ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজ শাফওয়ান হোসেনকে পাওয়া গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ‌উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাফওয়ান হোসেন(শাওন) নিখোঁজ নদী রক্ষায় কার্যকর সংস্কারের আহবান তরী বাংলাদেশের বিল্ডিং কোড আইন অমান্য করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায় বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ নবীনগরে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও মহড়া অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত তারাবী নামাজের টাকা নিয়ে সংর্ঘষ, আহত ১৫ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আ.লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঈদ উপলক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পেল ঈদ-পোশাক সরাইলে শহীদ পরিবারের পাশে এনসিপি’র যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহদি

সরাইলের মহাসড়কে ৪ ঘন্টা বিশেষ কিছু সিএনজি’র দাপট! নেপথ্যে কি?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২ ৪০২ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সমগ্র দেশে মহাসড়কে সিএসজি চালিত অটোরিকশা চলাচলের উপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন অনেক আগেই। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল অংশের চিত্র ভিন্ন। তবে জেলা শহরের সাথে দুটি উপজেলার যোগাযোগ ঠিক রাখতে মালিক ও শ্রমিক সমিতির অনুরোধে কুট্রাপাড়া ব্রীজ থেকে মহাসড়কের একটি অংশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল রেখেছেন স্থানীয় প্রশাসন। মহাসড়কের সরাইল এলাকায় সম্প্রতি পরপর কয়েকটি দূর্ঘটনায় ১০-১২ জন নিহতের ঘটনায় সিএনজি চলাচল ঠেকাতে আবারও কঠোর হয় হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। মহাসড়কে সিএনজি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে অভিযানে নামেন হাইওয়ে পুলিশ। শুরূ থেকেই নানা সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। কারণ সাধারণ মালিক ও চালকদের সিএনজি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ নামের কিছু সিএনজি মহাসড়কে চলতে থাকে দেদারছে। প্রশ্ন ওঠে হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছবিসহ সরব হয়ে ওঠে। ক্ষমতার দাপটে বিশেষ কিছু অটোরিকশা চলার কথা স্বীকারও করেছেন হাইওয়ে পুলিশ। ৪-৫ সপ্তাহ পর গতকাল রোববার সরাইলের মহাসড়কে সরজমিনে ৪ ঘন্টা ঘুরে দেখা যায় সেই পুরাতন চিত্র। এর নেপথ্যে রয়েছে নানা কাহিনী। ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের সরাইলের কুট্রাপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে দেদারছে ছেড়ে যাচ্ছে কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশা। বিপরীত দিক থেকেও প্রতি মিনিটে আসছে। অটোরিকশা গুলো কখনো বাস কোচের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। প্রতিযোগিতা করছে ট্রাকের সাথেও। নেই কোন পুলিশি বাঁধা। নেই কোন টেনশন। চলন্ত সিএনজি’র দিকে