ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কলেজের অধ্যক্ষ হরিলাল চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত জুলাই ২০২৪ সনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর এই অভিযোগ দাখিল করেন কলেজের প্রভাষকবৃন্দ। অভিযোগে লেখা হয় বিগত ২৭/০৮/২০১৬ তারিখে ব্রাহ্মণাবড়িয়া পৌর কলেজে শূন্যপদে অধ্যক্ষ নিয়োগের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত শূণ্য পদে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় গোপনীয়তা রক্ষা করে বিধি অনুযায়ী বহি:পরীক্ষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে প্রশ্ন তৈরি করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র তেরি, ডিকোট ব্যবহার না করেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন, পরিদর্শকের স্বাক্ষর বিহীন উত্তরপত্র গ্রহণ, অবৈধ অর্থ লেনদেনের জন্য চারদিন পর ঢাকায় ফলাফল প্রকাশ ইত্যাদি।
পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ৪ দিন পর নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি প্রভাষকদের। তাদের দাবি অবৈধ অধ্যক্ষ হরিলাল চন্দ্র দেবনাথকে অধ্যক্ষ নিয়োগে পরীক্ষকদের দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার খাতা বিধি মোতাবেক মূল্যায়নের কোন প্রকার সুযোগ না দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাউশির) কুমিল্লার আঞ্চলিক অফিস থেকে একজন কর্মকর্তা লোক দেখানোর জন্য তদন্ত করতে এসেছিল অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়াটির ব্যাপারে। তাদের দাবি রহস্যজনক কারণে নিরপেক্ষ তদন্ত না করেই মোটা অংকের অবৈধ অর্থ গ্রহণ করে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত না জানিয়ে কুমিল্লায় চলে যান মাউশির তদন্ত কর্মকর্তা। তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়ায়া পৌর কলেজের অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
অধ্যক্ষের নিয়োগ বিষয়টি সদর থানার ইউএনও দিয়ে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি তদন্ত করার কথা বলেছিল মাননীয় আদালত, কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ইউএনও’র পরিবর্তে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত না করে ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হরিলাল চন্দ্র দেবনাথের যোগদানের পর থেকে দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতে এক মহোৎসবে মেতে উঠেছেন।
কলেজে অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নিবন্ধনপত্র ছাড়া এমন অসংখ্য শিক্ষককে কলেজে নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে তাদেরকে বেতন দিয়ে সরকারী অর্থের লাগামহীন অপচয় করে চলেছেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রতিটা পাবলিক পরীক্ষায় একজন অধ্যক্ষ সর্বোচ্চ ১০০০০ (দশ) হাজার টাকা সম্মানী নিতে পারলেও পৌর কলেজের অধ্যক্ষ হরিলাল চন্দ্র দেবনাথ ২৯০০০ (ঊনত্রিশ) হাজার টাকা সম্মানী হিসেবে উত্তোলন করেন, পাবলিক পরীক্ষা থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত উন্নয়ন তহবিল পরীক্ষা বাবদ ১০% অর্থ জমা রাখতে হয়, উন্নয়ন তহবিল অর্থের টাকা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ তার পকেট কমিটির মাধ্যমে কলেজের ফাকে জমা না করে অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন কলেজের প্রভাষকবৃন্দ।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেংকারি, তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে ৫ টি শোকজ, কলেজের সাবেক সভাপতি এম.এ.এইচ মাহবুব আলম ও অধ্যক্ষের নিজস্ব পকেট কমিটি নামে ম্যানেজিং কমিটিকে আর্থিকভাবে ম্যানেজ করে পূরাতন ভবন সংস্কারের নামে ২৫ লক্ষ টাকা সংস্কার ব্যয় দেখিয়ে তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে ২ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল যা এখনো হস্তান্তর না করার কারণ হিসেবে অধ্যক্ষকে দায়ী করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রভাষক।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কলেজের অধ্যক্ষ হরিলাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত করে দেখলে আমার কোন আপত্তি নেই। আমার নিয়োগটি অবৈধ হলে তাও যাচাই করার জন্য আহবান জানাই। আমার নিয়োগের পরে কলেজে কোন নিয়োগ হয়নি।