মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে:
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলে নিষিদ্ধ ঘোষিত থ্রি হুইলার বনেদ্ধর অভিযান পরিচালনা করছেন হাইওয়ে পুলিশ। বৃহস্পতিবার চান্দুরা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে সরজমিনে পাঁচ ঘন্টায় সিএনজি’র দাপুট, নানা অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ চিত্র চোখে পড়ে। অভিযানের নামে সড়কে হাইওয়ে পুলিশও আছে। আবার পুলিশের সামনে দিয়েই দেদারছে চলছে সিএনজি। চারিদিকে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা। চালকরা বলছেন, বিনিময় দিয়েই চলছি। সাংবাদিক পরিচয়ের বেশ কয়েকজন সহ ১৪-১৫ জনের এক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি তারা। নাম প্রকাশ করলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে তাদের। সিএনজিটি আটক করে মামলা দিবে। সড়ক বন্ধ হয়ে উপোষে মরবে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চান্দুরায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ১০-১২টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা। যাত্রীরা ওঠছেন। ছেড়ে যাচ্ছে সরাইল, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। উল্টো দিক থেকে যাচ্ছে মাধবপুরের দিকে। মহাসড়কে বীর দর্পে চলছে থ্রি হুইলার। বেপরোয়া গতি। যেন প্রতিযোগিতা করছে অন্য গাড়ির সাথে। অভারটেক করছে যাত্রীবাহী আন্তজেলা যাত্রীবাহী কোচ ও পণ্য বোঝাই ডিস্ট্রিক ট্রাককে। চলন্ত সিএনজি গুলো মাঝে মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাচ্ছে। আবার কোন রকমে রক্ষা। শাহবাজপুর তিতাসের ব্রীজে ওঠছে বালু বোঝাই ট্রাক্টর। পেছনে যাত্রীবহিী কোচ। মাঝখানে যাত্রীবাহী সিএনজি। কোচের হুইচেলের শব্দে তড়িঘড়ি করে সাইট দিতে গিয়ে বামে হেলে পড়ে যায় সিএনজিটি। আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীদের চিৎকার। কোন রকমে বড় ধরণের দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়ে সিএনজিটি আবারও ওই দুই গাড়ির মাঝখানে। মহাসড়কের শাহবাজপুর, বাড়িউড়া এলাকায় সড়কের উপরই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিএনজি। চালকরা চিৎকার করে যাত্রীদের ডাকছে। যাত্রী বোঝাই করে চলে যাচ্ছে। অপর দিক থেকেও যাত্রী নিয়ে আসছে। সরাইলের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে মহাসড়কের কুট্রাপাড়া মোড়। সেখানে সড়কের উপরই সিএনজি ষ্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী টানছে। চলমান সিএনজি গুলোর মধ্যে নিবন্ধন বিহীন নাম ছাড়াই বেশী। আর ‘মায়ের দোয়া’, ‘সাফা মারূয়া’, ‘ভাই ভাই পরিবহন’, ‘রাহিম পরিবহন’, ‘ইভা পরিবহন’, ‘মা বাবার দোয়া’, নিহাদ-জিহাদ পরিবহন’, ‘শিহাব শাফায়েত পরিবহন’, ‘শামীম পরিবহন’, ‘শের আলী পরিবহন’, ‘তাকিয়া-তাছফিয়া পরিবহন’, ‘তাহমিদ পরিবহন’, ‘হাবিব পরিবহন’, ‘আরিফ-সাওদা পরিবহন’, ‘জেনি-সাদিয়া পরিবহন’ গুলো নিশ্চিন্তে বীরদর্পে মহাসড়কে চলছে। লোক দেখানো অভিযানের জন্য হাইওয়ে থানার সামনে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান। পাশেই সিএনজি ধরতে দাঁড়িয়ে আছেন ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে পুলিশের সামনে দিয়েই অগণিত সিএনজি আপ-ডাউন করছে। পুলিশ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। মাঝেমধ্যে কিছু ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাকে সিগনাল দিচ্ছেন। ওই গাড়ির চালকরা বলেন, ‘স্যার নাম বলন যাইত না। আমডা সিস্টেমে টেহা দেয়। তাই আমডারে ধরতাছে না। আমডারে বাচানের লোকও রাস্তায় আছে।’ অথচ চান্দুরা এলাকা থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ধরে এনে ৫- ১০ হাজার টাকার মামলা দিচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশ। সকাল ১১টার পর দেখা যায় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুট্রাপাড়া মোড় থেকে চান্দুরা মাধবপুর পর্যন্ত। আর বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে সিএনজি (থ্রি হুইলার) চলাচল দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। এরা মাঝেমধ্যে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নামও বিক্রি করে। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে জেলা উপজেলার সাংবাদিক পরিচয়ের বেশ কয়েকজন, জেলা উপজেলার একাধিক শ্রমিক নেতা, বিশ্বরোডের আশপাশের কয়েকজন পাতি নেতা ও হাইওয়ে পুলিশের একাধিক সোর্স। সম্পূর্ণ বেকার এসব সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে আবার কয়েকজন কৌশলে পর্দার আড়ালে বসে টুপাইস গুণছেন। নিজেরা মালিক না হলেও এদের জিম্মায় মহাসড়কে দাপুটে চলে আড়াই শতাধিক সিএনজি। চালক/মালিকদের প্রতি মাসে গুণতে হয় ২/৩ হাজার টাকা। এই পদ্ধতিকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘মান্তি’। এই মহাসড়কে শুধু সিএনজি থেকে মাসিক ‘মান্তির’ টাকা ওঠে ৭ লক্ষাধিক টাকা। হাইওয়ে পুলিশ, শেল্টার দাতা ও দালালদের মধ্যে বাগবাটোয়ারা হয় সেই টাকা। আর তাই অভিযানের সময় পুলিশ সাজ দেখায়। মান্তির বাহিরে যে সিএনজি গুলো আছে সেই গুলো আটকিয়ে মামলা দেয়। মান্তির গাড়ি গুলোকে আগেই সিগনাল দেয়া হয়। এরপরও সামনে পড়লে সেইগুলো আটকায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক ও মালিক জানান, কয়েকজন সাংবাদিক দায়িত্ব নিয়েছে। এই স্যারদের হাইওয়ে থানায় নাকি অফিস আছে। দিনে রাতে উনাদেরকে থানায় পাওয়া যায়। মাসে তিন হাজার টাকার সিস্টেমে না গেলে সড়কে ঘুরেফিরে কিছু লোক পুলিশ দিয়ে গাড়ি ধরিয়ে ১০/১৫/২০ হাজার টাকার মামলা দেয়। মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে মান্তির টাকা দিতে হয়। চাবির রিং, গাড়িতে সাঁটানো ষ্টিকার দেখলে পুলিশ ছেড়ে দেয়। মোবাইল কোর্ট বা অভিযান থাকলে আমাদেরকে মান্তির স্যারেরা আগেই জানিয়ে দেয়। কোন কারণে গাড়ি আটক হয়ে গেলে তখন আবার ওই স্যাররা ফোন ধরেন না। গাড়ি ক্রয় করে অশান্তিতে আছি। এ বিষয়ে সরাইলের কুট্রাপাড়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রবাদ আছে-‘কইলে মাইর খায়, না কইলে বাবা খারাম খায়।’ আমাদের অবস্থা হয়েছে এমন। মহাসড়ক থ্রী হুইলার মুক্তকরণ হচ্ছে চলমান পক্রিয়া। আসলে কিছু লোককে আমরা সম্মান করে থাকি। যারা বিভিন্ন পরিচয়ে চালক/মালিক থেকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে মাসিক মাসোয়ারা আদায় করে তাদেরকে খুঁজে বের করূন।
News Title :
চান্দুরা টু আশুগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশও আছে, সিএনজিও চলছে দালালদের দৌঁড়ঝাঁপ
- Reporter Name
- Update Time : 10:48:01 am, Saturday, 30 September 2023
- 456 Time View
Tag :
জনপ্রিয় খবর