মাহবুব খান বাবুল: সরাইল থেকে:
দীর্ঘ ১৮ বছর পর আজ বুধবার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সহস্রাধিক নেতা কর্মীর অংশ গ্রহনে সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে মানুষের ঢল নেমেছিল। তবে বৃষ্টি ম্লান করে দিয়েছে সকল আনন্দ। সম্মেলন সরকারি অন্নদা স্কুলের মাঠে হলেও কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে। সভাপতি পদে এডভোকেট মুহাম্মদ নাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পদে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ এমপি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রফিক উদ্দিন ঠাকুরের ছেলে সাইফুল ইসলাম ঠাকুর রাব্বির নাম ঘোষণা করেছেন র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। দলীয় সূত্র জানায়, পূর্ব ঘোষিত এ সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মধ্যে ছিল আনন্দ উচ্ছাস। প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করেই আজ সকাল ১০টার পর থেকেই ব্যানার ফেষ্টুন ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল করে সম্মেলন স্থলে যোগ দিতে থাকেন পদ প্রার্থীদের সমর্থকরা। মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সরাইল সদর। এখানে গ্রূপিং দ্বন্ধে ৪ ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। তাই সম্মেলনকে সামনে রেখে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিল সাধারণ মানুষ। তবে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ছিল অনেকটা সতর্ক অবস্থানে। জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে সরাইলে আনা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। ভোর থেকেই সরাইল সদরের বিভিন্ন গুরূত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করছিল পুলিশ। প্রধান সড়কে যান চলাচল করা হয়েছিল সীমিত। সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আ’লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এডভোকেট মুহাম্মদ নাজমুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। জেলা আ’লীগের দফতর সম্পাদক মো. মনির হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন-আ’লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শ্রী সুজিত রায় নন্দী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১২ এর সংসদ সদস্য ও সরাইল উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ, প্রধান বক্তা জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার ও সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান বাবুল। প্রধান অতিথি বলেন, ইকবাল আজাদ হত্যাকান্ডের পর সরাইলের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই বলে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনীতি থেমে থাকতে পারে না। যারা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী তাদের আ’লীগের কোন কমিটিতে আনা যাবে না। তবে যারা সম্পৃক্ত নয়, রাজনৈতিক গ্রূপিং-সহ বিভিন্ন কারণে ভিকটিম হয়েছেন তাদেরকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। গ্রূপিং দ্বন্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গ্রূপিং করে দলকে ছোট করা যাবে না। সকল ভেদাভেদ ভুলে এখানে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। আরো সুন্দর করতে হবে। আরো পরিস্কার করতে হবে। গ্রূপিংমুক্ত রাজনীতি তৈরী করতে হবে। সরাইল-আশুগঞ্জ আসনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দিবেন তার পক্ষে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে বিজয়ী করতে হবে। আমাদের রাজনীতি জনগণকে নিয়ে। জাতীর পিতা শিখিয়ে গেছেন জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য সারাজীবন লড়াই করেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি লড়াই করেছেন। সফল হয়েছেন। সারা বিশ্বে এখন স্বাধীনতার পতাকা ফত ফত করে উড়ছে। আমরা শুধু মায়ানমার নয়, সমগ্র বিশ্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমরা তাদের আভ্যন্তরিণ সমস্যা নিয়ে কখনো নাগ কলাব না। তাদের সমস্যায় আমাদের সীমান্তে গুলি ছুড়লে আমরা বরদাশত করব না। বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতা। এক সময় প্যান্ডেল ভেদ করে লোকজনের উপর বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। বেলা একটায় দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি ঘোষণা করার আশ্বাস দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত করেন। বিকাল ৩ টায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে বসে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির ৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করেন জেলা আ’লীগের সভাপতি।