শাহজাদাপুর ইউনিয়ন ছাত্র কল্যাণ সংসদ। অভিষেক হয়েছে গত ১০ জুন শুক্রবার এক অনাঢ়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এর দশ দিন পরই দারূন এক চমক দেখিয়েছে সংগঠনটি। আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন বিষয়ে নিরাশার অথৈ জলে ভাসছিল শাহজাদাপুর স্কুলের মেধাবী ছাত্রী মানসুরা। তার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল মূল্যবান একটি বছর। পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্র সংসদ। শ্রম সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন। সফল হয়েছেন তারা। মানসুরার পরীক্ষায় অংশ গ্রহন নিশ্চিত করেছেন। হাঁসছে শিক্ষার্থী মানসুরা। সেই সাথে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলছেন মানসুরার পরিবার ও সহপাঠিরা। সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন সজীব জনি শিব্বির তামীম তোফায়েল সহ সংগঠনের সদস্যরা। চারিদিক থেকে বাহবা পাচ্ছে ছাত্র কল্যাণ সংসদ। ধন্যবাদ অভিনন্দন আর প্রশংসায় ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুক। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়েছেন মানসুরার সহোদর বড় ভাই শেখ ফয়সাল। গোটা শাহজাদাপুর ইউনিয়নে স্থাপিত হলো এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মানসুরার পরিবার ও ছাত্র কল্যাণ সংসদ সূত্র জানায়, মানসুরা শাহজাদাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের স্বপ্ন ছিল তার। প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে তার। গত ১৫ জুন ছিল মানসুরাদের বিদায় অনুষ্ঠান। ওইদিন সকল পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র পেলেও পায়নি মানসুরা। কর্তৃপক্ষ জানায় নিয়ম মাফিক টাকা পয়সা জমা দিলেও ভুলক্রমে মানসুরার ফরম ফিল-আপ হয়নি। এ বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না তার। চোখে সরষে ফুল দেখছিল ওই শিক্ষার্থী। স্তদ্ধ হয়ে পড়ে মানসুরার পরিবার। নিরাশার অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল মানসুরা। জীবন থেকে একটি বছর পিছিয়ে পড়ছে ভেবেই চোখের জলে ভাসতে থাকে। মানসুরাকে শান্তনা দেওয়ার সাধ্য যে কারো নেই। মানসুরার মনে পড়ে গেল গত ১০ জুন দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত ‘শাহজাদাপুর ইউনিয়ন ছাত্র কল্যাণ সংসদ’-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। মনে পড়ে গেল “শিক্ষা সম্প্রীতি সমৃদ্ধির স্লোগানে আমরা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে” এই লেখাটির কথা। তারা তো কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। মানসুরা ওই সংগঠনের সদস্য নিজ গ্রামের কয়েকজনের কাছে আবেদন করেন। গুরূত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে এগুতে থাকেন তারা। সামনে সময় মাত্র তিন দিন। মাঝে রয়েছে শুক্র ও শনিবার বোর্ড বন্ধ। সংগঠনটির উপদেষ্টা সজীবসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সকলেই দৌড় শুরূ করেন। শাহাজাদাপুর গ্রাম থেকে কুমিল্লা ২’শত কিলোমিটার পথ। পিছু হটেনি ছাত্র কল্যাণ সংসদ। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন উপদেষ্টা সজীব। পথ খুঁজে বের করেন তারা। ১৬ জুন বৃহস্পতিবার অফিস সময় শুরূ হওয়ার আগেই মানসুরার কাগজপত্র পাঠাতে হবে বোর্ডে। একজন শিক্ষক ও অভিভাবক যথাসময়ে হাজির হন। উপদেষ্টা জনির ভগ্নিপতি সেখানকার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন ও সজীবের আন্তরিক সহযোগিতায় মানসুরা পেল প্রবেশপত্র। কেটে গেছে অন্ধকার ও দুশ্চিন্তা। সকলের সাথে আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারবে মানসুরাও। ছাত্র কল্যাণ সংসদ তাদের কথা রেখেছে। তাই ওই সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মানসুরার পরিবার। সংগঠনের সভাপতি তামীম ও সম্পাদক শিব্বির বলেন, সময় স্বল্পতা মানসুরার কাজে ছিল বড় ঝুঁকি। তারপরও আল্লাহর রহমতে আমরা পেরেছি। এ সাফল্যই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রেরণার উৎস। শিক্ষার্থীদের কল্যাণই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য উদ্যেশ্য। সকলের সহযোগিতায় আল্লাহ আমাদের সফল করেছেন। এর পেছনে যারা কাজ করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। মানসুরার মত সকল শিক্ষার্থীর পাশেই আছি এবং থাকব।
মাহবুব খান বাবুল