মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
‘বন্ধন’ একটি সামাজিক সংগঠনের নাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের দেওড়া গ্রামের প্রবাসী ১৩ যুবকসহ বন্ধনের সদস্য সংখ্যা ৩৩ জন। সামাজিক কাজ ও মানবসেবাই সংগঠনটির উদ্যেশ্য। আস্তে আস্তে সেই লক্ষ বাস্তবায়ন করছেন তারা। সর্বশেষ গত শুক্রবার উপজেলার দেওড়া গ্রামের অসহায়, দুই প্রতিবন্ধি সন্তানের মা, গৃহহীন বৃদ্ধা তারাবানুকে (৬৫) একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়ে আলোচনায় এখন বন্ধন। দীর্ঘ দুই বছরেরও অধিক সময় পর নতুন ঘর পেয়ে আনন্দিত তারাবানু। ঘরটিকে নিজের জন্য মসজিদ বলে শুকুর আদায় করছেন তারাবানু। বন্ধন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গ্রামের ৩৩ যুবকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নাম বন্ধন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নিজেদের অর্থায়নেই চলছে সংগঠনটি। সমাজ, গ্রাম ও এলাকার অসহায় দরিদ্র লোকজনের নানা সমস্যায় এগিয়ে আসাই বন্ধনের কাজ।
সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের সমস্যা সমাধানে সাধ্যমত সহায়তার হাত প্রসারিত করে আসছেন তারা। বৃদ্ধ তারাবানু। বাটপাড়া গ্রামের প্রয়াত মস্তু আলীর স্ত্রী তারাবানু। ৩ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের জননী। বড় ছেলে আউশের সামান্য আয়েই কষ্টেশিষ্টে চলে ৭-৮ জনের পরিবার। এরমধ্যে দুই ছেলে মন মিয়া (৪০) ও সাগর (৩০) দু’জনই জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধি। পুত্রবধূসহ সন্তানদের নিয়ে জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত একটি ঘরে অনেক কষ্টে বসবাস করছিলেন। ঝড় বৃষ্টি যেত তাদের শরীরের উপর দিয়ে। একটি ঘরের জন্য বৃদ্ধ তারাবানু অনেকের কাছে ধরনা দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন অনেকেই। কিন’ ঘর করে দেয়নি কেউ। অবশেষে তারাবানুসহ তার পরিবারের কষ্ট দূর করতে এগিয়ে আসে বন্ধন। প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তারাবানুকে নতুন একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে বন্ধন। তারাবানুকে আর বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না। রোদে কাতরাতে হবে না। অনেক দিনের জমানো কষ্ট দূর করায় চিৎকার করে তারাবানু বন্ধনের জন্য দোয়া করছেন।
তারাবানু বলছেন, আহ অনেক দিন পর নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাতে পারব না। নামাজ আদায় করতে আর সমস্যা হবে না। বন্ধন আমাকে ঘর নয়, একটা মসজিদ করে দিয়েছে। আমি নামাজ পড়ে বন্ধনের সকলের জন্য দোয়া করব। বন্ধনের কোষাধ্যক্ষ মো. হেদায়ত উল্লাহ বলেন, আমাদের সংগঠনের কোন কার্যনির্বাহী কমিটি নেই। টাকা পয়সা আমার কাছেই থাকে। মানুষের যেকোন সমস্যায় সহায়তা করাই আমাদের মূল উদ্যেশ্য। এর আগেও বন্ধন দেওড়া গ্রামের সাহাব উদ্দিন ও মলাইশ গ্রামের সন্তোষ বাবুকে (৬০) ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। মিতালী সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সরাইল মহিলা কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহবুব খান বলেন, বন্ধনের মানবিক কাজ গুলো সত্যই প্রশংসার দাবীদার। আমি তাদের স্যালুট জানাই। কারণ তারা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য আশির্বাদ। তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষ গুলো ভাল থাকবে। এক সময় সমাজে অভাবগ্রস্ত লোকের সংখ্যা কমে আসবে। এগিয়ে যাবে সমাজ গ্রাম ও দেশ।