পিআরপি থেরাপির কার্যকারিতা

ডা. মুহিব্বুর রহমান রাফে
পিআরপি অর্থ হচ্ছে প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা। পিআরপি থেরাপিতে শরীরের নির্ধারিত অংশে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিশেষ প্রোটিন সরবরাহের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রয়োগে আপনার শরীর থেকেই রক্ত নিয়ে তা থেকে প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা) ও প্লাজমাকে (রক্তের বর্ণহীন সাদা অংশ) আলাদা করা হয়।
রোগীর দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে একটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ টিউবে রাখা হয়। টিউবগুলো সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে বসিয়ে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্লাটেলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। টিউবের ওপরের অংশে আলাদা হয়ে থাকা এ প্লাজমা সমৃদ্ধ রক্তের অংশ সিরিঞ্জ দিয়ে টিস্যুর ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়।
পিআরপি কীভাবে কাজ করে
প্লাটিলেট সমৃদ্ধ প্লাজমাতে অনেক পুষ্টিকর উপাদান থাকে। যেমন- পিডিজিএফ, টিজিএফ, ইডিজিএফ, আইজিএফ, এফজি এবং টিএসপি-ওয়ান ইত্যাদি। যা ১-৩ মাসের মধ্যে রোগীর নির্ধারিত স্থানে থাকা কোষগুলোকে স্টিমুলেট করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এতে থাকে প্রচুর প্রোটিন, যা প্রাকৃতিকভাবে আপনার চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ প্রোটিন সমৃদ্ধ প্লাজমা দিয়েও চুলের টাক পড়া প্রতিরোধ করা যায়। যখন ওষুধ দিয়ে ফলাফল হয় না, তখন একে সহযোগী হিসেবে দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
পিআরপি থেরাপিতে যেসব স্টেপ ফলো করা হয়
পিআরপি থেরাপি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দুটি বা তিনটি সেশনে পরিচালিত হয়। প্রতিটি সেশন ২-৬ সপ্তাহ ব্যবধানে করা হয়। পুরো ফলাফল পেতে রক্ষণাবেক্ষণ সেশন প্রতি ২-৬ মাস ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে।
পিআরপি প্রয়োগের সময় তিনটি পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয়
* রক্তটি বিশেষত একটি কেন্দ্রস্থল মধ্যে ঢোকানো প্রায় আঁকা হয়। একটি সেন্ট্রিফিউজ একটি যন্ত্র যা বিভিন্ন ঘনত্বের তরল পৃথক করার জন্য উচ্চ গতিতে স্পিন করে।
* ৭-১০ মিনিটের কেন্দ্রীয়করণের পর, টেস্ট টিউব বা নির্ধারিত কীটসে রাখা রক্তটি ৩ স্তরগুলোতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
* প্লাটিলেট-স্বল্প রক্তরস
প্লাটিলেট সমৃদ্ধ রক্তরস
* লোহিত রক্ত কণিকা
* ‘প্লেটলেট সমৃদ্ধ রক্তরস’ স্তরটি একটি সিরিঞ্জে নিয়ে চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত এলাকায় প্রবেশ করানো হয়। এটি একটি সহজ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং সম্পূর্ণ হতে শুধু ৬০ মিনিট সময় নেয়।
সুবিধা
১. সহনীয় পদ্ধতি, ২. সহজে করা যায়, ৩. ফলাফল খুবই ভালো, ৪. নিরাপদ ও নন অ্যালার্জিক।
অসুবিধা
১. বিশেষ মেশিন প্রয়োজন, ২. সময় ব্যয় হয়, ৩. দক্ষ হাত ও বিশেষ ট্রেনিং প্রয়োজন।
পিআরপি চিকিৎসা কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
* ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের
* মেটাবলিক ডিসঅর্ডার
* সিস্টেমিক রোগ বা শয্যাশায়ী অসুস্থতা
* কোনো কারণে রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কম থাকা
* থাইরয়েড রোগ
* তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ
* ক্রনিক যকৃতের রোগ যেমন হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস
* প্লাটিলেট সংক্রান্ত কোনো ব্যাধি বা সিন্ড্রোম।
পিআরপি দেয়ার সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি
পিআরপি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত প্রক্রিয়া তবে দক্ষ হাতে না দেয়া হলেই নিুোক্ত সমস্যা হতে পারে।
* পার্শ্ববর্তী রক্তবাহী ধমনি বা স্নায়ুতে আঘাত
* ইনজেকশন এলাকায় Calcification
* সংক্রমণ
* স্কেডেড টিস্যু
* অ্যানেসথেসিয়া অ্যালার্জি
পিআরপি থেরাপি চলমান রোগীদের আগে ও পরে করণীয়
পদ্ধতির আগে
* এক সপ্তাহ আগে থেকেই ধূমপান ও অ্যালকোহল পান ছেড়ে দেয়া উচিত/বিরত থাকা উচিত।
* এই পদ্ধতির ৩ দিন আগে সব কসমেটিকস জাতীয় পণ্য ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
* পদ্ধতির দিনে বা তার আগে একটি দিন চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
* এক সপ্তাহ আগে ভিটামিন, রক্ত পাতলা এবং কিছু অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারে।
পদ্ধতির পরে
* জয়েন্টে প্রয়োগ করা হলে প্রথম পাঁচ থেকে সাত দিন বিশ্রামে থাকা ও এরপর থেকে স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ শুরু করতে হবে। ইনজেকশন প্রয়োগ করার পর দুই থেকে তিন বেলা পাঁচ মিনিট খুব ধীরে ধীরে মাথার চামড়া ম্যাসাজ করতে হবে।
* এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধগুলোর মতো ওষুধগুলো প্রক্রিয়া করার পরে ৩-৭ দিনের জন্য এড়ানো উচিত।
* চুলের কারণে মাথায় প্রয়োগের পরে চুল এক দিন বা দুই দিন ধোয়া। সূর্যের বাইরে যাওয়ার আগে সুরক্ষা পরিধান করা।
লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা