মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
একের পর নাটকীয়তা চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আসন্ন উপনির্বাচনের মাঠে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার হঠাৎ মহাজোটের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁনোর লিখিত বিবৃতি। থমকে গেছে এই আসনের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। ভাবনায় পড়ে গেছেন সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। উপনির্বাচনকে ঘিরে কি ঘটতে যাচ্ছে সরাইল আশুগঞ্জে? এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ দলীয় ৩ নেতার এক সাথে মনোনয়ন প্রত্যাহারও ভাবিয়ে তুলেছিল ভোটারদের। বিএনপি দলীয় পাঁচ বারের এমপি প্রতিমন্ত্রী সাত্তারের সংসদ সদস্য পদ ত্যাগ। ১১ ডিসেম্বর দল ত্যাগ। একই শুন্য আবার এমপি হতে মনোনয়নপত্র ক্রয়। পরের দিনই বিএনপি’র সকল পদ পদবিসহ সদস্য পদ থেকে সাত্তারকে দেয়া হয় অব্যাহতি। সাত্তারের ছেলে মাঈনুল হাসান তুষারের মিছিল সহকারে বীরদর্পে মনোনয়ন জমা। আস্তে আস্তে ফাঁকা হচ্ছে ভোটের প্রতিদ্বন্ধিতার মাঠে। তাহলে কি সর্বশেষে প্যানাল্টি শোটেই গোল করবেন ৮৪ বছর বয়সের উকিল আবদুস সাত্তার। উনার সুবিধার্থেই কি হচ্ছে এমন নাটক? গত মঙ্গলবার রাত থেকেই একটি সংবাদ ভাসছিল সরাইলের বাতাসে। অবশেষে গতকাল বুধবার দুপুরে তা সত্যি হলো। উপনির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁনোর ঘোষণা দিলেন জিয়াউল হক মৃধা। অথচ আসন্ন নির্বাচনে তিনিই ছিলেন সরাইল আশুগঞ্জের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। বুধবার দুপুরে এক লিখিত বিবৃতিতে মৃধা বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য এমপি হয়ে জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা বাস্তবায়ন করা কখনো সম্ভব হবে না। তাই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১ ফেব্রূয়ারির উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। ওই সময়ে এই আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়নে নির্বাচন করে পরপর দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ কর্তৃক সূচিত বহুমুখী উন্নয়নের ধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। আসন্ন উপনির্বাচন পরবর্তী সময়কাল খুবই সংক্ষিপ্ত। এই সময়ের মধ্যে জনগনের কাছে দেয়া প্রতিশ্রূতি পূরণ করা দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিতব্য আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমার আসনের জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে জয়ী হয়েই উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করব। তিনি সকল সমর্থক শভাকাঙ্খী তথা নির্বাচনী এলাকার সকল জনগনের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ৫ বারের এমপি একাধিক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ও ৩৭ বছর ক্ষমতার চেয়ারে থাকা সাত্তার বললেন, অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আগামী ৮-৯ মাস উনাকে এমপি থাকতে হবে। আর মৃধা বলছেন, এই ৮-৯ মাসে কিছুই করতে পারবেন না। তাই সরে দাড়াঁলেন। একজন ধরে রাখলেন। আরেকজন ছেড়ে দিলেন। কি মজার খেলা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৃধার একজন সমর্থক বলেছেন, মৃধা মানসিক ভাবে চাপে আছেন। এর বেশি কিছু বলা যাবে না। সরজমিনে দেখা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত নির্বাচনের কোন ধরণের আমেজ ছিল না সরাইলে। আর গতকাল মৃধার ঘোষণার পর থেকে আরো স’বির হয়ে পড়েছে নির্বাচনী মাঠ। একটি সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যে ধরণের উৎসাহ উদ্দীপণা থাকার কথা এর কিছুই নেই। কোন ধরণের আলোচনা নেই হোটেল রেস্তোরা ও আড্ডায়। ১ ফেব্রূয়ারি পর্যন্ত কতজন প্রার্থী মাঠে থাকবেন? সেই প্রশ্ন নিয়েই এখন আলোচনামুখর ভোটাররা। শেষ পর্যন্ত শুধু উকিল আবদুস সাত্তার আর কেউ না ও থাকতে পারেন। এমন ধারণাও পোষণ করছেন নির্বাচনী এলাকার মানুষ। সর্বশেষে কি ঘটতে যাচ্ছে আমরা অনেকটা বুঝতে পারছি বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ।