Dhaka 10:03 am, Friday, 18 October 2024
News Title :
ভাদুঘরে প্রবাসীর বাড়িতে তালা কেটে দুর্ধর্ষ চুরির অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত তরী বাংলাদেশ এর উদ্যোগে জনস্বার্থে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ঢাকাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতির কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজের পক্ষ থেকে সাবেক মন্ত্রী হারুন আল রশিদকে ফুলেল শুভেচ্ছা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব শিশু দিবসে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নারী ও যুব অধিকার অর্জনে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারীদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূয়া সাংবাদিক ও অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে কমিটি গঠন প্রাইম বাংলা নিউজ: জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল

বেইলি রোড ট্রাজেডি বিলাপ থামছে না বৃদ্ধা হেলেনার জ্ঞান হারাচ্ছেন প্রতি মূহুর্তে!

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:04:41 pm, Sunday, 3 March 2024
  • 383 Time View

বেইলি রোড ট্রাজেডি বিলাপ থামছে না বৃদ্ধা হেলেনার জ্ঞান হারাচ্ছেন প্রতি মূহুর্তে!

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে নিহত ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, মেয়ে ফাতেমা তুজ জহুরা, সৈয়দা আমেনা আক্তার ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহকে দাফন করা হয়েছে সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের খন্দকার পাড়া পারিবারিক কবরস্থানে। সন্তান, পুত্রবধূ, নাতি নাতনির আকস্মিক অকল্পনিয় এমন মৃত্যুকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বৃদ্ধা হেলেনা বেগম (৭৫)। দাফনের দুইদিন পরও থামছে না হেলেনার কান্না ও বিলাপ। তাদেরকে নিয়ে নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে প্রতি মূহুর্তে জ্ঞান হারাচ্ছেন হেলেনা। আহাজারি করছেন স্বজনরাও। গত তিনদিন ধরে কোন খাওয়া খাদ্য মুখে নিচ্ছেন না তিনি। শাররীক ভাবে তিনি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছেন। বিছানায় বসে বিলাপ করে একেক সময় মাথা নীচু করে পড়ে যাচ্ছেন।

দরজা ও বাহিরের দিকে তাকিয়ে বুক ছাপড়িয়ে নানা কথা বলছেন। পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, স্বজন ও গ্রামবাসীর কোন শান্তনাই কাজে আসছে না। শোকে পাথর হেলেনার দিন গুলো এখন এভাবেই কাটছে। আজ রোববার সরজমিনে দেখা যায়, গোটা গ্রাম জুড়েই চলছে শোকের মাতম। কারো মুখে হাঁসি নেই। অশ্রূসিক্ত নয়নে লোকজন কাউছারদের বাড়িতে আসছেন। আবার চোখ মুছে মুছে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে নতুন পাঁচটি কবর। প্রথম কবরটি সৈয়দ আব্দুল্লাহর। এরপর সৈয়দ কাউছার, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে ফাতেমা তুজ জহুরা ও সৈয়দা আমেনা। আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে কবর দেখছেন আর চোখের জল ফেলছেন। অনেকেই স্বেচ্ছায় কবর গুলোতে কাজ করছেন। সংরক্ষণের জন্য চারিদিকে বাঁশের তৈরী নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাড়ির ভেতরে একটি খাটে বসে অঝরে কাঁদছেন কাউছারের বৃদ্ধা মাতা হেলেনা বেগম। একটু পরপর চুপ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ছেন। জ্ঞান ফিরালে আবারও আহাজারি আর বিলাপ করে পড়ে যাচ্ছেন। এভাবেই প্রতিটি মূহুর্ত পার করছেন হেলেনা বেগম। গত তিন ধরে কোন কিছুই খাচ্ছেন না তিনি। আহাজারি আর বিলাপ করে বলছিলেন, “আমার ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি নাতনি সকলেই ছিল ছবির মতো। আমার কাউছার ছিল ফেরেশতার মত। ফোন করলেই বলতাম বাবা বাড়িতে আসবা না? উত্তরে বলতো আসব মা। ৪/৫ দিন আগে ফোন করে খুব খুশি। আমাকে বলে মা এদের সবার ভিসা হয়েছে। দোয়া করিও। আমরা সকলেই ইতালি চলে যাব। শুক্রবারে আপনাকে দেখতে আসব। এবার বেশী দিন বাড়িতে থাকতে পারব না মা। বাড়ির কাজ দ্রূত শেষ করে ঢাকায় চলে আসব। এখানে অনেক কাজ করতে হবে। শুক্রবারে দেখা হবে মা। আমি তো আমার বাবার জন্য অনেক বাজার করেছি। বিভিন্ন ধরণের পিঠার আয়োজন করেছি। পোলার চাল ও ফল রেখেছি।

কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই সব শেষ। আমার পৃথিবীতে নেমে এসেছে অন্ধকার। পুত্রসহ আমার সকল ধন মুহুর্তে নিমিষ। শুক্রবারে স্ত্রী সন্তান সহ আমার বাবা দেখি লাশ হয়ে আসল। পিঠা এখন কে খাইব। আমার ছবি গুলোরে আল্লাহ কেমনে নিয়া গেল? আমি এখন কি নিয়া বাঁচব? আমারে এখন কে মাটি দিব? আমার দুইটা নাতিন। হজ্জ্বে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম। আল্লাহ আমারে একটা নাতি দাও। আল্লাহ নাতি দিল। তার নাম রাখলাম আব্দুল্লাহ। আমার সেই আব্দুল্লারে কেন নিয়া গেল? ” বলতে বলতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সকলে মিলে পানি ছিটাসহ বিভিন্ন ভাবে আবার জ্ঞান ফিরিয়ে আনেন। বর্তমানে এভাবেই যাচ্ছে কাউছারের মা শোকেকাতর হেলেনার দিন গুলি। কাউছারের মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের শান্তনা দিতে ওই বাড়িতে ছুটে গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মঈন উদ্দিন মঈন।

প্রয়াত কাউছারের একাধিক স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, হেলেনা বেগমের স্বামী সৈয়দ আবুল কাশেম মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। উনাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সৈয়দ সোয়েব হাসান ও মেজ ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার ইতালি প্রবাসী। সোয়েব স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ইতালিতে থাকেন। আর কাউছার ইতালিতে প্রবাসী হলেও ঢাকার মধুবাগে ছিল তার নিজস্ব ফ্ল্যাট। ওই ফ্ল্যাটে থাকতো কাউছারের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪২), বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহুরা (১৯), ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা আমেনা আক্তার (১৩) ও একমাত্র ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দ আব্দুল্লাহ (০৮)। তাদের সকলেরই আগামী ২২ মার্চ ইতালি চলে যাওয়ার কথা ছিল। আর লন্ডনে সেটেলড হয়ে বসবাস করছেন একমাত্র মেয়ে সৈয়দা হাজেরা বেগম।

নিহত কাউছারের ছোট ভাই সৈয়দ আমির হামজা বলেন, কাউছার ভাই-ই সবার আগে পরিবারের হাল ধরেছিলেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কাউছার ভাই ইতালি যান। এক সময় তিনি সেখানকার গ্রীনকার্ড পেয়ে যান। তারপরও প্রতিবছরই বাড়িতে আসতেন। আমার ভাইয়ের (কাউছারের) করা সকল সম্পদই মা ও সকল ভাই বোনের নামে। কাউছার ভাইয়ের গত ১৫ বছর ধরে স্বপ্ন দেখছিলেন স্ত্রী সন্তানদের ইতালি নিয়ে যাবেন। আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্নটা অপূরণীয়ই রয়ে গেল। এই আফসোস ও শোকই তো আমার মাকে আমাদেরকে সমগ্র জীবন কুড়ে কুড়ে খাবে। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হোদা চৌধুরী বাদল বলেন, এই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই সুশিক্ষিত, নম্র ও ভদ্র।

কাউছারসহ তারা সকলেই মানুষ ও সমাজের উপকার করার চেষ্টা করেছেন। কাউছারসহ পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শাহবাজপুরবাসী। এই শোক সইবার নয়। তাদের মৃত্যুতে শাহবাজপুরবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ওদিকে পুত্রসহ পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু শোকের যন্ত্রণায় দিনরাত ছটফট করছে কাউছারের বৃদ্ধা মাতা হেলেনা বেগম। ধীরে ধীরে তিনিও অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন। স্বজনসহ সকলে মিলে হেলেনা বেগমকে শান্তনা দিতে হবে। উনাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রূয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা এটি। গত শুক্রবার বিকেলে নিজ গ্রাম সরাইলের শাহবাজপুরে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত ৫ জনকে এক সারিতে দাফন করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভাদুঘরে প্রবাসীর বাড়িতে তালা কেটে দুর্ধর্ষ চুরির অভিযোগ

fapjunk
© All rights reserved ©
Theme Developed BY XYZ IT SOLUTION

বেইলি রোড ট্রাজেডি বিলাপ থামছে না বৃদ্ধা হেলেনার জ্ঞান হারাচ্ছেন প্রতি মূহুর্তে!

Update Time : 10:04:41 pm, Sunday, 3 March 2024

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল থেকেঃ
ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে নিহত ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, মেয়ে ফাতেমা তুজ জহুরা, সৈয়দা আমেনা আক্তার ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহকে দাফন করা হয়েছে সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের খন্দকার পাড়া পারিবারিক কবরস্থানে। সন্তান, পুত্রবধূ, নাতি নাতনির আকস্মিক অকল্পনিয় এমন মৃত্যুকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বৃদ্ধা হেলেনা বেগম (৭৫)। দাফনের দুইদিন পরও থামছে না হেলেনার কান্না ও বিলাপ। তাদেরকে নিয়ে নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে প্রতি মূহুর্তে জ্ঞান হারাচ্ছেন হেলেনা। আহাজারি করছেন স্বজনরাও। গত তিনদিন ধরে কোন খাওয়া খাদ্য মুখে নিচ্ছেন না তিনি। শাররীক ভাবে তিনি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছেন। বিছানায় বসে বিলাপ করে একেক সময় মাথা নীচু করে পড়ে যাচ্ছেন।

দরজা ও বাহিরের দিকে তাকিয়ে বুক ছাপড়িয়ে নানা কথা বলছেন। পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, স্বজন ও গ্রামবাসীর কোন শান্তনাই কাজে আসছে না। শোকে পাথর হেলেনার দিন গুলো এখন এভাবেই কাটছে। আজ রোববার সরজমিনে দেখা যায়, গোটা গ্রাম জুড়েই চলছে শোকের মাতম। কারো মুখে হাঁসি নেই। অশ্রূসিক্ত নয়নে লোকজন কাউছারদের বাড়িতে আসছেন। আবার চোখ মুছে মুছে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে নতুন পাঁচটি কবর। প্রথম কবরটি সৈয়দ আব্দুল্লাহর। এরপর সৈয়দ কাউছার, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে ফাতেমা তুজ জহুরা ও সৈয়দা আমেনা। আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে কবর দেখছেন আর চোখের জল ফেলছেন। অনেকেই স্বেচ্ছায় কবর গুলোতে কাজ করছেন। সংরক্ষণের জন্য চারিদিকে বাঁশের তৈরী নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাড়ির ভেতরে একটি খাটে বসে অঝরে কাঁদছেন কাউছারের বৃদ্ধা মাতা হেলেনা বেগম। একটু পরপর চুপ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ছেন। জ্ঞান ফিরালে আবারও আহাজারি আর বিলাপ করে পড়ে যাচ্ছেন। এভাবেই প্রতিটি মূহুর্ত পার করছেন হেলেনা বেগম। গত তিন ধরে কোন কিছুই খাচ্ছেন না তিনি। আহাজারি আর বিলাপ করে বলছিলেন, “আমার ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি নাতনি সকলেই ছিল ছবির মতো। আমার কাউছার ছিল ফেরেশতার মত। ফোন করলেই বলতাম বাবা বাড়িতে আসবা না? উত্তরে বলতো আসব মা। ৪/৫ দিন আগে ফোন করে খুব খুশি। আমাকে বলে মা এদের সবার ভিসা হয়েছে। দোয়া করিও। আমরা সকলেই ইতালি চলে যাব। শুক্রবারে আপনাকে দেখতে আসব। এবার বেশী দিন বাড়িতে থাকতে পারব না মা। বাড়ির কাজ দ্রূত শেষ করে ঢাকায় চলে আসব। এখানে অনেক কাজ করতে হবে। শুক্রবারে দেখা হবে মা। আমি তো আমার বাবার জন্য অনেক বাজার করেছি। বিভিন্ন ধরণের পিঠার আয়োজন করেছি। পোলার চাল ও ফল রেখেছি।

কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই সব শেষ। আমার পৃথিবীতে নেমে এসেছে অন্ধকার। পুত্রসহ আমার সকল ধন মুহুর্তে নিমিষ। শুক্রবারে স্ত্রী সন্তান সহ আমার বাবা দেখি লাশ হয়ে আসল। পিঠা এখন কে খাইব। আমার ছবি গুলোরে আল্লাহ কেমনে নিয়া গেল? আমি এখন কি নিয়া বাঁচব? আমারে এখন কে মাটি দিব? আমার দুইটা নাতিন। হজ্জ্বে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম। আল্লাহ আমারে একটা নাতি দাও। আল্লাহ নাতি দিল। তার নাম রাখলাম আব্দুল্লাহ। আমার সেই আব্দুল্লারে কেন নিয়া গেল? ” বলতে বলতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সকলে মিলে পানি ছিটাসহ বিভিন্ন ভাবে আবার জ্ঞান ফিরিয়ে আনেন। বর্তমানে এভাবেই যাচ্ছে কাউছারের মা শোকেকাতর হেলেনার দিন গুলি। কাউছারের মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের শান্তনা দিতে ওই বাড়িতে ছুটে গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মঈন উদ্দিন মঈন।

প্রয়াত কাউছারের একাধিক স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, হেলেনা বেগমের স্বামী সৈয়দ আবুল কাশেম মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। উনাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সৈয়দ সোয়েব হাসান ও মেজ ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার ইতালি প্রবাসী। সোয়েব স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ইতালিতে থাকেন। আর কাউছার ইতালিতে প্রবাসী হলেও ঢাকার মধুবাগে ছিল তার নিজস্ব ফ্ল্যাট। ওই ফ্ল্যাটে থাকতো কাউছারের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪২), বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহুরা (১৯), ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা আমেনা আক্তার (১৩) ও একমাত্র ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দ আব্দুল্লাহ (০৮)। তাদের সকলেরই আগামী ২২ মার্চ ইতালি চলে যাওয়ার কথা ছিল। আর লন্ডনে সেটেলড হয়ে বসবাস করছেন একমাত্র মেয়ে সৈয়দা হাজেরা বেগম।

নিহত কাউছারের ছোট ভাই সৈয়দ আমির হামজা বলেন, কাউছার ভাই-ই সবার আগে পরিবারের হাল ধরেছিলেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কাউছার ভাই ইতালি যান। এক সময় তিনি সেখানকার গ্রীনকার্ড পেয়ে যান। তারপরও প্রতিবছরই বাড়িতে আসতেন। আমার ভাইয়ের (কাউছারের) করা সকল সম্পদই মা ও সকল ভাই বোনের নামে। কাউছার ভাইয়ের গত ১৫ বছর ধরে স্বপ্ন দেখছিলেন স্ত্রী সন্তানদের ইতালি নিয়ে যাবেন। আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্নটা অপূরণীয়ই রয়ে গেল। এই আফসোস ও শোকই তো আমার মাকে আমাদেরকে সমগ্র জীবন কুড়ে কুড়ে খাবে। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হোদা চৌধুরী বাদল বলেন, এই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই সুশিক্ষিত, নম্র ও ভদ্র।

কাউছারসহ তারা সকলেই মানুষ ও সমাজের উপকার করার চেষ্টা করেছেন। কাউছারসহ পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শাহবাজপুরবাসী। এই শোক সইবার নয়। তাদের মৃত্যুতে শাহবাজপুরবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ওদিকে পুত্রসহ পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু শোকের যন্ত্রণায় দিনরাত ছটফট করছে কাউছারের বৃদ্ধা মাতা হেলেনা বেগম। ধীরে ধীরে তিনিও অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন। স্বজনসহ সকলে মিলে হেলেনা বেগমকে শান্তনা দিতে হবে। উনাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রূয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা এটি। গত শুক্রবার বিকেলে নিজ গ্রাম সরাইলের শাহবাজপুরে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত ৫ জনকে এক সারিতে দাফন করা হয়েছে।