটরবাইকের পেট্রোল বের করে স্ত্রী শাহিদার শরীরে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী আল-আমিন। তার চোখের সামনে আগুনে জ্বলতে থাকে স্ত্রী। আগুনে জ্বলতে থাকে শাহিদার কোলে থাকা শিশু কন্যা আলিফা। এতে একটুও মন গলেনি। মা ও শিশুকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি পরিবারের কোন সদস্য। কি নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও বর্বরতা। চিৎকার শুনে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন শাহিদার এক খালা ও স্বজনরা। বড় ভাই তাজুলসহ স্বজনরা শাজিদাকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে অবস’ার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস’ায় গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শাহিদা মারা যায়। একই হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে শাহিদার আদরের কন্যা শিশু আলিফা। শাহিদার ভাই আবেদ মুন্সিসহ পরিবারের একাধিক সদস্য বলেন, তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল। বাধ্য হয়ে ৮ বছর আগে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়। শুরূতে ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। দুটি সন্তানও হয়। পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে রূপ পাল্টে যায় আল-আমিনের। পরকিয়া প্রেমিকের সাথে মুঠোফোনে বিভিন্ন ধরণের কথোপকথনের কল রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে। গত ৩/৪ বছর ধরে যৌতুকের জন্য আমার শাহিদার উপর অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। স্বামী কথায় কথায় টাকা চাই। টাকা না দিলেই প্রকাশ্যে মারধর করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে শাহিদাকে হত্যা করেছে। পিতার দেয়া আগুনে জ্বলছে গেছে আমার ভাগ্নি আলিফাও। যেকোন মূহুর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে শিশুটি। আমরা এঘটনার মূল নায়ক স্বামী আল-আমিন ও পরিবারের অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি। আর কোন শাহিদা যেন স্বামী কর্তৃক এমন যন্ত্রণাদায়ক নিপীড়ন ও হত্যার শিকার হতে না হয়। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশের ময়সা তদন্ত চলছে। আর অভিযুক্ত স্বামী আল-আমিনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেও আগুনে পুঁড়ে আহত হয়েছে। বর্তমানে আল-আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সরাইলে পরকিয়ার বলি গৃহবধু; পেট্রোল ঢেলে স্ত্রীকে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ

আপডেট সময় : ১১:৪৬:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যৌতুক ও পরকিয়ার বলি হয়েছেন গৃহবধু দুই সন্তানের জননী শাহিদা বেগম (৩০)। এক সময়ের ভালবাসার শাহিদার শরীরে মধ্যযোগীয় কায়দায় পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাষন্ড স্বামী আল-আমিনের বিরূদ্ধে। পিতার দেয়া আগুনে শরীরের ৯০ ভাগ পুঁড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু আলিফা (০২)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় স্বামীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বামী আল-আমিনসহ ৪ জনকে আসামী করে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন শাহিদার সহোদর ভাই মো. আবেদ মুন্সি। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নোয়াগাঁও গ্রামের প্রয়াত এলাই মুন্সির মেয়ে শাহিদা বেগম। ৮-৯ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মো. সেলিম মিয়ার ছেলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রী আল-আমিনের সাথে শাহিদার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রেম ভালবাসা এক সময় অনেক দূর এগিয়ে যায়। পরে উভয় পরিবার মিলে তাদের বিয়ে দেয়। বিয়ের ৮ মাস পরই অন্তসত্তা স্ত্রীকে রেখে লেবাননে পাড়ি জমায় আল-আমিন। প্রবাসে যাওয়ার পর পাল্টে যায় আল-আমিন। তাদের সংসারে আসে জুবাইদ (০৭) ও আলিফা (০২) নামের ফুটফুটে দুটি শিশু। কিন্তু মুঠোফোনে পরিচয়ের পর কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দৌলতের পাড়া এলাকার এক মহিলার সাথে পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে আল আমিন। শাহিদার প্রতি আল-আমিনের ভালবাসা কমতে থাকে। শ্বাশুড়ি রাবেয়া বেগম ও স্বামীর বাড়ি থেকে ফেরৎ আসা ননদের নির্যাতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। দেশে এসে আল-আমিন যৌতুকের জন্য শাহিদার উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। না করলেই শাহিদার উপর চলে নির্যাতনের ষ্ট্রীম রোলার। ওদিকে দিনে রাতে মুঠোফোনে চলে আল-আমিনের পরকিয়া প্রেম। এক সময় শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও ননদের সীমাহীন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শাহিদার সংসার জীবন। বিষয়টি বাবার পরিবারকে জানায় শাহিদা। তারা আল-আমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে উল্টো তিরস্কারের শিকার হন। এরই মধ্যে স্ত্রীর কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে সম্প্রতি আল-আমিন শাহিদাকে হত্যার হুমকি দিত। গোটা পরিবারের চক্ষুশূল হয়ে পড়ে শাহিদা। ঠিকমত তিন বেলা আহার জুটে না শাহিদার ভাগ্যে। এরপর আবার স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের নির্যাতনে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন শাহিদা। তারপরও দুটি শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ ও ইজ্জতের ভয়ে শাহিদা টর্চার সহ্য করে স্বামীর সংসার করার চেষ্টা করেছেন। শেষ রক্ষা হয়নি ওই গৃহবধূর। গত সোমবার সকালে টাকা চাইলে শাহিদা দিতে পারেনি। তখনি নিজের মোটরবাইকের পেট্রোল বের করে স্ত্রী শাহিদার শরীরে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী আল-আমিন। তার চোখের সামনে আগুনে জ্বলতে থাকে স্ত্রী। আগুনে জ্বলতে থাকে শাহিদার কোলে থাকা শিশু কন্যা আলিফা। এতে একটুও মন গলেনি। মা ও শিশুকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি পরিবারের কোন সদস্য। কি নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও বর্বরতা। চিৎকার শুনে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন শাহিদার এক খালা ও স্বজনরা। বড় ভাই তাজুলসহ স্বজনরা শাজিদাকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে অবস’ার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস’ায় গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শাহিদা মারা যায়। একই হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে শাহিদার আদরের কন্যা শিশু আলিফা। শাহিদার ভাই আবেদ মুন্সিসহ পরিবারের একাধিক সদস্য বলেন, তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল। বাধ্য হয়ে ৮ বছর আগে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়। শুরূতে ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। দুটি সন্তানও হয়। পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে রূপ পাল্টে যায় আল-আমিনের। পরকিয়া প্রেমিকের সাথে মুঠোফোনে বিভিন্ন ধরণের কথোপকথনের কল রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে। গত ৩/৪ বছর ধরে যৌতুকের জন্য আমার শাহিদার উপর অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। স্বামী কথায় কথায় টাকা চাই। টাকা না দিলেই প্রকাশ্যে মারধর করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে শাহিদাকে হত্যা করেছে। পিতার দেয়া আগুনে জ্বলছে গেছে আমার ভাগ্নি আলিফাও। যেকোন মূহুর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে শিশুটি। আমরা এঘটনার মূল নায়ক স্বামী আল-আমিন ও পরিবারের অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি। আর কোন শাহিদা যেন স্বামী কর্তৃক এমন যন্ত্রণাদায়ক নিপীড়ন ও হত্যার শিকার হতে না হয়। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশের ময়সা তদন্ত চলছে। আর অভিযুক্ত স্বামী আল-আমিনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেও আগুনে পুঁড়ে আহত হয়েছে। বর্তমানে আল-আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন আছে।