ঢাকা ০৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোঃ ইসলাম, অগ্নিসংযোগ মামলায় গ্রেফতার টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে ইউপিজি’র অগ্রণী ভূমিকা ২০২৫-এ গোল্ড প্রেসিডেন্ট’ সম্মাননা পেলেন রোটারিয়ান ইঞ্জিনিয়ার কামাল উদ্দীন কারাগারে টাকা ছাড়া মেলেনা বন্দিদের সাক্ষাত পেশাগত অধিকার আদায়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত কমিটির বিজয়নগরে নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ তানভীর জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি প্রদান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিখোঁজ শাফওয়ান হোসেনকে পাওয়া গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ‌উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাফওয়ান হোসেন(শাওন) নিখোঁজ বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার শ্যামলকে ফুলেল শুভেচ্ছা

চার দশক পর-সরাইলে বিয়ে বাড়িতে কলা গাছের গেইট!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২ ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময় পর সরাইলে দেখা মিলেছে কলা গাছের গেইটের। গত সোমবার দুপুরে সরাইলের পল্লী এলাকা জয়ধরকান্দি ও মহিষবের গ্রামের একটি বিয়েতে গেইটটি স্থাপন করা হয়েছে। হঠাৎ এমন একটি গেইট দেখে আমন্ত্রিত অনেকেই হতকিচত হয়ে পড়েন। তবে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্য হয়েছেন সরাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শের আলম মিয়া। তিনিই প্রথম ঘটনাস্থল থেকে গেইটের সংবাদটি প্রচার করেন। বিয়ে বাড়ির অতিথি ও প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ সূত্র জানায়, এক সময় গ্রাম এলাকার বিয়েতে পালকিতে করে বর যেত পাত্রীর বাড়িতে। বরযাত্রীরা যেত পায়ে হেঁটে। বিয়ে হত রাতে। তখন অধিকাংশ বিয়েতে গেইট ছিলই না। এরপর আসল রিকশা ও নৌকা। একটু পরিবর্তন হয়ে আসল কলা গাছের গেইট। সাথে শহর এলাকায় এক জাতীয় গাছের পাতা দিয়ে তৈরী করা হত গেইট। ওই পাতা গুলোকে বলা হত গেইট পাতা। বরের সাথে বাতাসার পাতিল না আনলে ঝামেলা বেঁধে যেত। মারামারিও হত। বর ও বরযাত্রীদের খাবারের আয়োজন করা হত বাংলো ঘরের মেঝেতে। বিছানার উপর ছাদর। ছাদরের উপর খাবারের উ”ছীষ্ট ফেলার জন্য দেওয়া হত দস্তরখানা। এ ভাবে চলে যায় দীর্ঘদিন। কালের আবর্তে আসে অনেক পরিবর্তন। আশি’র দশকের পর আস্তে আস্তে বিয়ের সময়, ওই গেইট ও বসার স্থানে পরিবর্তন আসতে থাকে। এক সময় এ গুলো হারিয়েই যায়। আসে ডেকোরেশনের প্রচলন। বিয়ের অনুষ্ঠান হয় দিনে। বাহিরের খোলা মাঠে বা উঠানে উপরে ত্রিপল দিয়ে চারিদিকে সাটিয়ে দেয়া হয় বাহারি রং-এর কাপড়। টেবিল, প্লেট, গ্লাস সহ সবকিছু ডেকোরাটার্স নির্ভর হয়ে পড়ে। গেইট তৈরী হয় অত্যাধুনিক ডিজাইনের। বিত্তশালীরা আয়োজন করেন বড় বড় কমিউনিটি সেন্টারে। বাঁশের সাহায্যে বিভিন্ন রং ও ধরণের কাপড় ব্যবহার করে বাড়ানো হয় গেইটের সৌন্দর্য। ফলে গত চার দশক ধরে মানুষে ভুলেই গিয়েছে রাতের বিয়ে, কলাগাছ, গেইট পাতা ও দস্তরখানার কথা। গতকাল সরাইলের জয়ধরকান্দি গ্রামের জবান আলীর ছেলে মো. মোহসেন মিয়ার বিয়ে ছিল। পাত্রী মহিষবের গ্রামের সামাদ মিয়ার মেয়ে আনজু নাহার। ওই বিয়েতে দেখা মিলে কলাগাছের গেইটের। দুইদিকে দুটি কলাগাছ। উপর দিয়ে দুটিতে কাল কাপড় মোড়ানো। সাদা কাপড়ে মোড়ানো গাছ দুটি প্রকৃতিগত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। দাওয়াত ছিল সরাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শের আলম মিয়ার। গলাগাছের গেইট দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। কারণ দীর্ঘদিন পর হঠাৎ এমন একটি দৃশ্য দেখতে পাবেন কখনো ভাবেননি তিনি। তিনি বলেন, কমপক্ষে ২৫ বছর পর কলাগাছের গেইট দেখলাম। এই দৃশ্য আমাকে ফিরিয়ে নিয়েছে শৈশবে। আবার যদি গ্রামের সেই বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোর দেখা পেতাম। সদর ইউনিয়নের বড়দেওয়ান পাড়ার মো. আকবর ঠাকুর (৬৮) ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মো. আকরাম খান (৭৮) বলেন, আশির দশক পর্যন্ত কলাগাছের গেইটই ছিল সকলের ভরসা। ডেকোরেটার্স আসায় ওই গুলো হারিয়ে গেছে। ৪০ বছরেরও অধিক সময় তাদের এই গেইট সকলকে আবারও অতিতের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।

মাহবুব খান বাবুল

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

চার দশক পর-সরাইলে বিয়ে বাড়িতে কলা গাছের গেইট!

