মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে তিতাস নদী থেকে অবৈধ পন্থায় ড্রেজারে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। ফলে নদী সংলগ্ন জমি গুলো আবারও হুমকির মধ্যে পড়েছে। উপজেলার ধীতপুর গ্রামের বান্নিঘাট এলাকায় নদীতে গোপনে গভীররাতে চললে বালু উত্তোলন। গতকাল শুক্রবার সকালে এলাকাবাসী ড্রেজার, বালু বহনকারী ষ্টীলের বড় নৌকা আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে মালিককে না পেয়ে ড্রেজারটিকে বিকল করে দিয়ে বেশ কিছু গুরূত্বপূর্ণ মালামাল জব্দ করে নিয়ে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তিতাসের এই স্থানে কোন বালু মহাল নেই। তারপরও জেলার ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর মদদে ব্রীজের পূর্ব পাশের ধীতপুর মৌজার বান্নিঘাট এলাকা থেকে দীর্ঘ ১৪-১৫ দিন ধরে রাতের বেলা লোক চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। ষ্টীলের বড় নৌকা দিয়ে ওই বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছেন।
আশপাশের এলাকায়ও কিছু বালু ষ্টক করে রাখছেন। আর দিনের বেলা পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন স্থানে নদীতে এনে ড্রেজারটি রেখে দেয়। ফলে ওইখানকার নদীর পাশের ফসলি জমি গুলো হুমকির মধ্যে পড়ছে। নদীর পানি শুকিয়ে গেলেই জমি গুলো ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় কৃষকরা একাধিকবার বাঁধা দিলেও ড্রেজারের লোকজন তা আমলে নেয়নি। বাধ্য হয়ে শাহবাজপুর ও ধীতপুর গ্রামের কৃষকরা আজ শুক্রবার দুপুরে ড্রেজার ও নৌকা গুলোকে আটক করেন। ড্রেজারে কর্মরত বরগুনা জেলার বিল্লাল (৩৭) ও মো. জালালকে (২২) আটক করেন কৃষকরা। ড্রেজার কমচারী বিল্লাল ও জালাল বলেন, বাবু মিয়া ড্রেজারের মালিক। আমরা কাজ করি। এখানে আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন যুবলীগ নেতা পারভেজ ভাই। নদীর ওই স্থান থেকে মাটি উত্তোলন করা যাবে কিনা চেক করতে পাঠিয়েছে বাবু ভাই। চেক করে আমরা এখানে এসেছি। বিষয়টি তারা উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে হাজির হন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করলেও ড্রেজার মালিক উপস্থিত হননি।
অবশেষে কৌশলে ড্রেজারকে বিকল করে ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত বেশ মালামাল জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক কালা মিয়া (২৮), উন্নু মিয়া (৫০), শিবলী (৩৫), মো. জসিম মিয়া, ধীতপুর গ্রামের স্বপন মিয়া (৪০) ও রঞ্জিত দাসসহ (৫০) অনেকেই বলেন, গত ১৪-১৫ দিন রাতের অন্ধকারে ড্রেজারে মাটি কেটে আমাদেরকে শেষ করে দিয়েছে। আমাদের শতশত কানি ফসলি জমি নীচের দিকে ধেবে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এদেরকে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোক শেল্টার দিচ্ছে। অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে জমি রক্ষা করূন। আমাদেরকে বাঁচার। বাবু মিয়া বলেন, আমার লোকজন ড্রেজারসহ সেখানে ১৪ দিন ধরে অবস্থান করছেন। মাটি কাটেনি। কিছু লোক প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে ড্রেজারের মালামাল জব্দ করিয়েছেন।
সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা ড্রেজারের যন্ত্রাংশ জব্দ করার কথা স্বীকার করে বলেন, মালামাল নিতে না আসলে এক সময় ওই গুলো নিলামে বিক্রি করে টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হবে। সেখান থেকে আর বালু উত্তোলন করতে পারবে না। কেউ চেষ্টা করলে তার/তাদের বিরূদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিব। প্রসঙ্গত: গত ২/৩ বছর আগেও একই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের কারণে সহস্রাধিক কানি জমি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। জমি হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে জমির আইলেই ষ্ট্রোক করে মারা গেছেন ধীতপুর গ্রামের কৃষক ফজর আলী (৭০) ও মালু মিয়া (৪০)। ড্রেজারের লোকজন তখন থেকে ওই জায়গাটি চিনেন। তাই ৩ বছর পর ঘুরে ফিরে আবারও বালু উত্তোলন করতে এসেছেন।