মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
রাত পোহালেই ভোট। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন। অপর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক জানিয়েছেন স্ট্রাইকিং ফোর্স-এর তালিকা এখনো আমার হাতে আসেনি। ঝুঁকিপূর্ণ বলতে কিছু নেই। উনাদের কাছে সকল কেন্দ্রই গুরূত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন। তবে প্রতিপক্ষ কর্তৃক কেন্দ্র দখল, বল প্রয়োগ, মোটরবাইক মহড়া দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, জাল ভোট এমন সব ম্যাসেজে এখনো শঙ্কা কাটেনি স্বতন্ত্র প্রার্থী এই আসনের সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সকল সেক্টরের আশ্বাসে স্বস্থিতে পুরোদমে নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন তিনি। আর শাহজাহান আলম সাজু বলছেন স্বাধীনতার পর এখানে নৌকা প্রতীকের এমপি নেই। তাই এবার নৌকার গণ জোয়ার তৈরী হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মৃধার নিজের কেন্দ্রে ও উনার ইউনিয়নে নৌকা জয়লাভ করবে। এই নির্বাচনের ব্যালট কেন্দ্রে যাবে দুই সময়ে। নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন সকালে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আগামীকাল ৫ ফেব্রূয়ারি রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরূ হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহন। সরাইলের ৮৪ টি আর আশুগঞ্জ উপজেলার ৪৮ টি মোট ১৩২ টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহন শেষ হবে বিকাল ৪টায়। এই উপনির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিরা। সরাইলের ৮৪ টি কেন্দ্রই পুরোপুরি প্রস’ত। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের পত্র প্রেরণের কাজও শেষ। ৪৯ টি কেন্দ্রের ব্যালটসহ সকল মালামাল যাবে নির্বাচনের আগের দিন। আর দূর্গম এলাকার ৩৫ টি কেন্দ্রের ব্যালটসহ সকল মালামাল যাবে নির্বাচনের দিন ভোর বেলা।
অনিয়ম দূর্নীতির শঙ্কা দূর করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে সর্বক্ষণ মাঠে থাকবেন প্রশাসন। সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে একজন করে ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবেন। বিজিবি’র স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ৫টি, র্যাবের ৪টি। থাকবে পুলিশের বেশ কয়েকটি স্ট্রাইকিং ফোর্সও। তারা সর্বক্ষণ গোটা উপজেলার কেন্দ্রে ঘুরে তদারকি করবেন। উপজেলা নির্বাচনী সকল কাজ মনিটরিং করছেন দুইজন সহকারী জেলা প্রশাসক। তবে মুঠোফোনে এই সকল তথ্য জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক বলেন আমি এখনো তালিকা পায়নি। এতকিছুর পরও প্রতিপক্ষের চাউরকৃত বিভিন্ন তথ্যে এই আসনের মহাজোটের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট জিয়াউল হক শঙ্কা এখনো কাটেনি। জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা নির্বাচনী মাঠে বলাবলি করছেন, ভোট কে কোথায় দিল সেটা কোন বিষয় না।
কে কত ভোট পেল? এইটাও কোন ফ্যাক্ট নয়। সকল ভোট চলে গেলেও ফলাফল ঘোষণা আসবে নৌকার পক্ষেই। তারা এসব কথাও চাউর করছেন কেন্দ্রে বল প্রয়োগ করবেন। কিছু কেন্দ্র উনারা দখল করে নিবেন। ছাত্রলীগ যুবলীগের মোটরবাইক মহড়া দিয়ে কেন্দ্রে ভোটারদের আতঙ্কগ্রস্ত করবেন। তবে জেলা প্রশাসক, বিজিবি, পুলিশ সুপার, ইউএনও ও অফিসার ইনচার্জসহ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আমি স্বচ্ছ নির্বাচনের বিষয়ে আশাবাদী। এই নির্বাচনটি সরকারের টেষ্ট কেইচ। এখানে অনিয়মের সুযোগ দিয়ে জাতীর জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ও দেশের বাহিরে আস্থা হারাবেন না। আমার জনপ্রিয়তা দেখে অনেকের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নির্বাচনী সভায় বলছেন, আমার কেন্দ্রে উনি জয়লাভ করবেন। হিন্দু মুসলমান সকলে আজ আমাকে ভোট দিতে ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আল্লাহর রহমতে আমিই জয়লাভ করব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম নির্বাচন পূর্ব উদ্ভুদ্ধকরণ সভায় বলেছেন, আসন্ন উপনির্বাচনে কোন ধরণের অনিয়মের সুযোগ নেই। যেকোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে বিশৃঙ্খলা বা বিতর্কিত কোন কাজ করতে চান তা প্রতিহত করতে প্রশাসন হার্ড লাইনে থাকবে। আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই নির্বাচনের দিকে সমগ্র দেশবাসীর নজর থাকবে। গোটা নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম প্রতি মূহুর্তে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। তারপরও কোন প্রার্থীর সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে লিখিত জানাবেন। আমরা দ্রূত ব্যবস্থা নিবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী এই আসনে মহাজোট থেকে নির্বাচিত দুইবারের সাবেক এমপি এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকুন। ১৬ আনা নয়, নির্বাচন হবে ৩২ আনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।’