Dhaka 8:58 am, Saturday, 27 July 2024
News Title :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ভারতের আবৃত্তি সংস্থা শ্রুতির শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা নবীনগরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তরী বাংলাদেশ বিজয়নগর উপজেলা আহবায়ক কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ১৮ সদস্যকে সংবর্ধণা প্রদান মেসার্স সরকার কনস্ট্রাকশনে একজনকে নিয়োগ দেয়া হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত সরাইলে ৭০ লক্ষাধিক টাকা কর আদায় ৩ কর্মকর্তাকে অভিনন্দন স্মারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ল্যাপটপ প্রদান গুজবরোধে সাইবার আইন কাজে লাগানো বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা জানালেন নেদারল্যান্ডের উপ-রাষ্ট্রদূত

বাংলা নববর্ষ ও কিছু কথা ”এইচ.এম. সিরাজ”

  • Reporter Name
  • Update Time : 12:53:24 pm, Friday, 14 April 2023
  • 124 Time View

hm siraj

চারদিকেই এখন পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ পালনের ঘনঘটা। নেহায়েতই ‘উৎসব’ পালন করার মওকাতেই আমরা আজকাল যেনো মহাব্যস্ত। কিন্ত এই ‘বাংলা নববর্ষ’ আমরা পেলামম ঠিক কখন থেকে? মোদ্দাকথা এর শুরু কখন? সেই ইতিহাস কি আমরা জানি? জানতে চাই? বাংলা সন প্রবর্তিত হয় ভারতবর্ষে। বাংলা সনের প্রবর্তন করেন ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর, আর এর বিনির্মাতা চিন্তক হলেন ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী। তাদের কি আমরা কদ্যপিও স্মরণ করি-করতে চাই?

মহামতি আকবর। আকবর দ্যা গ্রেট। যে নামেই ডাকা হোকনা কেন, তিনি হলেন মোঘল বংশের সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। তিনি ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। ভারতের মোঘল সাম্রাজ্য তথা মোঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ওরফে বাদশাহ্ বাবর এর দৌহিত্র হলেন সম্রাট আকবর। অপরদিকে তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুন এর পুত্র। আর এই আকবরের শাসনামলেই ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু হয়। শুরু থেকে ম্যালা সময় অবধি বাংলা নববর্ষ তার নিজস্ব ঢঙ অনুযায়ী-ই পালিত হতো। কালের বিবর্তনে এতে নানান সংযোজন-বিয়োজন ঘটে, সময়ের পরিক্রমায় হারায় তার নিজস্বতা।

মূলত: প্রজা সাধারণের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার সুবিধার্থেই সম্রাট আকবরের একান্ত ইচ্ছাতে তৎকালীন বাংলার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তক ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের নিয়মানুবর্তিতা তৈরি করেন। প্রজা সাধারণকে খাজনা প্রদানে উৎসাহ যুগাতে এই নিয়মানুবর্তিতায় কিছু আচার সংযোজন করা হয়, যাতে মানুষ এটাকে একরকম উৎসবানন্দ বোধ করেন। নতুন করে প্রবর্তিত এই বাংলা সনে ‘সৌরবর্ষ’ বা খ্রিষ্টীয় সন এবং ‘চান্দ্রবর্ষ’ বা আরবি বা হিজরি সনের উপর ভিত্তি করা হয়। তাছাড়া সম্রাট আকবরের মসনদে আরোহণকাল চান্দ্র সন ৯৬৩ হিজরিকে সৌর গণনায় আনা হয়। সৌর এবং চান্দ্র এই দু’টি সনের উপর নির্ভর করেই প্রবর্তন করা হয় বাংলা সন। সৌর কেন্দ্রিক ছিলো বলেই সপ্তাহের বারের নামগুলো রাখা হয় সৌর বলয়ের সঙ্গে মিলিয়ে। যেমন- মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ইত্যাদি।

