পূর্বের দপ্তর আদেশ যোগাদের দিন স্থগিত!
মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
অবশেষে নানা তদবির ও দৌঁড়ঝাঁপের পর আজ সোমবার যোগদানের দিন বদলির আদেশ স্থগিত করিয়েছেন সরাইল পিডিবি’র প্রকৌশলী সুমন হোসেন সর্দার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের যেকোন উপায়ে ম্যানেজ করতেই গত ৫ দিন ধরে তার এই দৌঁড়ঝাপ। সাথে শতভাগ সাপোর্ট ছিল সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর। গত ৬ অক্টোবর বিউবি ঢাকা-এর উপপরিচালক-৪ (কর্ম) মো. কার্নিজ জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে কে. এম তাওহীদ আহমেদকে সরাইল পিডিবি অফিসে পদায়নও করেছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর উনাকে সরাইলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। আর আজ কুমিল্লার চানপুরে যোগদানের কথা ছিল সুমনের। রহস্যজনক কারণে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সুমন সরাইল ত্যাগ করেননি। দুপুরের পর চাউর হয় প্রকৌশলী সুমনের বদলির আদেশ স্থগিত হয়েছে। এই আদেশের কথা শুনে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ ও হতাশ হন সরাইল পিডিবি’র গ্রাহকরা। দূর্নীতিবাজ সুমনের অপসারণের দাবীতে রাজপথে মিছিলের হুমকি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর। পিডিবি’র পত্র ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইল পিডিবি’র উপসহকারি প্রকৌশলী সুমন হোসেন সর্দারের নানা অনিয়ম দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ট সরাইলের গ্রাহকরা। সরকারি নীতিমালা অমান্য করে সুমন ৬ বছর ধরে একই ষ্টেশনে থেকে গড়ে তুলেছেন দালাল চক্র ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাই লাগামহীন ভাবে স্থানীয় গ্রাহকদের শোষণ করছেন। সর্বশেষ কালীকচ্ছের ইব্রাহিম খলিলকে মামলার হুমকি দিয়ে আরেক প্রকৌশলী আতিক উল্লাহকে সাথে নিয়ে ৪ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘১০ বছর পর সংযোগ অবৈধ, জরিমানা ১৯ লাখ’ শিরোনোমে ডিজিটাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডট কমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত পত্রে সুমনকে চাদপুরে বদলির আদেশ দেন। আদেশ হাতে পেয়ে সুমনের চেয়ে বেশী মন খারাপ হয় সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর (বিক্রয় ও বিতরণ)। সুমনের বদলি ঠেকাতে তিনি অফিস ফাঁকি দিয়ে দিনে রাতে সরকারি দলের প্রভাবশালীদের কাছে ধরণা দিতে থাকেন। যত টাকা লাগে বদলি ঠেকাতেই হবে এমন সব কথা চাউর হতে থাকে সরাইল পিডিবি অফিস থেকে। ১০ অক্টোবর সোমবার চানপুর যোগদানের কথা থাকলেও ওইদিন সকাল ১০/১১ টা সুমন সরাইল অফিস ছাড়েননি। দুপুরের পর খবর আসে যিনি বদলির দপ্তরাদেশ দিয়েছিলেন তিনিই সুমনের যোগদানের দিনে আরেক দপ্তরাদেশে বলেছেন অনিবার্য্য কারণে ৪.১০.২২ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে জারীকৃত দপ্তরাদেশটি স্থগিত করা হইল। কি সেই অনিবার্য্য কারণ? তা জানতে চাই সরাইলবাসী। আজ বিকেল ৪ টার দিকে বদলির আদেশ স্থগিত করণের বিষয়ে জানতে প্রধান প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে কল দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর। রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, প্রধান প্রকৌশলী আমাকে জানিয়েছেন দূর্নীতিবাজ সুমনের বদলির আদেশ স্থগিত করতে একাধিকবার উনাকে ফোন দিচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের (৩১২) মহিলা সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। চাকরি বিধির সরকারি নীতিমালায় ৫ বছরের অধিক সময় কোন কর্মকর্তা একই ষ্টেশনে থাকা অবৈধ। সুমনের ৬ বছর হয়ে গেছে। সুমন এখন আর সরাইলে থাকতে পারে না। তারপরও মহিলা এমপি’র ফোনে আমি অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। আমি বিষয়টি দেখছি। রফিক উদ্দিন ঠাকুর প্রধান প্রকৌশলীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সুমনের অনিয়ম দূর্নীতি ও লাগামহীন শোষণে সরাইলের গ্রাহকরা চরম উত্তেজিত। তার অপসারণ ও আপনার স্থগিতাদেশের বিরূদ্ধে মিছিল নিয়ে রাজ পথে নামতে পারে হাজার হাজার গ্রাহক। কারণ সুমন এখন সরাইলের গ্রাহকদের কাছে একটি বিষফোঁড়া। গ্রাহক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ঘুষখোর দূর্নীতিবাজ অফিসার সুমনের বদলি যারা স্থগিত করেছেন, তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে। সরাইল পাপমুক্ত হয়েছিল। টাকা খেয়ে তদবির করে সরাইলের ১২টা বাজিয়ে দিলেন। এর ফল পাবেন। আমাকে হুমকি দিয়ে সুমন আতিকুল্লাহ ৪ লাখ ঘুষ নিল। আবার ১৯ লাখ টাকা বিলও নিল। দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের একটি ভাল অংশ সুমন কর্তাবাবুকে দিয়ে থাকেন। তাই সুমনকে রাখতে তিনি মাঠে কাজ করেছেন।