শাহনেওয়াজ শাহ্ঃ বিজয়নগর থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মোছা. লাকী আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তাকে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন নিহতের পরিবার। নিহত লাকী আক্তার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের মোঃ খোকন মিয়ার মেয়ে। গত ৯ অক্টোবর দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় লাকী আক্তারের বাবা মোঃ খোকন মিয়া স্বামী মাঈন উদ্দিনসহ আট জনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল নং -৩ এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীগণ হলেন, মৃত আঃ কাদির এর ছেলে রফিকুল ইসলাম উনা মিয়া (৫০), রফিকুল ইসলাম উনা মিয়ার ছেলে মাঈন উদ্দিন (২৫) ও রবেল মিয়া (২২), উনা মিয়ার মেয়ে শিল্পি বেগম(২০), উনা মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৪২), হুমায়ূন মিয়ার স্ত্রী রানু বেগম (২৮), মৃত আঃ কাদির এর ছেলে নজু মিয়া (৪৫), মৃত গনি মীর এর ছেলে আওয়াল মিয়া (৫৫)।
নিহত লাকী আক্তারের পরিবার জানায়, ৩ বছর আগে ১ অক্টোবর ২০১৯ ইং তারিখে লাকী আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম উনা মিয়ার ছেলে মাঈন উদ্দিন এর সাথে ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা রেজিষ্ট্রি কাবিনে বিয়ে হয়। বিবাহের সময় বরকে নগদ ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা এবং দুই ভরি অলংকার দিয়েছিল। বিবাহের ৮/৯ মাস পর মাঈন উদ্দিন সৌদি আরব চলে যায়। সৌদি আরব যাওয়ার পর্যায়ে মেয়ের বাবা থেকে ২,০০,০০/- (দুই লক্ষ) টাকা কর্জ নিয়েছিল। যা এখনো ফেরত দেয় নাই। নিহত লাকী আক্তারের ২ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মাঈন উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন বাদীর নিকট হইতে যৌতুক স্বরূপ ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করিতে থাকিলে বাদীর কন্যা লাকী আক্তার তাতে অপরাগতা প্রকাশ করিলে আসামীগণ তাকে শারীরিক ও মানষিক ভাবে অত্যচার করে মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে। এবং আসামীগণ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার দিন আনুমানিক দুপুর সাড়ে বারটার সময় বাদীর মোবাইল ফোনে লাকী আক্তার তাকে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করিতেছে বলে জানান। তৎক্ষনাৎ বাদী মোঃ খোকন মিয়ার ছেলে মোঃ তুহিন মিয়াকে (১২) অটোরিকশা যোগে লাকী আক্তারকে শশুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতে পাঠালে সে গিয়ে দেখে তার বোনকে মারধর করতেছে। তুহিন মিয়া চিৎকার করিয়া তার বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। বিকাল ৩ ঘটিকার সময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক লোক বাদীর মোবাইল ফোনে কন্যার মৃত্যু সংবাদ জানান। বাদী খোকন মিয়া কতেক স্বাক্ষীসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাকী আক্তারকে উঠানে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত লাকী আক্তারের গলার নিচে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং বাম হাতের কবজির উপর ব্লেড দ্বারা রক্ত কাঁটা ৫ টি দাগ দেখা যায়।
মামলার বাদী লাকী আক্তারের পিতা মোঃ খোকন মিয়া জানান, আমার মেয়েকে তার শুরর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য নির্যতন করে মেরে ফেলছে। আমি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় ২ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি, আবার মেয়ের জামাই বিদেশ যাওয়ার সময় ২ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আবার শরুর বাড়ির লোকজন জায়গা কিনবে বলে ৩ লাখ টাকা দাবী করে। আমি টাকা দিতে পারি নাই বলে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলছে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার মেয়েকে হত্যাকারীদের বিচার চাই।