মূলত সৌর পঞ্জিকা কেন্দ্রিক এবং কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ৩০ শে চৈত্র তারিখে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দিন ধার্য্য করার লক্ষ্যেই বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করা হয়। চৈত্র মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যেসব কৃষকেরা তাদের বাৎসরিক বকেয়া খাজনাদি পরিশোধ করতে সক্ষম হতেন, পরদিন তাদেরকেই অত্যন্ত সাদরে আপ্যায়ন করা হতো। আর এ দিনটিই হচ্ছে পহেলা বৈশাখের উৎসব। আগের বছরের খাজনা আদায় করতে সক্ষম কৃষকদেরকে পয়লা বৈশাখের এই দিনটিতে তথা নববর্ষের দিনে মিষ্টান্ন পরিবেশন করানোর মাধ্যমে করা হতো আপ্যায়ন। আর সেই আনন্দায়োজনের সাথে সাথেই পরবর্তী আরো এক বছরের জন্য সেইসব কৃষকদের মাঝে নতূন করে দেয়া হতো জমির বন্দোবস্ত।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েই এগুতে থাকে বিশ্ব। এরই ধারাবাহিকতায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন যেনো এক চলমান প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়া কদ্যপিও থেমে নেই, কেবলই গতিশীল। ঠিক তেমনি গতিধারায় কৃষিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থাতেও ক্রমেই বিকাশ ঘটতে থাকে শিল্পের। প্রসার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের। কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করতে থাকেন বাঙালিরা। কিন্তু তাই বলে বাঙালি তার নিজ ঐতিহ্যকে ছাড়েনি কিছুতেই। চৈত্র মাসের শেষের দিনটিতে যেমনি করে কৃষকদেরকে সারা বছরের বকেয়া খাজনা আদায় করতে হতো, তদ্রুপ এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন ব্যবসাতেও। সারা বছরের বকেয়া আদায়ের কৌশলগত আরেকটি উপায়ও বের করেন তারা। এক্ষেত্রে বকেয়াদারদের সম্মানে নিমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। পরিবেশন করানো হয় মিষ্টান্ন। এই আনন্দায়োজনে সামিল হতে তারাও বকেয়া মিটিয়ে ফেলতে হন উদ্বুদ্ধ। একেই বলা হয় ‘হালখাতা’ উৎসব।

এখন বিশ্বায়নের যুগ। সেই রাজা-জমিদার আজ আর নাই, তাদের জমিদারিও নাই; ঘটা করে খাজনা পরিশোধের ঝামেলাও নেই। আবার সেই ব্যবসা-বাণিজ্যের হালখাতা অনুষ্ঠানও আজকাল তেমনটি নাই। তবে থেকে গেছে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি বাংলা নববর্ষ গণনা আর বর্ষবরণ উৎসব। এক কালের খাজনা পরিশোধের দিন- পরবর্তীকালের হালখাতা অনুষ্ঠান এসব ঘিরেই আজ রূপ নিয়েছে অসম্প্রাদায়িক বাঙালিদের প্রাণের আনন্দ উৎসবে।একজন বাঙালি হিসেবে আমিও এই উৎসবের অংশীদার বটি। সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।

®এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, গ্রন্থাগার সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল

fapjunk
© All rights reserved ©
Theme Developed BY XYZ IT SOLUTION

বাংলা নববর্ষ ও কিছু কথা ”এইচ.এম. সিরাজ”

Update Time : 12:53:24 pm, Friday, 14 April 2023

চারদিকেই এখন পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ পালনের ঘনঘটা। নেহায়েতই ‘উৎসব’ পালন করার মওকাতেই আমরা আজকাল যেনো মহাব্যস্ত। কিন্ত এই ‘বাংলা নববর্ষ’ আমরা পেলামম ঠিক কখন থেকে? মোদ্দাকথা এর শুরু কখন? সেই ইতিহাস কি আমরা জানি? জানতে চাই? বাংলা সন প্রবর্তিত হয় ভারতবর্ষে। বাংলা সনের প্রবর্তন করেন ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর, আর এর বিনির্মাতা চিন্তক হলেন ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী। তাদের কি আমরা কদ্যপিও স্মরণ করি-করতে চাই?

মহামতি আকবর। আকবর দ্যা গ্রেট। যে নামেই ডাকা হোকনা কেন, তিনি হলেন মোঘল বংশের সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। তিনি ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। ভারতের মোঘল সাম্রাজ্য তথা মোঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ওরফে বাদশাহ্ বাবর এর দৌহিত্র হলেন সম্রাট আকবর। অপরদিকে তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুন এর পুত্র। আর এই আকবরের শাসনামলেই ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু হয়। শুরু থেকে ম্যালা সময় অবধি বাংলা নববর্ষ তার নিজস্ব ঢঙ অনুযায়ী-ই পালিত হতো। কালের বিবর্তনে এতে নানান সংযোজন-বিয়োজন ঘটে, সময়ের পরিক্রমায় হারায় তার নিজস্বতা।

