ঢাকা ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

উচ্ছেদের ৬ মাস পর পুরাতন রূপে দখলদারদের নতুন চিত্র

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উচ্ছেদের ৬ মাস পরই পুরাতন রূপে দখলদারদের এখন নতুন চিত্র। সওজ-এর উচ্ছেদ অভিযানের এক সপ্তাহ পরই তারা ছামিয়ানা ঝুলিয়ে দখল ধরে রেখেছিল। পরে আস্তে আস্তে পূর্বের দখল পাকাপোক্ত করতে থাকেন। সর্বশেষ সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকা পর্যন্ত দখল ব্যবসা আবারও জমজমাট। ফলে ওই সড়কে যানজট ও দূর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের বিষয়। দূর্ভোগে আছেন পথচারী, রোগী ও শিক্ষার্থীরা। ফের ফুরফুরা মেজাজে আছেন ইশারায় মালিক সাজা প্রভাবশালীরা। প্রতিদিন রাতে অতিগোপনে তারা উত্তোলন করছেন টাকা।

সরজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা, জেলা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উচ্ছেদ অভিযানে বিশ্বরোড, সরাইল হাসপাতাল মোড়, কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছিলেন পথচারী, যানবাহনের চালক ও স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সড়কের দুই পাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। বন্ধ হয়েছিল অবৈধ বিদ্যুৎ সরবরাহ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দখলমুক্ত সড়কের দু’পাশ উম্মোক্ত ও সুন্দর রাখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন’ মন খারাপ হয়েছিল স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় দালাল ও দখরদারদের। বিনা পুঁজির ব্যবসা বন্ধ হওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন এক শ্রেণির দালাল। তাদের সময় যেন যাচ্ছিল না। মাত্র ৩ দিন পরই আঙ্গুলের ইশারায় সওজের দখলকৃত জায়গা ঠিকঠাক করে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অল্প মালে ব্যবসা শুরূ করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবস্থা বুঝতে কিছুটা সময় নেন দখলদাররা। সপ্তাহ দিন পর আগের জায়গায় নতুন করে আবার ঘর নির্মাণ করতে শুরূ করেন। শুরূ হয়ে যায় মাসোয়ারা আদায়ও । প্রত্যেক দোকানদারকে দৈনিক ২’শত থেকে শুরূ করে ৫’শত টাকা করে দিতে হয়। টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে দোকান ছাড়তে হবে ভাড়াটিয়াকে। তাই সড়কের পাশের ওই সব দোকানীদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফুঁটে না অবস্থা। দৈনিক চাঁদার পরিমান জিজ্ঞেস করলেই তারা ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে আর মুচকি হাঁসেন। কিছুক্ষণ পর বলেন, এই বিষয়টা না-ই জানলেন। বিশ্বরোডের এক ফল ব্যবসায়ি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আমি সহ ৮ জন ব্যবসায়ির কাছ থেকে দৈনিক ৩ শত অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪’শত টাকা উত্তোলন করছেন। আমি বলেছি জানলে আগামীকালই আমাকে উঠিয়ে দিবে। এরপর রয়েছে আঞ্চলিক সড়কের উপরে ও ঘেষে বালুর ব্যবসা। ড্রাম ও ডিষ্ট্রিক ট্রাক গুলো বালু নিয়ে এসে সড়কের উপর দাঁড়ানো মাত্র লেগে যায় জ্যাম। তাদের ইচ্ছেমত সময় নিয়ে বালু আনলোড করেন। ইতিমধ্যে সরাইল-নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়কের বিশাল অংশে ও সরাইল সদরে প্রবেশের প্রধান সড়কে লেগে যায় জ্যাম। চরম দূর্ভোগে পড়েন পথচারী নারী পুরূষ, নারী শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষ। আটকা পড়ে রোগী বহনকারী এম্বোলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীও। অনেক সময় জ্যামে আটকে যান খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড, সার্কেল এসপি ও অফিসার ইনচার্জর গাড়ি। এ সকল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ৪ বছর ধরে আলোচনা হলেও বাস্তবে কোন প্রতিকার নেই। সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার উচ্ছেদের পর সওজের জায়গা আবার দখল করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা আবার দখলমুক্ত করার চেষ্টা করব। ব্যর্থ হলে এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যারের সহায়তা চাইব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুনরায় দখলের বিষয়টি ঠিক জানা নেই। গুরূত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষের সচেতনতার বড়ই অভাব। সরকারী একটি বিভাগের জায়গা দখলের আগে একটুও ভাবে না এখানে থাকা যাবে না। আসলে অভিযান পরিচালনা করতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। আর যখন যেদিকে সুযোগ হয় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সকলে মিলে চাঁদাবাজদের ধরে পুলিশে দেন। ওই সড়কে আবারও অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

