দলিল দখল মামলা আপত্তি উপেক্ষা করেই নামখারিজ ডিসিআর-এ স্বাক্ষরের ৭ দিন পর শুনানি!
- আপডেট সময় : ০২:৩৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে
মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
৩৪ বছর আগের সাফকাবলা দলিল। বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। বিতর্কিত বিএস বাতিলসহ আদালতে চলমান একাধিক দেওয়ানী মামলা ( নং-২০০/২২ ও ১৫/২৩)। মামলা মন্ত্রণালয়ের আইন,বিধি ও পরিপত্রসমূহে বর্ণিত নির্দেশনা বিবেচনায় জায়গাটির নাম খারিজ করা যাবে না মর্মে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার ৩টি প্রতিবেদন। দলিলমূলে মালিক কালু মিয়ার ওয়ারিশদের লিখিত আপত্তি । কোনটিই আমলে নেননি সহকারী কমিশনার। নামখারিজের ডিসিআর-এ স্বাক্ষরের ৭ দিন পর এসি ল্যান্ড করেছেন শুনানি। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ (গোগদ) গ্রামের মো. হারূ মিয়া গং ও হযরত আলী গং দের। হযরত আলীদের অভিযোগ রহস্যজনক কারণে তাদের উপর অবিচার করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি জারি করা ‘দলিল যার জায়গা তার’ এই প্রতিপাদ্যের কবর রচনা করা হয়েছে।
হারূ মিয়া বলছেন, আমরাই জায়গার মালিক। সরজমিনে দলিল, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোগধ গ্রামের প্রয়াত সরবুদ্দিনের ছেলে আরজু মিয়া থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর ৩৩৮২ নম্বর দলিলে ৪৪ শতক ও ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই ২১৮৩ নম্বর দলিলে ১১ শতকসহ মোট ৫৫ শতক জায়গা ক্রয় করে মালিক হন প্রয়াত আব্দুল সহিদ মিয়ার ছেলে মো. কালু মিয়া। ওয়ারিশ সূত্রে কালু মিয়ার ছেলে হযরত আলী গংরা জায়গাটিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভোগদখলে আছেন। দলিল থাকায় জায়গাটির নামখারিজ করেননি কালু মিয়া। বিএস জরিপের সময় কালু মিয়ার নামে বিএস খতিয়ান না হয়ে ভুলবশত: আরজু মিয়ার নামে ১৬৭ নং বিএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়। দীর্ঘ দুইযুগ পর পিতার নামীয় বিএস দিয়ে কালু মিয়ার নামে দলিল করা ওই জায়গা মোকদ্দমা নং-১৯৫২/২০১৫-১৬ এর মাধ্যমে নামজারী ও জমাখারিজ করে ফেলেছেন আরজু মিয়ার ওয়ারিশ হারূ মিয়া গংরা। বিতর্কিত ওই বিএস বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করেছেন আলফাজ ও হারূ গংরা। কালু মিয়ার দলিলকে আদালতে জাল প্রমাণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন হারূ মিয়া। এক সময় মামলাটিকে (৫১৫/২০২১) ফরমাল ডিফেক্ট এর অজুহাতে উঠিয়ে নিয়েছেন হারূ।
জায়গার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় থেমে নেই হারূরা। তাদের সাথে যুক্ত হয় স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। সালিসে বসে আলফাজ ও হযরত আলীদের পক্ষে রায় দিলেও রহস্যজনক কারণে নিস্পত্তির কোন প্রমাণ দেননি। পরবর্তীতে ওই সালিসকারকরাই হারূদের শেল্টার দিতে থাকেন। হারূরা জায়গাটি গোপনে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়। সম্প্রতি আবারও ওই জায়গাটির নাম খারিজের আবেদন (মামলা নং-৩৩৪৫/ ২০২২-২৩, ৫৫০৪/২০২২-২৩ ও ৫২৪/২০২৩-২৪) করেছেন হারূ গংরা। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের তিনবারই প্রতিবেদনে লিখেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন,বিধি ও পরিপত্রসমূহে বর্ণিত নির্দেশনা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও কাগজপত্র/রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেওয়ানী মামলা চলমান থাকায় নামজারির প্রস্তাব দেওয়া গেল না। এর মাত্র ১৫ দিন পর শেষ (চতুর্থ) প্রতিবেদন দাখিলের আগে নামখারিজ বন্ধ থাকার শর্তে হযরত আলীদের কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন আবুল খায়ের। টাকা না দেওয়ায় ০৩.০৮.২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে আবুল খায়ের নামজারির পক্ষে প্রস্তাব দেন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ওই প্রতিবেদন থেকে মামলা ও আইনের কথা মুছে ফেলেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী।
হযরত আলী বলেন, সাবকাবলা দলিল মূলে আমার বাবা কালু মিয়া এই জায়গার মালিক। নামখারিজ না করার সুযোগ নিয়েছে হারূ গংরা। বিতর্কিত বিএস বাতিলের মামলার কার্যক্রম চলমান আছে। হারূরা মামলার জবাব দেয় না। বাবার নামের দলিল বাতিলের মামলা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বাধ্য হয়ে ওই মামলা প্রত্যাহার করেছেন হারূ। মামলা চলমান রেখেই আবার গোপনে জায়গাটি অন্যত্র বিক্রি করেছেন। আদালত যে দলিলটি এখনো বাতিল করেনি সেই দলিলকে কোন গুরূত্ব না দিয়ে আপত্তি দেওয়া সত্বেও জায়গাটির নামখারিজ করে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার। ৩০.০৮.২৩ খ্রি. তারিখে আমাদের ডেকে নিয়ে শুনানি করেছেন তিনি। হারূ মিয়া মুঠোফোনে নিজের দায়ের করা দেওয়ানী মামলা একসময় প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কালু মিয়ার দলিল বাতিলের মামলায় আমার উকিল ভুল করেছেন। ছয় বছরে উকিল কিছুই করতে পারেনি। বিএস বাতিলের মামলার জবাব সময় হলে দিব।
হারূ মিয়ার সাথে কথা শেষ করার ৩ মিনিট পরই ০১৯৬১-৫৪৬২১৮ নম্বর থেকে প্রতিবেদকের ০১৭১৩-৬০৬৭৩১ নম্বরে ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় না দিয়ে ধমকের স্বরে বলেন, আপনি কে? হারূ মিয়াকে আপনি কী জিজ্ঞাসা করেছেন? আপনি মিডিয়ার লোক না রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হোন। আমার কী? আপনি ওই বিষয়ে না গলাতে গেছেন কেন? আমি আপনাকে দেখে নিব।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের আইনের উল্লেখ করে নামখারিজ না করার ৩ টি প্রস্তাব প্রেরণের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে পারব না। আপনার কোন কথা থাকলে এসিল্যান্ড স্যারের সাথে বলুন। কথা শেষ করার আগেই তিনি লাইন কেটে দেন। সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা বলেন, রেকর্ডপত্র দেখেই কাজ করা হয়েছে। ডিসিআর-এ স্বাক্ষরের ৭ দিন পর শুনানি করলেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অফিসে আসেন। সব কিছু দেখে কথা বলব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন বলেন, এর আগেও আরেকটি শুনানী হয়েছে। ওইদিন হযরত আলীদের কাগজপত্র দেখে আবার কথা বলেছে। এখনো বিষয়টি শেষ হয়ে যায়নি। যা কিছু করা হয় নিয়মের মধ্যেই করা হবে।