ক্যামেরা ধরলেই মুছকি হেঁসে গতি বাড়িয়ে দেয় চালক। কথা বলতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যায়। জনৈক চালককে নাম জিজ্ঞাসার পরই আমতা আমতা করে বলেন, “স্যার নাম দিয়া কিতা করবাইন। আমডার গাড়ির দায়িত্ব সাংবাদিক ভাই নিছে। নাম কওঅন যাইত না। মাসের পরে ৪ হাজার টেহা দেয়। কোন জামেলা নাই। কথা হইছে আমডার গাড়িরে আটকাইত না।” একই সড়কে আরেকজন চালক বলেন, “স্যার আমারে বিপদে ফালাইয়েন না। হালি সাংবাদিক না। অনেক উফরের বড় বড় নেতা অ সিএনজি চলার তদবির করে। সড়কে হেরার লোক আছে। তারা দেহাশুনা করে। চালক তাইক্কা মাসের পরে টেহা গুইন্না নে।” দাপুটের সেই অটোরিকশা গুলোর পেছনে লেখা ‘শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ’, ‘হাবিব এন্টারপ্রাইজ’, ‘আল্লাহ ভরসা’, ‘মা-বাবার দোয়া’, ‘জিহাদ এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘আনাস পরিবহন।’ আবার ওই গুলোর সামনে অথবা পেছনে বিশেষ কিছু ষ্টীকার লাগানো আছে। বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে দাপটে চলছে ‘বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’ সহ আরো ৩-৪টি নামের সিএনজি। অনুসন্ধানে জানা যায়, নাম সর্বস্ব পত্রিকার কথিত কতিপয় স্থানীয় সংবাদকর্মী ওইসব সিএনজির মালিক/ চালকদের সাথে মাসিক চুক্তি করেছেন। প্রত্যেকে ১৫/২০/৩০/৪০টি করে অটোরিকশার মালিক সেজে বসেছেন। মাস শেষে ওই টাকার একটা অংশ বিশেষ জায়গায় খরচ দিবেন। আরেকটি অংশ নিজেদের পকেটে। তবে হাইওয়ে পুলিশ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। সড়কে গাড়ি চলবে নাম প্রকাশ করলে সমস্যায় পড়ার ভয়ে একাধিক মালিক বলেন, আমাদের তদবির করার লোক নেই। মাসে ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে পোষাতেও পারব না। তাই আমরা মহাসড়কে সিএনজি চালাতে পারি না। ভুলক্রমে বা গ্যাসের জন্য গেলেও আমাদের সিএনজি আটক করে ফেলে হাইওয়ে পুলিশ। পরে হয় মামলা। নতুবা ২-৩ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়। টাকা নেন সোর্সের মাধ্যমে। এরপর ছাড়। যেরার লোক আছে হেরার কোন জামেলা নাই। টিক করছি গাড়িডি বেইচ্ছা দিমু। কারণ আইন হালি গরীবের লাইগ্‌গা। কথা হয় কালীকচ্ছ এলাকার ৪৮ বছর বয়সী ভুক্তভোগী এক সিএনজি চালকের সাথে। তিনি বলেন, সিএনজি আর জানডা-ই আমার পুজি। গত সপ্তাহ দিন আগে অপারেশনের রোগী লইয়া শাহবাজপুরের দিকে রওনা দিছিলাম। মেলাতা গাড়ি পুলিশের সামনে দিয়াই চলতাছে। তাদেরে ধরে না। পুলিশ আমার গাড়িডা আটকাইয়া দিল। অনেক অনুরোধ কইরাও কোন কাম অইল না। শেষে ৩ হাজার টেহা নিয়া ছাড়ল। অহন মালিক কইতাছে আমার দেড় হাজার টেহা দিতে অইব। যত বিপদ গরীবের লাইগ্‌গা। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজালাল আলম বলেন, আসলে মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল শতভাগ বন্ধ হয়নি। বিশেষ নামের কিছু অটোরিকশা দাপটের সাথে চলছে এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন সবই ক্ষমতার বলে হচ্ছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের কোন সদস্য টাকা পয়সা নেয় না।

মাহবুব খান বাবুল

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সরাইলের মহাসড়কে ৪ ঘন্টা বিশেষ কিছু সিএনজি’র দাপট! নেপথ্যে কি?

আপডেট সময় : ০৯:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২

সমগ্র দেশে মহাসড়কে সিএসজি চালিত অটোরিকশা চলাচলের উপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন অনেক আগেই। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল অংশের চিত্র ভিন্ন। তবে জেলা শহরের সাথে দুটি উপজেলার যোগাযোগ ঠিক রাখতে মালিক ও শ্রমিক সমিতির অনুরোধে কুট্রাপাড়া ব্রীজ থেকে মহাসড়কের একটি অংশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল রেখেছেন স্থানীয় প্রশাসন। মহাসড়কের সরাইল এলাকায় সম্প্রতি পরপর কয়েকটি দূর্ঘটনায় ১০-১২ জন নিহতের ঘটনায় সিএনজি চলাচল ঠেকাতে আবারও কঠোর হয় হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। মহাসড়কে সিএনজি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে অভিযানে নামেন হাইওয়ে পুলিশ। শুরূ থেকেই নানা সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। কারণ সাধারণ মালিক ও চালকদের সিএনজি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ নামের কিছু সিএনজি মহাসড়কে চলতে থাকে দেদারছে। প্রশ্ন ওঠে হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছবিসহ সরব হয়ে ওঠে। ক্ষমতার দাপটে বিশেষ কিছু অটোরিকশা চলার কথা স্বীকারও করেছেন হাইওয়ে পুলিশ। ৪-৫ সপ্তাহ পর গতকাল রোববার সরাইলের মহাসড়কে সরজমিনে ৪ ঘন্টা ঘুরে দেখা যায় সেই পুরাতন চিত্র। এর নেপথ্যে রয়েছে নানা কাহিনী। ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের সরাইলের কুট্রাপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে দেদারছে ছেড়ে যাচ্ছে কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশা। বিপরীত দিক থেকেও প্রতি মিনিটে আসছে। অটোরিকশা গুলো কখনো বাস কোচের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। প্রতিযোগিতা করছে ট্রাকের সাথেও। নেই কোন পুলিশি বাঁধা। নেই কোন টেনশন। চলন্ত সিএনজি’র দিকে ক্যামেরা ধরলেই মুছকি হেঁসে গতি বাড়িয়ে দেয় চালক। কথা বলতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যায়। জনৈক চালককে নাম জিজ্ঞাসার পরই আমতা আমতা করে বলেন, “স্যার নাম দিয়া কিতা করবাইন। আমডার গাড়ির দায়িত্ব সাংবাদিক ভাই নিছে। নাম কওঅন যাইত না। মাসের পরে ৪ হাজার টেহা দেয়। কোন জামেলা নাই। কথা হইছে আমডার গাড়িরে আটকাইত না।” একই সড়কে আরেকজন চালক বলেন, “স্যার আমারে বিপদে ফালাইয়েন না। হালি সাংবাদিক না। অনেক উফরের বড় বড় নেতা অ সিএনজি চলার তদবির করে। সড়কে হেরার লোক আছে। তারা দেহাশুনা করে। চালক তাইক্কা মাসের পরে টেহা গুইন্না নে।” দাপুটের সেই অটোরিকশা গুলোর পেছনে লেখা ‘শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ’, ‘হাবিব এন্টারপ্রাইজ’, ‘আল্লাহ ভরসা’, ‘মা-বাবার দোয়া’, ‘জিহাদ এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘আনাস পরিবহন।’ আবার ওই গুলোর সামনে অথবা পেছনে বিশেষ কিছু ষ্টীকার লাগানো আছে। বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে দাপটে চলছে ‘বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’ সহ আরো ৩-৪টি নামের সিএনজি। অনুসন্ধানে জানা যায়, নাম সর্বস্ব পত্রিকার কথিত কতিপয় স্থানীয় সংবাদকর্মী ওইসব সিএনজির মালিক/ চালকদের সাথে মাসিক চুক্তি করেছেন। প্রত্যেকে ১৫/২০/৩০/৪০টি করে অটোরিকশার মালিক সেজে বসেছেন। মাস শেষে ওই টাকার একটা অংশ বিশেষ জায়গায় খরচ দিবেন। আরেকটি অংশ নিজেদের পকেটে। তবে হাইওয়ে পুলিশ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। সড়কে গাড়ি চলবে নাম প্রকাশ করলে সমস্যায় পড়ার ভয়ে একাধিক মালিক বলেন, আমাদের তদবির করার লোক নেই। মাসে ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে পোষাতেও পারব না। তাই আমরা মহাসড়কে সিএনজি চালাতে পারি না। ভুলক্রমে বা গ্যাসের জন্য গেলেও আমাদের সিএনজি আটক করে ফেলে হাইওয়ে পুলিশ। পরে হয় মামলা। নতুবা ২-৩ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়। টাকা নেন সোর্সের মাধ্যমে। এরপর ছাড়। যেরার লোক আছে হেরার কোন জামেলা নাই। টিক করছি গাড়িডি বেইচ্ছা দিমু। কারণ আইন হালি গরীবের লাইগ্‌গা। কথা হয় কালীকচ্ছ এলাকার ৪৮ বছর বয়সী ভুক্তভোগী এক সিএনজি চালকের সাথে। তিনি বলেন, সিএনজি আর জানডা-ই আমার পুজি। গত সপ্তাহ দিন আগে অপারেশনের রোগী লইয়া শাহবাজপুরের দিকে রওনা দিছিলাম। মেলাতা গাড়ি পুলিশের সামনে দিয়াই চলতাছে। তাদেরে ধরে না। পুলিশ আমার গাড়িডা আটকাইয়া দিল। অনেক অনুরোধ কইরাও কোন কাম অইল না। শেষে ৩ হাজার টেহা নিয়া ছাড়ল। অহন মালিক কইতাছে আমার দেড় হাজার টেহা দিতে অইব। যত বিপদ গরীবের লাইগ্‌গা। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজালাল আলম বলেন, আসলে মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল শতভাগ বন্ধ হয়নি। বিশেষ নামের কিছু অটোরিকশা দাপটের সাথে চলছে এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন সবই ক্ষমতার বলে হচ্ছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের কোন সদস্য টাকা পয়সা নেয় না।

মাহবুব খান বাবুল