উচ্ছেদের ৬ মাস পর পুরাতন রূপে দখলদারদের নতুন চিত্র

আপডেট সময় : ০৯:০৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

মাহবুব খান বাবুলঃ সরাইল থেকেঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উচ্ছেদের ৬ মাস পরই পুরাতন রূপে দখলদারদের এখন নতুন চিত্র। সওজ-এর উচ্ছেদ অভিযানের এক সপ্তাহ পরই তারা ছামিয়ানা ঝুলিয়ে দখল ধরে রেখেছিল। পরে আস্তে আস্তে পূর্বের দখল পাকাপোক্ত করতে থাকেন। সর্বশেষ সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকা পর্যন্ত দখল ব্যবসা আবারও জমজমাট। ফলে ওই সড়কে যানজট ও দূর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের বিষয়। দূর্ভোগে আছেন পথচারী, রোগী ও শিক্ষার্থীরা। ফের ফুরফুরা মেজাজে আছেন ইশারায় মালিক সাজা প্রভাবশালীরা। প্রতিদিন রাতে অতিগোপনে তারা উত্তোলন করছেন টাকা।

সরজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা, জেলা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উচ্ছেদ অভিযানে বিশ্বরোড, সরাইল হাসপাতাল মোড়, কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছিলেন পথচারী, যানবাহনের চালক ও স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সড়কের দুই পাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। বন্ধ হয়েছিল অবৈধ বিদ্যুৎ সরবরাহ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দখলমুক্ত সড়কের দু’পাশ উম্মোক্ত ও সুন্দর রাখার অনুরোধ করেছিলেন। কিন’ মন খারাপ হয়েছিল স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় দালাল ও দখরদারদের। বিনা পুঁজির ব্যবসা বন্ধ হওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন এক শ্রেণির দালাল। তাদের সময় যেন যাচ্ছিল না। মাত্র ৩ দিন পরই আঙ্গুলের ইশারায় সওজের দখলকৃত জায়গা ঠিকঠাক করে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অল্প মালে ব্যবসা শুরূ করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবস্থা বুঝতে কিছুটা সময় নেন দখলদাররা। সপ্তাহ দিন পর আগের জায়গায় নতুন করে আবার ঘর নির্মাণ করতে শুরূ করেন। শুরূ হয়ে যায় মাসোয়ারা আদায়ও । প্রত্যেক দোকানদারকে দৈনিক ২’শত থেকে শুরূ করে ৫’শত টাকা করে দিতে হয়। টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে দোকান ছাড়তে হবে ভাড়াটিয়াকে। তাই সড়কের পাশের ওই সব দোকানীদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফুঁটে না অবস্থা। দৈনিক চাঁদার পরিমান জিজ্ঞেস করলেই তারা ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে আর মুচকি হাঁসেন। কিছুক্ষণ পর বলেন, এই বিষয়টা না-ই জানলেন। বিশ্বরোডের এক ফল ব্যবসায়ি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আমি সহ ৮ জন ব্যবসায়ির কাছ থেকে দৈনিক ৩ শত অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪’শত টাকা উত্তোলন করছেন। আমি বলেছি জানলে আগামীকালই আমাকে উঠিয়ে দিবে। এরপর রয়েছে আঞ্চলিক সড়কের উপরে ও ঘেষে বালুর ব্যবসা। ড্রাম ও ডিষ্ট্রিক ট্রাক গুলো বালু নিয়ে এসে সড়কের উপর দাঁড়ানো মাত্র লেগে যায় জ্যাম। তাদের ইচ্ছেমত সময় নিয়ে বালু আনলোড করেন। ইতিমধ্যে সরাইল-নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়কের বিশাল অংশে ও সরাইল সদরে প্রবেশের প্রধান সড়কে লেগে যায় জ্যাম। চরম দূর্ভোগে পড়েন পথচারী নারী পুরূষ, নারী শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষ। আটকা পড়ে রোগী বহনকারী এম্বোলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীও। অনেক সময় জ্যামে আটকে যান খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড, সার্কেল এসপি ও অফিসার ইনচার্জর গাড়ি। এ সকল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ৪ বছর ধরে আলোচনা হলেও বাস্তবে কোন প্রতিকার নেই। সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার উচ্ছেদের পর সওজের জায়গা আবার দখল করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা আবার দখলমুক্ত করার চেষ্টা করব। ব্যর্থ হলে এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যারের সহায়তা চাইব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুনরায় দখলের বিষয়টি ঠিক জানা নেই। গুরূত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষের সচেতনতার বড়ই অভাব। সরকারী একটি বিভাগের জায়গা দখলের আগে একটুও ভাবে না এখানে থাকা যাবে না। আসলে অভিযান পরিচালনা করতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। আর যখন যেদিকে সুযোগ হয় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সকলে মিলে চাঁদাবাজদের ধরে পুলিশে দেন। ওই সড়কে আবারও অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা করব।