ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ১ হাজার ৫শত টাকায় মেলে রক্ত
- আপডেট সময় : ০৬:০১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২ ৭৮৭ বার পড়া হয়েছে
জরুরি ভিত্তিতে মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত চেয়েও রক্ত মিলছে না। এদিকে টাকা দিলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ল্যাব সহকারী রতন মিয়া দালালদের থেকে নেয়া রক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর কাছে বিক্রি করার পর বিষয়টি উন্মোচিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, এমন অভিযোগ আগেও অনেক এসেছে আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এ ধরনের জঘন্য অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। গত মঙ্গলবার(১৭ মে) দিবাগত রাতে সদর হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডের মুমূর্ষু রোগী আল্পনার(১৭) জরুরি ভিত্তিতে ৪ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন হয়। ওই রাতের মধ্যেই দুই ব্যাগ রক্ত হলেই হবে। ওই সময় আল্পনার পিতা সুভাষ ব্লাড ব্যাংকের ‘এ’পজিটিভ গ্রুপের রক্তের জন্য ছোটাছুটি করেন। ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে মেয়ের রক্ত ক্রস ম্যাচিংয়ে পর’ সেখান থেকে সাফ জানিয়ে দেন রক্ত নেই। কিন্তু ল্যাব সহকারি রতন মিয়া জানান, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই ব্লাড ব্যাংক থেকেই দুই ব্যাগ ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া যাবে। বিনিময়ে রতন কে প্রতি ব্যাগের জন্য দেড় হাজার টাকা করে দিতে হবে। বিষয়টি লিখিত অভিযোগ আকারে তত্ত্বাবধায়ক এর কাছে গেলে সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত কেনাবেচা বিষয়ের গোমরটা ফাঁস হয়ে যায়। অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবারে নাসিরনগর উপজেলার সিংহগ্রামের আল্পনা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পিতা তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ভর্তি করেন এবং জানান ৪ব্যাগ রক্ত লাগবে। তখন আল্পনার পিতা সুভাষ সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে যান রক্তের খোঁজে। ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বে থাকা ল্যাব সহকারি রতন তখন তাকে জানায় এখানে রক্ত পাওয়া যায় না তবে তাকে ব্যাগ প্রতি ২হাজার টাকা দিলে সে রক্ত ব্যবস্থা করে দিবে। অসহায় পিতা তখন দেড় হাজার টাকায় রক্ত নিতে রাজি হয় এবং রতনের কাছ থেকে দুইবারে মোট ৩ব্যাগ রক্ত ৪৫০০ টাকায় ক্রয় করে। কিন্তু তাকে দেয়া স্লিপে ২৫০ টাকা উল্লেখ্য থাকায় তিনি এই ব্যাপারে জানতে গেলেই উঠে আসে ব্লাড ব্যাংকের রক্ত ব্যবসার কথা। অসহায় পিতা তখন তার কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত পেতে এবং অভিযুক্ত রতন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ব্লাড ব্যাংক থেকে দেয়া স্লিপ গুলোতে ল্যাব টেকনিশিয়ান সাবিনা ইয়াসমিন এর সাক্ষর থাকায় এই ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্লাড ডোনার কে সেইটা আমি জানি না। নিয়ম অনুযায়ী রক্তদাতা থেকে রক্ত নিতে সরকার নির্ধারিত ফি ২৫০ জমা নিয়ে স্লিপ দিয়েছি। এখানে ডোনার থেকে টাকার বিনিময়ে নেয়া হয়েছে কিনা জানিনা। আমাদের এখান থেকে রক্ত বিক্রি করার কোন নিয়ম নেই এবং এইটা অপরাধ। এই ব্যাপারে ল্যাব সহকারি রতন জানান, উনি(ভুক্তভোগী) তার মেয়ের জন্য রক্ত খুজতেছিল তাই আমি বাইরে থেকে রক্তদাতা মেনেজ করে দিয়েছি। তাদের খরচের জন্যই প্রতি ব্যাগ ১৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে। রক্তদাতার রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া হয়েছিল কিনা বা রক্তদাতা রেগুলার রক্ত বিক্রেতা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এতো কিছু জানি না, তারা টাকার বিনিময়ে রক্ত দেয়। আমি রোগী ব্যবস্থা করে তাদের রক্ত বিক্রি করে দিলে তারা আমাকে ২-৩’শ টাকা দেয়।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ ফাইজুর রহমানকে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগী যেন তার টাকা ফেরত পান এবং ভবিষ্যতে যেন আর এমনটা না হয়, দ্রুতই সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।