যান্ত্রিকতায় ভর দিয়ে নয়, সম্প্রতি মোটরবাইকটি নস্ট হওয়ায় পায়ে হেঁটেই পথ চলি। এতে অনেক উপকার অনেক , স্বাস্থ্যর মঙ্গল সহ চেনা মানুষের সাথে দেখা হয়, পুরনো সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। শহরের শহীদ পলু সড়ক অর্থাৎ পুরনো কোর্ট রোডে চলছি। কোর্ট নেই পুরনো উকিল লাব্রেরী নেই তবুও কোর্ট রোড নামটিই রয়ে গেল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আন্দোলনের পর জেলা আন্দোলন পরিষদ এর পক্ষ থেকে এ রোডটিকে আমরা আন্দোলনকারীরা “শহীদ পলু সড়ক” হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য দাবী করেছি। সেই আশির দশকে রোডের মাথায় পাকা নামফলক বানিয়ে নিজ হাতে অংকনও করেছিলাম “শহীদ পলু সড়ক। সেই সময় এক রাতে আমি প্রয়াত বাবু, আলাল রুমন মিলে বেশ কিছু সাইনবোর্ডে কালি দিয়ে মুছে শহীদ পলু সড়কও লিখেছিলাম, তবু কাজ হয়নি। যা হোক আজ যে পরিস্থিতি দেখলাম তাতে এই রোডটির নাম হকার রোড, ফল রোড, চটপটি রোড অথবা যন্ত্রণা রোড রাখলেও অবাস্তব হবে না। যন্ত্রণা নামকরণটি আমার নয়, একজন পথচারীর মুখ থেকে শোনা। পরিস্থিতি যা তা হচ্ছে, সুপার মার্কেটের নির্মাণ কাজের জন্য টিন দিয়ে বেড়া দেয়া বড় অংশের । এতে সংকীর্ণ পথ। এই সংকীণতায় বিভিন্ন অংশে পথচারীদের চলার পথে ড্রেনের উপর স্থান দখল করে রঙ্গিন রঙ্গিন বড় ছাতার আচ্ছাদনে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। মূল পথে দিনের বেলায় বড় ট্রাক, সৌখিন প্রাইভেট কার, সরকারী বেসরকারী জিপ গাড়ি চলছে। রিক্সা অটোতো আছেই। পথচারীরা চলছেন ধাক্কা ধাক্কি করে, রিক্সাগাড়ির খোঁচা খেয়ে । বাদানুবাদ মারামারিও হয় বলে ধারনা তবে প্রত্যেকেই এ পথে চলতে গিয়ে যন্ত্রণার কারণে প্রকাশ্যে না হোক মনে মনে যে কতৃপক্ষকে গালাগালি করেন তা পথচারীদের মুখ দেখলেই বোঝা যায়। যা হোক এ পথে যন্ত্রণার কথা আমার মূল বিষয় নয়। কেন না , শুনেছি এবং দেখেছি পৌর কতৃপক্ষের লোকজন লাল পোষাক পড়ে হুইসেল বাজিয়ে দখল উচ্ছেদ উৎসব করেছেন, কিন’ কাজ হয়নি। তবে ইদানিং এ পথ নিয়ে তেমন ভাবনা তৎপরতা নেই , তা স্পস্ট। শুনেছি সুপার মার্কেটেরও নির্মাণ কাজ বন্ধ ঠিকাদারের বিল সংক্রান্ত বিসয় নিয়ে কবে নাগাদ টিনের বেড়া উঠবে তারও কোন ধারনা করা যায় না। অঅমার লিখার মূল বিষয় হচ্ছে এ পথে দোয়া। পায়ে হেঁটে পথ চলে আমাকে আদর করেন এমন একজনের দোয়া পেয়েছি আজ এই যন্ত্রণার পথে। তিনি একজন নারী এবং এই শহরের একটি বিদ্যানিকেতনের প্রধান এবং একটি ঐতিহ্যবাহী টিউটোরিয়াল হোমেরও প্রধান। উনার সাথে দেখা হতেই সালাম দিলাম, দেখলাম রাস্তা চলতে গিয়ে বিরক্ত ,আর এই বিরক্তির মাঝেই সুন্দর মুখে মিষ্টি হাসিতে আমার সালামের উত্তর দিলেন, শুধু তাই ই না, বল্লেন , তোমার লেখা অন্নদা স্কুলের গানটা শুনেছি ভাল লেগেছে, আমি বল্লাম, আপনি আদর করেন বলেই প্রসংশা করছেন, তিনি বল্লেন, না তোমাকে অনেক দোয়া করি। যন্ত্রণার মাঝেও তিনি দোয়া করলেন মনটা ভরে গেল। পরে উনি রাস্তার এ পাড় থেকে ও পাড়ে যাবেন আমি সহায়তা করলাম। উনার সাথে থাকা একজন সচতেন নারী বলে উঠলেন, উন্নত দেশে পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্য পথ চলাকে প্রাধান্য দেয় সবাই, তাই তারা উন্নত, আর আমাদের এখানে তা উল্টো , পথ পাড় হতে গিয়ে রিক্সা গাড়ির খোঁচা, ধাক্কা খেতে হয়, রক্ত ঝড়ে প্রাণও যায়। ঐ শিক্ষা প্রধান তখন তুমুল ক্ষোভ নিয়ে বল্লেন, আমাদের এখানে সব বন্য সব বন্য। কথা শেষে বল্লেন বাসায় এসো। মনটা আমার ভরে গেল আমিও যন্ত্রণা ভুলে গেছি আমার মনে তখন দোয়া আর আদরের আবেশ। এই দোয়ার কথা ভাবতেই মনে হলো। পৌর কতৃপক্ষ যদি এ পথটির সংকীর্ণতার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করেন তবে তারাও দোয়া পাবেন হাজার হাজার নাগরিক পথচারীর।
News Title :
ব্যতিক্রমী পথচলা : কোর্ট রোডে যন্ত্রণার মাঝেও দোয়া– আল আমীন শাহীন
- Reporter Name
- Update Time : 09:36:32 pm, Tuesday, 30 May 2023
- 261 Time View
Tag :
জনপ্রিয় খবর