মূলত: প্রজা সাধারণের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার সুবিধার্থেই সম্রাট আকবরের একান্ত ইচ্ছাতে তৎকালীন বাংলার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তক ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের নিয়মানুবর্তিতা তৈরি করেন। প্রজা সাধারণকে খাজনা প্রদানে উৎসাহ যুগাতে এই নিয়মানুবর্তিতায় কিছু আচার সংযোজন করা হয়, যাতে মানুষ এটাকে একরকম উৎসবানন্দ বোধ করেন। নতুন করে প্রবর্তিত এই বাংলা সনে ‘সৌরবর্ষ’ বা খ্রিষ্টীয় সন এবং ‘চান্দ্রবর্ষ’ বা আরবি বা হিজরি সনের উপর ভিত্তি করা হয়। তাছাড়া সম্রাট আকবরের মসনদে আরোহণকাল চান্দ্র সন ৯৬৩ হিজরিকে সৌর গণনায় আনা হয়। সৌর এবং চান্দ্র এই দু’টি সনের উপর নির্ভর করেই প্রবর্তন করা হয় বাংলা সন। সৌর কেন্দ্রিক ছিলো বলেই সপ্তাহের বারের নামগুলো রাখা হয় সৌর বলয়ের সঙ্গে মিলিয়ে। যেমন- মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ইত্যাদি।

মূলত সৌর পঞ্জিকা কেন্দ্রিক এবং কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ৩০ শে চৈত্র তারিখে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দিন ধার্য্য করার লক্ষ্যেই বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন করা হয়। চৈত্র মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যেসব কৃষকেরা তাদের বাৎসরিক বকেয়া খাজনাদি পরিশোধ করতে সক্ষম হতেন, পরদিন তাদেরকেই অত্যন্ত সাদরে আপ্যায়ন করা হতো। আর এ দিনটিই হচ্ছে পহেলা বৈশাখের উৎসব। আগের বছরের খাজনা আদায় করতে সক্ষম কৃষকদেরকে পয়লা বৈশাখের এই দিনটিতে তথা নববর্ষের দিনে মিষ্টান্ন পরিবেশন করানোর মাধ্যমে করা হতো আপ্যায়ন। আর সেই আনন্দায়োজনের সাথে সাথেই পরবর্তী আরো এক বছরের জন্য সেইসব কৃষকদের মাঝে নতূন করে দেয়া হতো জমির বন্দোবস্ত।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েই এগুতে থাকে বিশ্ব। এরই ধারাবাহিকতায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন যেনো এক চলমান প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়া কদ্যপিও থেমে নেই, কেবলই গতিশীল। ঠিক তেমনি গতিধারায় কৃষিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থাতেও ক্রমেই বিকাশ ঘটতে থাকে শিল্পের। প্রসার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের। কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করতে থাকেন বাঙালিরা। কিন্তু তাই বলে বাঙালি তার নিজ ঐতিহ্যকে ছাড়েনি কিছুতেই। চৈত্র মাসের শেষের দিনটিতে যেমনি করে কৃষকদেরকে সারা বছরের বকেয়া খাজনা আদায় করতে হতো, তদ্রুপ এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন ব্যবসাতেও। সারা বছরের বকেয়া আদায়ের কৌশলগত আরেকটি উপায়ও বের করেন তারা। এক্ষেত্রে বকেয়াদারদের সম্মানে নিমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। পরিবেশন করানো হয় মিষ্টান্ন। এই আনন্দায়োজনে সামিল হতে তারাও বকেয়া মিটিয়ে ফেলতে হন উদ্বুদ্ধ। একেই বলা হয় ‘হালখাতা’ উৎসব।

এখন বিশ্বায়নের যুগ। সেই রাজা-জমিদার আজ আর নাই, তাদের জমিদারিও নাই; ঘটা করে খাজনা পরিশোধের ঝামেলাও নেই। আবার সেই ব্যবসা-বাণিজ্যের হালখাতা অনুষ্ঠানও আজকাল তেমনটি নাই। তবে থেকে গেছে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি বাংলা নববর্ষ গণনা আর বর্ষবরণ উৎসব। এক কালের খাজনা পরিশোধের দিন- পরবর্তীকালের হালখাতা অনুষ্ঠান এসব ঘিরেই আজ রূপ নিয়েছে অসম্প্রাদায়িক বাঙালিদের প্রাণের আনন্দ উৎসবে।একজন বাঙালি হিসেবে আমিও এই উৎসবের অংশীদার বটি। সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।

®এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, গ্রন্থাগার সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।