আপডেট সময় : ০১:৫০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২

দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময় পর সরাইলে দেখা মিলেছে কলা গাছের গেইটের। গত সোমবার দুপুরে সরাইলের পল্লী এলাকা জয়ধরকান্দি ও মহিষবের গ্রামের একটি বিয়েতে গেইটটি স্থাপন করা হয়েছে। হঠাৎ এমন একটি গেইট দেখে আমন্ত্রিত অনেকেই হতকিচত হয়ে পড়েন। তবে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্য হয়েছেন সরাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শের আলম মিয়া। তিনিই প্রথম ঘটনাস্থল থেকে গেইটের সংবাদটি প্রচার করেন। বিয়ে বাড়ির অতিথি ও প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ সূত্র জানায়, এক সময় গ্রাম এলাকার বিয়েতে পালকিতে করে বর যেত পাত্রীর বাড়িতে। বরযাত্রীরা যেত পায়ে হেঁটে। বিয়ে হত রাতে। তখন অধিকাংশ বিয়েতে গেইট ছিলই না। এরপর আসল রিকশা ও নৌকা। একটু পরিবর্তন হয়ে আসল কলা গাছের গেইট। সাথে শহর এলাকায় এক জাতীয় গাছের পাতা দিয়ে তৈরী করা হত গেইট। ওই পাতা গুলোকে বলা হত গেইট পাতা। বরের সাথে বাতাসার পাতিল না আনলে ঝামেলা বেঁধে যেত। মারামারিও হত। বর ও বরযাত্রীদের খাবারের আয়োজন করা হত বাংলো ঘরের মেঝেতে। বিছানার উপর ছাদর। ছাদরের উপর খাবারের উ”ছীষ্ট ফেলার জন্য দেওয়া হত দস্তরখানা। এ ভাবে চলে যায় দীর্ঘদিন। কালের আবর্তে আসে অনেক পরিবর্তন। আশি’র দশকের পর আস্তে আস্তে বিয়ের সময়, ওই গেইট ও বসার স্থানে পরিবর্তন আসতে থাকে। এক সময় এ গুলো হারিয়েই যায়। আসে ডেকোরেশনের প্রচলন। বিয়ের অনুষ্ঠান হয় দিনে। বাহিরের খোলা মাঠে বা উঠানে উপরে ত্রিপল দিয়ে চারিদিকে সাটিয়ে দেয়া হয় বাহারি রং-এর কাপড়। টেবিল, প্লেট, গ্লাস সহ সবকিছু ডেকোরাটার্স নির্ভর হয়ে পড়ে। গেইট তৈরী হয় অত্যাধুনিক ডিজাইনের। বিত্তশালীরা আয়োজন করেন বড় বড় কমিউনিটি সেন্টারে। বাঁশের সাহায্যে বিভিন্ন রং ও ধরণের কাপড় ব্যবহার করে বাড়ানো হয় গেইটের সৌন্দর্য। ফলে গত চার দশক ধরে মানুষে ভুলেই গিয়েছে রাতের বিয়ে, কলাগাছ, গেইট পাতা ও দস্তরখানার কথা। গতকাল সরাইলের জয়ধরকান্দি গ্রামের জবান আলীর ছেলে মো. মোহসেন মিয়ার বিয়ে ছিল। পাত্রী মহিষবের গ্রামের সামাদ মিয়ার মেয়ে আনজু নাহার। ওই বিয়েতে দেখা মিলে কলাগাছের গেইটের। দুইদিকে দুটি কলাগাছ। উপর দিয়ে দুটিতে কাল কাপড় মোড়ানো। সাদা কাপড়ে মোড়ানো গাছ দুটি প্রকৃতিগত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। দাওয়াত ছিল সরাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শের আলম মিয়ার। গলাগাছের গেইট দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। কারণ দীর্ঘদিন পর হঠাৎ এমন একটি দৃশ্য দেখতে পাবেন কখনো ভাবেননি তিনি। তিনি বলেন, কমপক্ষে ২৫ বছর পর কলাগাছের গেইট দেখলাম। এই দৃশ্য আমাকে ফিরিয়ে নিয়েছে শৈশবে। আবার যদি গ্রামের সেই বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোর দেখা পেতাম। সদর ইউনিয়নের বড়দেওয়ান পাড়ার মো. আকবর ঠাকুর (৬৮) ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মো. আকরাম খান (৭৮) বলেন, আশির দশক পর্যন্ত কলাগাছের গেইটই ছিল সকলের ভরসা। ডেকোরেটার্স আসায় ওই গুলো হারিয়ে গেছে। ৪০ বছরেরও অধিক সময় তাদের এই গেইট সকলকে আবারও অতিতের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।

মাহবুব খান বাবুল