সরাইলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের মূল্যবান ধাতববস্ত (তামার ক্যাবল) চুরির হিড়িক পড়েছে। গত সোমবার ক্যাবল কেটে তামা বাহির করার সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর এলাকায় একটি ইটভাটা থেকে শামীম (২৫) নামের এক যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। কিছুক্ষণ পরই সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার সরকারি তামার ক্যাবলসহ গ্রেপ্তার করেন। শামীম উপজেলার শাহবাজপুর দীঘিরপাড় এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। চুরির দায় স্বীকার করে শামীম তার আরো তিন সহযোগির নামও বলেছে। এ পর্যন্ত সরাইলের ৩০-৩৫ টি ট্রান্সফরমারের তামার ক্যাবল চুরির দায় অকপটে স্বীকার করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। শামীম সরাইলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পের সুপারভাইজার সোহেলের তত্বাবধানে কাজ করত। মামলা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গত কয়েক মাসে সরাইলে অন্তত ৪০-৫০ টি ট্রান্সফরমারের তামার মূল্যবান ক্যাবল চুরির ঘটনা ঘটেছে। শুধু শাহবাজপুর ও শাহজাদাপুরেই চুরি হয়েছে অন্তত: ৮-১০ টির ক্যাবল। এ ছাড়া সরাইল সদর, ধর্মতীর্থ, চুন্টা, কালীকচ্ছ, মনিরবাগ ও বিশুতারাসহ অন্যান্য এলাকায় অন্তত ৩০-৩৫ টি ট্রান্সফরমারের তামার ক্যাবল চুরি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে পিডিবি কর্তৃপক্ষ এলোমোনিয়ামের ক্যাবল দিয়ে কোন রকমে ওই ট্রান্সফরমাার গুলো সচল করেন। তবে এলোমোনিয়ামের ক্যাবল তামার মত সার্ভিস দিতে পারে না। গত সোমবার রাতে শাহবাজপুর এলাকার একটি ট্রান্সফরমার থেকে তামার ক্যাবলটি কেটে নিয়ে যায় শামীম। ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শাহবাজপুর একটি ইটভাটায় বসে তামা বের করার সময় স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে ফেলে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শামীমকে ৭ বান্ডিল তামার ক্যাবলসহ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। ক্যাবল গুলোর ওজন ৩৫ কেজি। যার বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকারও অধিক। গ্রেপ্তারের আগে শামীম উপসহকারি প্রকৌশলী মো. সুমন হোসেন সরদারের উপসি’তিতে ভিডিওতে চুরির দায় স্বীকার করে রাসেল, নাছির ও সেন্টু নামের তিন সহযোগির নাম বলেছে। এ পর্যন্ত সমগ্র উপজেলায় তাদের সিন্ডিকেট ৩০-৩৫ টি ট্রান্সফরমারের তামার ক্যাবল চুরি করে বিক্রির দায়ও স্বীকার করে শামীম। সরকারি মূল্যবান মালামাল চুরির অপরাধে শামীমের বিরূদ্ধে সুমন হোসেন সরদার বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি মামলা করেছেন। শামীমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ক্যাবল চুরির পর যা হয়: কখনো গভীর রাতে কখনো ভোরে বিকল হয়ে যাচ্ছে ট্রান্সফরমার। ফলে শতশত গ্রাহকদের পোহাতে হচ্ছে দূর্ভোগ। পিডিবি’র কাজের সাথে জড়িত লোকজনই এই অপকর্মটি করছে। গ্রাহকরা ট্রান্সফরমারের জন্য পিডিবি অফিসে ধরণা দিতে থাকেন। সুযোগ নেন পিডিবি’র অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি। অফিসে ৬-৭টি ট্রান্সফরমার মজুদ রেখেও কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের বলেন কুমিল্লা থেকে এনে দিতে হবে। অনেক সময় লাগবে। ট্রাক ভাড়া ও লেবার খরচ লাগবে। অনেক সময় তামার পরিবর্তে এলোমোনিয়ামের ক্যাবল দিয়ে কোন রকমে সংস্কার করছেন পিডিবি কর্তৃপক্ষ। এই ব্যবস’াটাও দীর্ঘস’ায়ী নয়। আবার গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে অফিসের মজুদ থেকে ট্রান্সফরমার দিচ্ছেন। দুই মাস আগে বিকল হয় উপজেলা চত্বরের ট্রান্সফরমারটি। ৪ দিন ঘুরিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করে গত শনিবার মেরামতকৃত ওই ট্রান্সফরমারটি দেয়া হয় শাহজাদাপুর গ্রামে। তামার ক্যাবল চুরির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক বলেন, মামলার এজহারে আসামী হিসেবে শুধু শামীমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আছে আরো কয়েকজন। তবে এক ভিডিও বক্তব্যে শামীম তার ৩ সহযোগির নাম বলেছে। তদন্ত চলছে।
মাহবুব খান বাবুল