সরাইলের দেওড়া গ্রামের কিশোর সালমান (১৬), আনাছ (১৬) ও শরীফ (১৭) তিন বন্ধু। সালমান ও আনাছ দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। আগামী ঈদকে ঘিরে খুবই আনন্দে ছিল তারা। গত কয়েক দিন ধরে তারা ব্যস্ত ছিল মার্কেটিং-এ। গত ২৫ এপ্রিল সোমবার তারা প্রত্যেকে বাড়িতে ইফতার করে। কিছুক্ষণ পরই মুঠোফোনে যোগাযোগ। পিতার বাইক নিয়ে বাহির হয় শরীফ। একে একে বাহির হয়ে আসে সালমন ও আনাস। টার্গেট শরীফের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ইলেকট্রিক কাজ করা। একটু ঘুরাফেরা। সুযোগে সুবিধে হলে কিছু মার্কেটিং। বাইকটি চালাচ্ছিল শরীফ। দেওড়া থেকে এক বাইকে করে তিন বন্ধু রওনা দিল রাজামারিয়াকান্দির উদ্যেশ্যে। ওই গ্রামে শরীফের আত্মীয়ের বাড়িতে ইলেকট্রিক কাজ শেষ করে রাত ৯টার পর রওনা দিল বাড়ির দিকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রাজামারিয়াকান্দি এলাকায় বিপরীত থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তাদের বাইকটিকে চাপা দেয়। বাইকসহ সড়কে ছিটকে পড়ে ৩ আরোহী। দ্রূত গতির আরেকটি ট্রাক তাদের উপর দিয়ে যায়। বিকট শব্দে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় বাইকটি। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে বাইক আরোহী ৩ কিশোরের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সালমান ও শরীফ। গুরূতর আহত হয়ে সড়কে ছটফট করতে থাকে আনাছ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দেওড়া জামে মসজিদ মাঠে কয়েকশত লোকের অংশ গ্রহণে জানাযা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থারে দাফন করা হয়। হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিহতদের মধ্যে শরীফের চেহারাটি কোন রকমে দেখা যায়। কিন্তু দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সালমানকে প্রথমে চেনাই যায়নি। লাশ উদ্ধার করে থানায় আনার পর স্বজনরা সনাক্ত করেন। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনাছকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসাপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত দুই কিশোরের মৃত্যু সংবাদে মা বাবা পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠছে বাড়ির পরিবেশ। প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে মূর্ছা যাচ্ছেন তাদের মা বাবা। ওদিকে তরতাজা দুই শিক্ষার্থীর আকস্মিক মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা দেওড়া গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। জানাযায় দুই কফিন: জানাযার মাঠে পাশাপাশি দুইটি কফিন। একটিতে সালমান অপরটিতে শরীফের লাশ। বড়ই নির্মম ও হৃদয়বিদায়ক দৃশ্য। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে স্বজন ও সহপাঠিরা। দুপুর আড়াইটায় প্রথম জানাযা হয়েছে শরীফের। কফিনটি সরিয়ে নিয়েছেন। এরপর হয়েছে শরীফের জানাযা। এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হল না সালমানের: দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষার ছাত্র সালমান। আগামী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার সকল কাজ সম্পন্ন করেছে। কৃষক কামাল মিয়ার ৪ সন্তানের মধ্যে সালমান দ্বিতীয়। সংসারের একমাত্র ভরসাই ছিল সালমান। পরীক্ষা দেয়ার আগেই জীবন প্রদীপ নিভে গেল সালমানের। ছেলেকে ঘিরে কামালের আশা ও স্বপ্ন দুটিই কেড়ে নিল ঘাতক ট্রাক। ঈদের জন্য ক্রয় করা নতুন কাপড় গুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সালমান ও শরীফের মা। সরাইলের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুখেন্দ বিশ্বাস বলেন, ঘাতক ট্রাক দুটির মধ্যে একটিকে (চট্র মেট্রো- ট, ১২-০২২৮) আটক করেছি। মামলা হবে। আইনগত ব্যবস্থা নিব।
মাহবুব খান বাবুল