সরাইল উপজেলার একটি ইউনিয়ন পাকশিমুল। ভৌগলিক কারণে এখানকার অধিকাংশ গ্রামই উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে বিচ্ছিন্ন। বসতি গড়ে ওঠার পর থেকেই যাতায়তের রাস্তা গুলোও বেহাল। শুস্ক মৌসমে জমির আইল ও বর্ষায় নৌকাই ভরসা তাদের। ফলে চিকিৎসা পড়া লেখা ও বিয়েশাদী নিয়ে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় গ্রামবাসীর। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও গ্রাম গুলোর রাস্তা ঘাটের কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে ফসলি জমির জায়গা দিয়ে নির্মিত হয়েছে আড়াই কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হয়েছে সড়কটি। দীর্ঘদিন পর গ্রামের ভেতরের একটি সড়ক দিয়ে স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারায় আনন্দে উজ্জীবিত ওই জনপদের মানুষ গুলো। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ‘জনপ্রতিনিধিরা না পারলেও আমরা পেরেছি।’ সরজমিনে দেখা যায়, মেঘনার তীরবর্তী গ্রাম পরমানন্দপুর থেকে ষাটবাড়িয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোামটার দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রসে’র সুন্দর গ্রামীণ সড়ক। মনের আনন্দে লোকজন হাঁটছেন। কেউ চালিয়ে যাচ্ছেন বাইসাইকেল। কেউ মটরবাইক। দীর্ঘ সময় পর যেন তারা মনপ্রাণ উজার করে উম্মুক্ত ভাবে ইচ্ছেমত হাঁটতে পারছেন। দারূন উজ্জীবিত সেখানকার লোকজন। গ্রামবাসী জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে অনেক জনপ্রতিনিধি সড়কটি নির্মাণের শুধু প্রতিশ্রূতিই দিয়ে গেলেন। কাজ করেননি কেউ। একটি সড়কের জন্য আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বিশেষ করে দুই গ্রামের শিক্ষার্থী ও রোগীদের দূর্ভোগ ভাবিয়েছে সবাইকে। সবশেষে গ্রামবাসীর উদ্যোগই সফল হল। শুরূতেই সড়কে জমির অংশ দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন গ্রামের ৪৭ জন কৃষক। মাটি ভরাটের জন্য সকলের অংশ গ্রহনে ওঠে ৮ লাখ টাকা। কাজে লেগে যান গ্রামবাসী। সাথে রাখেন খননযন্ত্র। ১৫ দিন সকলে মিলে স্বেচ্ছায় কাজ করে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করেন। গত ১৬ জানুয়ারি সড়কটির উদ্বোধন করেন পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার হোসেন। সড়ক নির্মাণ কাজের মূল উদ্যোক্তা হাজী সুজন মাহমুদ, ইসহাক মিয়া, আবুল কালাম, আলমগীর মিয়া ও আলফাজ উদ্দিন বলেন, সড়কটির জন্য খুবই ভোগান্তিতে ছিল গ্রামবাসী। সকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জায়গা অর্থ ও শ্রম দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। গ্রামবাসীর মুখে হাঁসি ফুটেছে। স্বসি’ ফিরে এসেছে। অনেকে এটিকে স্বপ্নপুরীর রাস্তা বলে সম্ভোধন করছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউসার হোসেন বলেন, গ্রামবাসীর স্বেচ্ছা শ্রমে এমন একটি সড়ক নির্মাণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধ থেকে সড়কটির উন্নয়নের চেষ্টা করব। সরাইল উপজেলা এলজিইডি’র ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নিলুফা ইয়াছমীন বলেন, গ্রামাঞ্চলে এ ধরণের সড়ক বা রাস্তা করার পরিকল্পনা আমাদেরও রয়েছে।
মাহবুব খান বাবুল